গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলা থামছেই না। পশ্চিমা বিশ্ব বাদে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিশ্ব বারবার যুদ্ধবিরতির দাবি জানালেও তা প্রত্যাখ্যান করেছে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার। গতকাল রবিবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়েছে। এরই মধ্যে নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এটা হবে চরম ভয়াবহ।
এদিকে ইসরায়েলের পক্ষে পশ্চিমা বিশ্বের এককাট্টা অবস্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন ব্রিটেনের বিরোধী লেবার পার্টির সাবেক প্রধান জেরেমি করবিন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজায় গুদামে হামলা
গাজার হাজার হাজার বাসিন্দা গুদাম ও বিতরণকেন্দ্রগুলো ভেঙে ঢুকে পড়েছে এবং আটা ও অন্যান্য মৌলিক পণ্য নিয়ে যাচ্ছে। গাজার দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তবে ঠিক কখন ও কোন গুদামে এই হামলা হয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানায়।
ইউএনআরডব্লিউএ বলছে, ‘গাজায় তিন সপ্তাহের যুদ্ধ এবং কঠোর অবরোধের পর বেসামরিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে শুরু করেছে, যা বেশ উদ্বেগজনক। মানুষ ভীত, হতাশাগ্রস্ত এবং মরিয়া। ফোন এবং ইন্টারনেট লাইনে কাটা পড়ায় আরো উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।’ জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস বৃহস্পতিবার বলেছেন যে গত সপ্তাহে গাজায় ত্রাণ সবচেয়ে কম পৌঁছেছে, সে সময় ইসরায়েল তীব্র বোমাবর্ষণ করছিল। এদিকে মিশর এবং যুক্তরাষ্ট্র গতকাল রবিবার গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়াবে বলে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে। একটি হাসপাতালে যে কোনো সময় বোমা হামলা চালাবে ইসরায়েল। এজন্য হাসপাতালটি খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলের পালটা হামলায় গাজায় ৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
‘দ্বিতীয় পর্যায় হবে কঠিন’: ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের পরবর্তী পর্যায়টি দীর্ঘমেয়াদি এবং কঠিন হবে বলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এমন হুঁশিয়ারির মধ্যে গাজায় ইসরায়েলি হামলা গতকাল ২৪তম দিনে প্রবেশ করেছে।
ইসরায়েল জিম্মি মুক্তির প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলছে কাতার: গাজায় গতকাল থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের স্থল অভিযান হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলেছে বলে মনে করছে কাতার। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেছেন, এই ক্রমবর্ধমান অভিযান পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে।
‘ইসরায়েল পালটা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে পারে’: ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন যে, ইসরায়েলের পদক্ষেপ সব সীমা অতিক্রম করেছে, যা সবাইকে তাদের বিরুদ্ধে পালটা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে পারে। গতকাল এক্স বা সাবেক টুইটারে এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটন আমাদের কিছু না করতে বলে, নিজেরাই ইসরায়েলকে ব্যাপক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র অ্যাক্সিস অব রেসিস্ট্যান্সের উদ্দেশ্যে যে বার্তা দিয়েছিল যুদ্ধক্ষেত্রেই তারা এর জবাব পেয়েছে।’ ‘অ্যাক্সিস অব রেসিস্ট্যান্স’ বলতে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ইরান-সমর্থিত বাহিনীর একটি নেটওয়ার্ক বোঝানো হয়, যার একটি অংশ হামাস।
নেতানিয়াহু-সেনাবাহিনী দ্বন্দ্ব: হামাসের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেটকে দায়ী করে প্রকাশ্য মন্তব্য করেছেন নেতানিয়াহু। হামলার তিন সপ্তাহের মাথায় গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া পোস্টে গোয়েন্দাপ্রধানদের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তারা তাকে কখনই সতর্ক করেনি যে, হামাস ৭ অক্টোবরে বড় আক্রমণের পরিকল্পনা করছে।’ যদিও পরে নেতানিয়াহু এই টুইট মুছে ফেলেন।
গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে নেতানিয়াহুর এই মন্তব্যের পর বিরোধীদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যে পালটা তোপ দেগেছেন বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার ল্যাপিদ। এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি সেনা ও কমান্ডাররা যখন হামাস ও হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করছে, তিনি (নেতানিয়াহু) তখন সমর্থনের পরিবর্তে তাদের ওপর দোষারোপ করার চেষ্টা করছেন।’
স্রোতের বিপরীতে করবিন: ইসরায়েলকে পশ্চিমা বিশ্বের একচেটিয়া সমর্থনের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ জেরেমি করবিন। তেল আবিবকে সমর্থন দেওয়ায় ব্রিটিশ সরকারকে তুলোধুনা করেন ঐতিহ্যবাহী লেবার পার্টির সাবেক প্রধান জেরেমি করবিন। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে গাজায় নিরপরাধ মানুষের ওপর নির্বিচারে ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে অংশ নেন বিক্ষোভ-সমাবেশে।