ইরানে মেট্রো স্টেশনে আহত কিশোরী আরমিতা গারাভান্দ (১৬) মারা গেছেন। হিজাব না পরার কারণে দেশটির নীতি পুলিশের হামলার শিকার হয়ে তিনি গুরুতর আহত হয়ে কোমায় চলে যান। এর ২৮ দিন পর গতকাল শনিবার (২৮ অক্টোবর) তার মৃত্যু হয়। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ’র বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম বিষয়টি নিশ্চিত করে।
চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে চিকিৎসকেরা আরমিতার ‘ব্রেন ডেথ’ হয়েছে বলে জানায়। গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে দীর্ঘ সময় কোমায় থাকার পর কয়েক মিনিট আগে তিনি (আরমিতা) মারা যান।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, তেহরানের একটি মেট্রো স্টেশনে রবিবার (১ অক্টোবর) হিজাব না পরায় নীতি পুলিশের হামলার শিকার হন ১৬ বছর বয়সী কিশোরী আরমিতা গারাভান্দ। এর আগে ২০২২ সালে হিজাব পরার নিয়ম অমান্য করার অপরাধে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনিকে (২২) আটক করেছিল দেশটির পুলিশ। সে বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশি হেফাজতে কোমায় থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মাহসা আমিনির মৃত্যুর এক বছর পূর্তিতেই আরমিতা গারাভান্দের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। সে সময় আরমিতার ওপর হামলার জন্য ইরানের নীতি পুলিশকে দায়ী করা হয়।
মানবাধিকার কর্মীরা জানিয়েছে, দেশটির হিজাব আইন অমান্যকারীদের জন্য কঠোরতর শাস্তির বিধান দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই নীতি পুলিশের হামলার শিকার হন আরমিতা। এই আইনে হিজাব না পরলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডও হতে পারে।
অভিযোগ উঠেছে, হিজাব না পরায় তেহরানের শোহাদা মেট্রো স্টেশনে আরমিতাকে আটক করে ইরানের নীতি পুলিশ। তার মাথায় আঘাত করা হয় ও গুরুতর আহত হন আরমিতা। পরবর্তী সময়ে তেহরানের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় চলে যান তিনি।
শুরু থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইরান কর্তৃপক্ষ। তারা দাবি করেছে, নিম্ন রক্তচাপের কারণে তেহরানের মেট্রো স্টেশনটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলেন আরমিতা। এ ঘটনার সঙ্গে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলেও দাবি করা হয়।
আরমিতার পরিবার এবং বন্ধুরাও ইরান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একই সুরেই কথা বলেছে। তবে তাদের এমনটি বলতে বাধ্য করা হয়েছিল কি না, তা জানা সম্ভব হয়নি।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এর আগে অনেকবারই দাবি করেছে, নিহত বিক্ষোভকারীদের পরিবারকে সরকারের সমর্থনে বিবৃতি দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করত ইরানি কর্তৃপক্ষ।
আরমিতা গারাভান্দ ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় কুর্দি অধ্যুষিত শহর কেরমানশাহের অধিবাসী। তবে তিনি তেহরানেই থাকতেন। ২০২২ সালে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরান জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মুখে পড়ে দেশটি।