বাংলাদেশে রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে নির্বাচন হবে। ওই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করছে বাংলাদেশ সরকার।
বুধবার (০১ নভেম্বর) হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত ২৮ অক্টোবর পুলিশ অহেতুক শক্তি প্রয়োগ করেছে উল্লেখ করে বিবৃতির শুরুতে বলা হয়, সব পক্ষ সহিংসতায় অংশ নিলেও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপরই ধরপাকড় চালানো হচ্ছে। ২৮ অক্টোবর এবং তার পরবর্তী সহিংসতায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ (প্রকৃতপক্ষে এক পুলিশ সদস্য নিহতের খবর গণমাধ্যমে এসেছে) কমপক্ষে ১১ জন নিহত এবং কয়েক’শ মানুষ আহত হয়েছেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক উপ-পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, অনেক বাংলাদেশির শঙ্কা-নির্বাচনে বিরোধীদের অংশগ্রহণ ও ভোট দেওয়ার অধিকার বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে সরকার ধরপাকড় চালানোর কারণে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিরোধীদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে, তাদের হয়রানি করে এবং কারাবন্দী করে নির্বাচন আয়োজন করা হলে, তা যে সুষ্ঠু হবে না, সে ব্যাপারে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সহযোগীদের জোর দিতে হবে বলে বিবৃতিতে মীনাক্ষী গাঙ্গুলি উল্লেখ করেন।
আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিরোধী দলের হাজারো সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে এবং দলীয় কার্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে। গত বছর সরকার ক্রমাগত নির্বিচারে গণগ্রেপ্তার চালিয়ে গেছে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে এ ধরনের ঘটনাকে বিরোধীদের দমন করার একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা বলে মনে করছে সংস্থাটি।
২৮ অক্টোবরে সহিংসতায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি দু’পক্ষই ছিল দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, দু’দলই সহিংসতায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। সহিংসতার জন্য সরকার বিএনপিকে দায়ী করেছে। অপরদিকে বিএনপির অভিযোগ, সহিংসতা উসকে দিতে সরকার দলের সমর্থকরা অনুপ্রবেশ করে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নস্যাৎ করা হয়েছে।
রাজনৈতিক দলের নেতাদের উচিত শান্তিপূর্ণ প্রচারণায় অংশ নিতে সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানানো বলে মনে করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের বিবৃতি উল্লেখ করে বলা হয়, এ ধরনের সহিংসতা যে অগ্রহণযোগ্য, তা সব রাজনৈতিক কর্মীকে স্পষ্ট করে বলে দিতে হবে। তাদের বলতে হবে, সহিংসতায় উসকানি দেয় এমন কোনো কর্মকাণ্ড বা বিবৃতি থেকে তাদের বিরত থাকতে হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, পুলিশ সমাবেশে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। সরকারের উচিত সহিংস বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন জাতিসংঘের ‘বেসিক প্রিন্সিপালস অন দ্য ইউজ অব ফোর্স অ্যান্ড ফায়ারআর্মস বাই ল এনফোর্সমেন্ট অফিশিয়ালস’ নীতিমালা মেনে চলে এবং সেই অনুযায়ী নির্দেশ দেওয়া।
২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের আগে বিরোধী দলের কমপক্ষে দেড় হাজার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বিএনপি নেতারা বলেছেন- সরকার বিরোধী দলের সদস্যদের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের আগে ঢাকাজুড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে সমাবেশে অংশ নিতে আসা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত জুলাইয়ে একই ধরনের বিক্ষোভ হওয়ার পর থেকে প্রায় পাঁচ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আটক ব্যক্তিদের ওপর নির্যাতন ও অন্যান্য হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড চালানোর যে অভিযোগ আছে, সেগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ ও স্বাধীন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন হিউম্যান রাইট ওয়াচ।
সংস্থাটি জানায়, দোষী ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশে এক দশক আগে পাস হওয়া নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত শুধু একটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।