শ্রীলঙ্কার মত ঋণখেলাপের পরিস্থিতি এড়াতে প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রি করবে অর্থনৈতিক সংকটে পড়া পাকিস্তান। এ উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা একটি অধ্যাদেশ অনুমোদনও করেছে।
মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়া ‘ইন্টার গভর্নমেন্টাল কমার্শিয়াল ট্র্যানজেকশনস অর্ডিন্যান্স-২০২২’ নামের অধ্যাদেশটির বলে কেন্দ্রীয় সরকার প্রাদেশিক সরকারগুলোকে জমি অধিগ্রহণের নির্দেশনা দিতে পারবে। আর এমন নির্দেশ মানতে বাধ্য থাকবে প্রাদেশিক সরকার।
পাকিস্তানের এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রির জন্য অনুমোদিত অধ্যাদেশটিতে ছয়টি বিদ্যমান আইনকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বিক্রির ক্ষেত্রে যে দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণ করার নিয়ম রয়েছে, তা অনুসরণ না করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এতে।
বলা হচ্ছে এই অধ্যাদেশটি মূলত করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় তেল ও গ্যাস কম্পানি, বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্রের শেয়ার বিক্রির জন্য। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে বিক্রি করে ২০০ থেকে ২৫০ কোটি ডলার সংগ্রহ করতে চাইছে শাহবাজ সরকার। পাকিস্তান আগেও আমিরাতের কাছ থেকে ঋণ চেয়েছিল। কিন্তু তা দেয়নি আমিরাত কর্তৃপক্ষ। তখন তেলসমৃদ্ধ দেশটির কর্তৃপক্ষ বলেছিল, পাকিস্তান আগের ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় তাদের নতুন করে ঋণ দেওয়া হবে না। তবে ঋণের বদলে আমিরাত পাকিস্তানে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়।
ইমরানের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
এদিকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রিতে অধ্যাদেশের অনুমোদনের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহেরিক-ই-ইনসাফ দলের প্রধান ইমরান খান। এক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রে আমদানি করে আনা একটি সরকার যার নেতৃত্বে আছেন একজন অপরাধী, যার সঙ্গে জারদারি পরিবারের দুর্নীতির সম্পর্ক আছে, তাকে কীভাবে জাতীয় সম্পদ বিক্রির ক্ষেত্রে বিশ্বাস করা যায়। তা-ও সমস্ত পদ্ধতিগত ও আইনি প্রক্রিয়া এড়িয়ে গিয়ে। ’
পাকিস্তান সরকারের হাতে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে খুব বেশি সময় নেই। দেশটির অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল জানান, সরকারকে তহবিল সংগ্রহের জন্য কয়েকদিনের মধ্যেই বিদেশি সরকারগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে হবে।
চরম অর্থনৈতিক সংকটে থাকা পাকিস্তানের জন্য এখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বেশ বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। কারণ আইএমএফের কাছে নতুন করে ঋণ চাওয়ার পর সংস্থাটি থেকে পাকিস্তানকে বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। এই শর্তের মধ্যে ইসলামাবাদকে মিত্র দেশগুলো থেকে ৪০০ কোটি ডলার সংগ্রহ করার ব্যাপার রয়েছে, যা পাকিস্তানের জন্য এই মুহূর্তে এক কথায় অসম্ভব। কারণ মিত্র হিসেবে পরিচিত কোনো দেশই এখন পাকিস্তানকে ঋণ দিতে চাইছে না। আর এ জন্যই শাহবাজ শরিফ সরকার রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বিক্রি করে তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করছেন।