নানা ইস্যুতে ফের টালমাটাল শেয়ারবাজার।গেল সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসসহ সর্বশেষ আট কার্যদিবস টানা দরপতন হয়েছে।গত সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত সিংহভাগ শেয়ার সার্কিট ব্রেকারের সর্বনিম্ন দরে কেনাবেচা হয়,ছিল ক্রেতাশূন্য।দরপতন থামাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বরাবরের মতো হস্তক্ষেপ করেছে বলে তথ্য মিলেছে।কিন্তু এ হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে বলে মনে করেন বাজার-সংশ্নিষ্টরা।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে,৭ জুলাইয়ের পর গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তালিকাভুক্ত ৪০৩ শেয়ার,মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে ৩১৭টির দর কমেছে।প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ২৪০ পয়েন্ট হারিয়ে ৬১২৬ পয়েন্টে নেমেছে।এর মধ্যে গেল সপ্তাহে কমেছে ১৯৮ পয়েন্ট।তবে দিনের শুরু আর শেষ অবস্থানভিত্তিক সূচকের উত্থান -পতনের সরল চিত্র দিয়ে চলতি দরপতনের ক্ষত বোঝা সম্ভব নয়।যেমন,গতকাল লেনদেন শুরুর ১৬ মিনিটে সূচক প্রায় ৬১ পয়েন্ট বেড়ে ৬১৯৯ পয়েন্ট ছাড়ানোর দুই ঘণ্টা পর ২৪ পয়েন্ট হারিয়ে ৬১১৪ পয়েন্টে নেমেছিল।অর্থাৎ দিনের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে সূচক হারায় ৮৫ পয়েন্টের বেশি।অথচ দিনের শেষে সূচকের পতন দাঁড়িয়েছে মাত্র ১২ পয়েন্ট।
ব্রোকারেজ হাউস কর্মকর্তারা জানান,গতকাল ডিএসইতে কেনাবেচা হয়েছে প্রায় ৬৭৭ কোটি টাকার শেয়ার,যার বড় অংশ লেনদেন হয়েছে প্রথম দুই ঘণ্টায়।অর্থাৎ এ সময়ে যাঁরা শেয়ার কিনেছেন,তাঁরাই লোকসানে।এটা এক দিনের লোকসান।কিন্তু ৭ জুলাইয়ের পর যাঁরাই শেয়ার কিনেছেন,তাঁরাই বড় লোকসানে পড়েছেন।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে,শেয়ারদরে নিচের সার্কিট ব্রেকার ২ শতাংশ বহাল থাকার পরও শুধু ক্লোজিং প্রাইসের হিসাবে ১০ থেকে ১৬ শতাংশ দর হারিয়েছে ২৮ কোম্পানির শেয়ার।যার শীর্ষে আছে মেঘনা ইন্স্যুরেন্স,জনতা ইন্স্যুরেন্স,কাট্টলী টেক্সটাইল,জেনেক্স ইনফোসিস,শাইনপুকুর সিরামিকস,বিজিআইসি,প্রগতি লাইফ,রবি, এনআরবিসি ব্যাংক ও বেক্সিমকো লিমিটেড।শুধু গত আট কার্যদিবসে নয়,এর প্রায় প্রতিটি শেয়ারের দর গত কয়েক মাস ধরে কমছে।
শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন,শ্রীলঙ্কার ঘটনার পর রিজার্ভ নিয়ে নানা আলোচনায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অর্থনীতি নিয়ে নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে।এ শঙ্কাকে বাড়িয়ে দিয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে লোডশেডিং করার ঘোষণা।দিনে এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টা লোডশেডিং করার কথা বলা হলেও,গণমাধ্যমে খবর এসেছে,কোথাও কোথাও ৫-৭ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে।শুধু বাসাবাড়িতে নয়,অফিস ও কারখানাতেও লোডশেডিং চলছে।বিনিয়োগকারীরা ভয় পাচ্ছেন,এতে উৎপাদন ব্যাহত হবে বা উৎপাদন খরচ বাড়বে এবং কোম্পানির মুনাফা কমবে।দরপতনের ভয়ে অনেকে শেয়ার বিক্রি করছেন।এর বাইরে লাগাতার কারসাজির পর জুয়াড়িরা শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে যাওয়ায় সেগুলোও ক্রমাগত দর হারাচ্ছে।বৈশ্বিক কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে চলে যাচ্ছেন।
এসব নেতিবাচক বিষয় সার্বিকভাবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দরপতনের ভীতিতে স্থায়ী করে দিচ্ছে।আবার নিকট ভবিষ্যৎ নিয়ে বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু দেখছেন না।এ কারণে বৃহস্পতিবার লেনদেনের শুরুতে সূচক ৬০ পয়েন্ট বৃদ্ধির পর অনেকে শেয়ার বিক্রি করে বের হওয়ার চেষ্টা করেছেন।গতকাল ডিএসইতে ১১৫ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ২১৯টি দর হারিয়েছে,অপরিবর্তিত ৪৭টির দর।