আজ বুধবার থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহে নির্বাচনের তপসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। ভোট হতে পারে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। এদিকে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, পরিবেশ যাই থাকুক নির্ধারিত সময় ও পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর পিটার ডি হাস বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলো শর্তহীন সংলাপে বসে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ খুঁজে নেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সংবিধান নির্ধারিত ৯০ দিনের সময় শুরুর আগের দিন মঙ্গলবার সকালে পিটার ডি হাস সিইসির সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় অন্য নির্বাচন কমিশনাররাও উপস্থিত ছিলেন। পরে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী ৪ নভেম্বর নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচন প্রস্তুতি অবগত করার জন্য বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত ২৬ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে গণমাধ্যম সম্পাদকরাও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার জন্য কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। এছাড়া নির্বাচন কমিশন আজ বুধবার বিকাল ৩টায় প্রধান বিচারপতি ও আগামী ৫ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাঙ্গীর আলম ইত্তেফাককে বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি রাজনৈতিক দলগুলোকে অবহিত করতেই বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। নিবন্ধিত ৪৪টি দলের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক অথবা উপযুক্ত প্রতিনিধির বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
নির্বাচন না করার কোনো বিকল্প নেই :মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের সঙ্গে প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা বৈঠক শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, উনি আগেও কয়েক বার এসেছিলেন। উনি আমাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমরা জানিয়েছি। উনি পরিস্থিতি বুঝতে চেয়েছেন। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, আমাদের অপশন (বিকল্প) নেই, পক্ষপাতিত্বও নেই। নির্বাচন কমিশনের জন্য সংবিধানের যে বাধ্যবাধকতা, যে প্রেসক্রিপশন সে অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন অপশন থাকে; তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে, নাও করতে পারে। ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে, আবার পাঁচটি আসনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলো এককভাবে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে, আবার জোটবদ্ধভাবেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। নির্বাচন কমিশনের জন্য ঐ ধরনের কোনো অপশন নেই। আমরা দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য। অনেক সময় অনুকূল প্রতিকূল—এসব কিছু কথা ওঠে—এগুলো খুব অর্থবহ নয়। নির্বাচনের জন্য পরিস্থিতি অনুকূল হোক, প্রতিকূল হোক—নির্বাচন করতেই হবে। আমাদের সবসময় প্রত্যাশা, পরিস্থিতি যত বেশি অনুকূল হবে, নির্বাচন কমিশনের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সহজসাধ্য হবে। আমরা সবসময় প্রত্যাশা করে আসছি এবং এখনো প্রত্যাশা করব, সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। পরিস্থিতি প্রতিকূল হলে নির্বাচন হবে না—এ ধরনের কোনো মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং (ভুল ধারণা) জনগণের মধ্যে যেন না থাকে সে জন্য স্পষ্ট করে বলতে চাই, নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
পিটার ডি হাস সংলাপের তাগিদ সম্পর্কে তিনি বলেন, উনি বিশ্বাস করেন আমিও সবসময়ই বলে আসছি, রাস্তায় শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করি না। উনিও বলেছেন, দেওয়ার শুড বি ডায়লগ আন্ডার দ্য পলিটিক্যাল পার্টিস রাউন্ড দ্য টেবিল উইথ কাপস অব টি। উনি স্পষ্ট করে বলে গেছেন, সবাইকে আহ্বান করবেন সংলাপের মাধ্যমে বিরাজমান মতভেদ নিরসনের জন্য।
সংলাপের তাগিদ পিটার ডি হাসের : বৈঠক শেষে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নির্বাচনে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা চাই। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা রাজনৈতিক দল, সরকার, ভোটার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম এবং অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে অবমূল্যায়ন করে এমন যে কোনো প্রতিক্রিয়া; ভোটাধিকার প্রয়োগ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, ইন্টারনেট ব্যবহারে বাধা প্রদান, সহিংসতা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।’ পিটার হাস বলেন, ‘যে কোনো পক্ষের রাজনৈতিক সহিংসতা গণতান্ত্রিক নির্বাচনে কোনো স্থান নেই। আমি আশা করি, সব পক্ষ শর্তহীনভাবে সংলাপে বসে সামনের দিকে এগোবে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ খুঁজে নেবে।’
৪ নভেম্বর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক: নির্বাচনের তপসিল ঘোষণার আগে নিবন্ধিত সবগুলো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসবে নির্বাচন কমিশন। আগামী ৪ নভেম্বর ৪৪টি দলের সঙ্গে কমিশনের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। দুই ভাগে এই বৈঠকের আয়োজন করেছে ইসি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতির ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোকে জানাতে এ বৈঠক ইসির। যদিও এর আগে গত বছর ১৭ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সে সময় পর্যন্ত নিবন্ধিত ৩৯টি দলকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ঐ সংলাপে বিএনপিসহ ৯টি দল সংলাপে অংশ নেয়নি। ইসির আমন্ত্রণে সাড়া দেয় ৩০টি দল। এর মধ্যে দুটি দল আসতে না পারার কারণ দেখিয়ে পরবর্তী সময় সংলাপের জন্য সময় চায় এবং ঐ বছরের ৫ সেপ্টেম্বর দল দুটির সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর গত ২৬ মার্চ বিএনপিকে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। বিএনপি তাতে সাড়া দেয়নি। এর আগে ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপে বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সিপিবি ও বাসদসহ কয়েকটি দল অংশ নেয়নি।
উল্লেখ্য, সাংবিধানিকভাবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। সেক্ষেত্রে ১ নভেম্বর শুরু হয়েছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা। ২ নভেম্বর আসনভিত্তিক চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে ইসি। আগামী ৫ নভেম্বর দুটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন সম্পন্নের পরপরই তপসিল ঘোষণা করা হবে।