পাইকগাছা, খুলনা: –
দুর্যোগব্যাবস্থাপনার টাকায় এক রাজাকার ও তার পরিবারের কবরস্থান উন্নয়নের অভিযোগ উঠেছে খুলনা ৬ আসনের সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবুর বিরুদ্ধে।
অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে সম্প্রতি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার হরিঢালী ইউনয়িনের প্রতাপকাটী গ্রামে দুর্যোগ-ব্যাবস্থাপনা এবং এর অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বরাদ্ধকৃত ফান্ড থেকে এক রাজাকারের পারিবারিক কবরস্থান সংস্কার করে দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবু।
সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গিয়েছে উক্ত কবরস্থানটি মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত মোসলেম আলী গাজীর। স্থানীয়দের প্রশ্ন, দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা খাতে বরাদ্ধ করা টাকা দিয়ে কীভাবে কোন কবরস্থান সংস্কার করা যায়? তারা আরও বলেছেন এই ফান্ড কে নিয়ন্ত্রণ করে আর কে এবং কোন আইনে বরাদ্ধ দিলো, একই সাথে তারা ক্ষোপ-প্রকাশ করে আরও বলেছে, এই কবরস্থানটি কোন দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে? যে দুর্যোগ-ব্যাবস্থাপনার টাকায় একজন ঘৃনিত ব্যাক্তির কবরস্থানের অবকাঠামো নির্মাণ করতে হলো? তাও আবার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল ক্ষমতায় থাকতে এমন কাজ করলো সাংসদ?
কপলিমুনি ইউনিয়ন-র আওয়ামী-লীগ সভাপতি জনাব বজলুর রহমান বলেছেন “আমরা মনে করেছিলাম মোসলেম গাজীর পরিবার তাদের করস্থান উন্নয়ন করছে কিন্তু কাজ শেষে দেখলাম আমাদের এমপি সাহেব সরকারের টাকায় এক রাজাকেরের কবর বাধাই করে দিয়েছে যা আমাদের জন্য খুবই লজ্জার, এ জন্য আমি ও আমরা (স্থানীয়রা) হতাশ ও ক্ষুদ্ধ। আমরা কোন ভাবেই এই কাজ মেনে নিতে পারছি না। আমরা মাননীয় নেত্রীর কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে স্লোগান দিচ্ছি আর এদিকে কিছু লোক আমাদের মধ্যে থেকেই রাজাকারদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে, আমরাতো এটা মেনে নিতে পারছি না।”
তারা এ কাজের প্রতিবাদ করেছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা তাদের অনুপাতে খুবই ক্ষুদ্র, প্রতিবাদ কোথায় করব? আমাদের কথা বা প্রতিবাদে তারাতো কর্ণপাত করে না তবে আমরা এমন কাজের নিন্দা জানাই।
আওয়ামী লীগ এর স্থানীয় এই নেতা আরও বলনে, মোসলেম গাজী মুক্তযিুদ্ধরে সময় পিচ কমিটির সদস্য ছিলো। পাকিস্তান সেনাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করত গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের উপর বহু অত্যাচার করেছে তাই এক রাতে মুক্তিযোদ্ধারা মোসলেম গাজীসহ আরও কয়েকজনকে হাতের নাগালে পেয়ে তুলে নিয়ে লতা ইউনিয়নের শংকরদানা খেয়াঘাট এলাকায় গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে ফেলে রেখে যায়। ২/৩ দিন পরে পরিবারের সদস্যরা সেখান থেকে গলিত লাশ নিয়ে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করে।
স্থানীয়রা জানান, গত শনিবার কবরস্থান সংস্কারের কাজ শেষ হলে সেখানে নামফলক লাগানো হয়, এর পরেই এলাকাবাসী বুঝতে পারেন সরকারি টাকায় ওই কবরস্থানের সংস্কার কাজ করা হয়ছে। সে টাকা সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বরাদ্দ করেছেন তা নামফলকে স্পষ্ট করে উল্লেখ রয়েছে। গত শুক্রবার দুপুরে কবরস্থান উদ্বোধন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাইকগাছা এলাকার মুক্তি বাহিনির কমান্ডার ছিলেন বিনয় সরকার। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা রাজাকার বা পিচ কমিটির সদস্য ছিলেন তাঁদের মুক্তিযোদ্ধারা খুঁজে খুঁজে মেরেছেন। তেমনই একজন ছিলো মোসলেম গাজী। সেই রাজাকারের কবরস্থান যদি সরকারি অর্থে সংস্কার করা হয় তাহলে সেটি খুবই দুঃখজনক। এটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চরম অবমাননাকর।
সংসদ সদস্য জনাব আক্তারুজ্জামান বাবুকে তার Whatsapp এ এই বিষয়ে তার মতামত জানতে চেয়ে মেসেজ দিলেও তার মতামত জানা যায়নি।