নওগাঁর আত্রাই ও রাণীনগরে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে জেলা পরিষদ সদস্যসহ চারজন আহতের খবর এসেছে।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) রাত সাড়ে আটটার দিকে রাণীনগর উপজেলার রেলগেইট সংলগ্ন বিষ্ণুপুর ছোট ব্রিজে ককটেল বিস্ফোরণে মোটরসাইকেল আরোহী জয়নাল সরদার ও চালক জুয়েল হোসেন নামে দুইজন আহত হয়েছেন। একই দিন সন্ধ্যায় জেলার আত্রাইয়ে আওয়ামী লীগের শান্তি মিছিলে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি জেলা পরিষদ সদস্য চৌধুরী গোলাম মোস্তফা বাদল ও ভোঁপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মহসিন মৃধা বিপ্লব আহত হন। পৃথক ঘটনায় অজ্ঞাতদের নামে থানায় পৃথক থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রাণীনগর উপজেলার মধ্যরাজাপুর গ্রামের আক্কাস আলীর ছেলে আহত জয়নাল সরদার জানান, ওই দিন তারা দলীয় কাজ শেষে তিনটি মোটরসাইকেল করে বড়গাছা থেকে রাণীনগরের দিকে ফিরছিলেন। ফেরার পথে উপজেলার রেলগেইট সংলগ্ন বিষ্ণুপুর নামক স্থানের ছোট ব্রিজে এলেই তাদের মোটরসাইকেল লক্ষ্য করে কে বা কারা (পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি) তিনটি ককটেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বিকট শব্দে ককটেল বিস্ফোরিত হয় এবং রাস্তার পাশে থাকা খড়ে আগুন ধরে যায়। ফলে এক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ সময় প্রথম মোটরসাইকেলে থাকা জয়নাল ও জুয়েল পাকা রাস্তার উপর ছিটকে পড়ে গিয়ে গুরুত্বর আহত হয়। পিছনে থাকা অন্য মোটরসাইকেল আরোহীদের তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। পরে আহত জয়নাল ও জুয়েলসহ অন্যদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে তারা প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করে। পরে রাতেই জয়নাল সরদার বাদী হয়ে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের নামে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
অপরদিকে এদিন আত্রাই উপজেলা আওয়ামী লীগ সাহেবগঞ্জ দলীয় কার্যালয় হতে শান্তি মিছিল বের করে আহসানগঞ্জ রেল স্টেশন চত্বর হয়ে দলীয় কার্যালয়ে ফিরছিলেন। মিছিলটি স্টেশনের পশ্চিম পার্শ্বে আসা মাত্র মিছিলকে লক্ষ করে পর পর তিনটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। ককটেলের আঘাতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি জেলা পরিষদ সদস্য চৌধুরী গোলাম মোস্তফা বাদল ও ভোঁপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মহসিন মৃধা বিপ্লব আহত হন। ঘটনার পর উপজেলা আ’লীগ সাধারন সম্পাদক আক্কাছ আলী প্রামানিক বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামাসহ আত্রাই থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পর উপজেলার ভবানীপুর গ্রাম হতে এসএম মোয়াজ্জেম হোসেন চাঁন্দুকে আটক করে থানা পুলিশ।
রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাহিদ সরদার বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে সব সময় দলবল নির্বিশেষে উপজেলায় একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার চেস্টা করে আসছি। গত তিনদিনের বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী দলের ডাকা অবরোধের মধ্যেও উপজেলার সব জায়গায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছিল। অবরোধের সময় উপজেলার সেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করতে কোনো প্রকারের নাশকতা সৃষ্টির সুযোগ না পাওয়ায় শেষ সময়ে এসে সেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করতেই বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা এমন নাশকতার পরিকল্পনা করে থাকতে পারে। আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এমন নাক্কারজনক ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
আত্রাই উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আক্কাছ আলী প্রামানিক বলেন, ‘শান্তি মিছিল নিয়ে আহসানগঞ্জ রেল স্টেশনের পশ্চিম পার্শ্বে গেলে মিছিলকে লক্ষ্য করে পর পর তিনটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে আমাদের দুইজন নেতা আহত হন।’
আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারেকুর রহমান সরকার বলেন, ‘ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এসএম মোয়াজ্জেম হোসেন চাঁন্দু নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। অন্যান্য অভিযুক্তদের আটকের জন্য অভিযান চলমান আছে।’
রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে দুঘর্টনা কবলিত মোটরসাইকেল ও অন্যান্য উপকরণ উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আটক করার জোর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।’