ডলার-সংকটের কারণে চাহিদামতো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছেন না অনেক ব্যবসায়ী। এলসি নিষ্পত্তি করতে গিয়েও নানা সমস্যায় পড়ছেন তারা। এর প্রভাবে আমদানি কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ৬৫০ কোটি ডলারের পণ্যের। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২৫ দশমিক ৪০ শতাংশ কম। একই সময়ে এলসি খোলা কমেছে ১৮ শতাংশের বেশি।
ডলার-সংকটের এ সময়ে এলসি খোলায় বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এলসি খোলায় শতভাগ পর্যন্ত মার্জিন, শুল্ক বাড়ানো, পণ্য ধরে ধরে তদারকিসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা চলমান আছে। ডলার-সংকট কাটাতে নানা উদ্যোগ নিলেও তেমন কাজ হচ্ছে না। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হুহু করে কমে গত বৃহস্পতিবার ২০ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। থেমে থেমে ডলারের দর বাড়ানোর পরও আরও বাড়বে এমন প্রত্যাশায় বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আবার রপ্তানি আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ সময়মতো দেশে আসছে না। গত অর্থবছর ৫৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হলেও দেশে এসেছে ৪৬ বিলিয়ন ডলার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের ব্যবসা-বাণিজ্য। এতে একদিকে তাদের উৎপাদন কমছে, অন্যদিকে কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ডলার-সংকট কাটাতে অর্থ পাচার রোধে কঠোর হওয়া এবং ডলারের দর বাজারভিত্তিক করা, সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া এবং খেলাপি ঋণ কমানোর ওপর জোর দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে মোট ১ হাজার ৫৮৯ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। একই সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ৬৫০ কোটি ডলার। উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়ছে কিনা তা বোঝার সবচেয়ে বড় উপায় মূলধনি যন্ত্রপাতি এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানি। এই দুটি পণ্যের আমদানিই বেশি কমছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রথম প্রান্তিকে মূলধনি যন্ত্রপাতির এলসি নিষ্পত্তি কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ৩৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। পর্যায়ক্রমে পেট্রোলিয়ামে ১৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ, মধ্যবর্তী পণ্য ১৬ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং ভোগ্যপণ্যের এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ১৫ দশমিক ৯১ শতাংশ। অন্যান্য খাতে কমেছে ১৬ দশমিক ২২ শতাংশ।