আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই সংসদ সদস্যের দলীয় মনোনয়ন কেনার ছবি নিয়ে সমোলোচনার ঝড় উঠেছে। যশোরের দুই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ, উপজেলার শীর্ষ নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নাশকতা মামলার আসামি বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের নিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন তারা। এ নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযুক্ত সংসদ সদস্যরা হলেন, যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায় এবং যশোর-৬ (মণিরামপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য। তারা দুজনেই নিজ নিজ আসনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, যশোর-৪ আসন থেকে টানা তিনবার আওয়ামী লীগের এমপি হওয়া রণজিৎ কুমার এবারও নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন। কিন্তু দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে এড়িয়ে চলছেন। গত ১৯ নভেম্বর দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনেন রণজিৎ কুমার। সেদিনই ঢাকার ন্যাম ভবনে একটি গ্রুপ ছবিতে রণজিৎ কুমার রায়ের পাশে বাঘারপাড়ার বর্তমান পৌর মেয়র কামরুজ্জামান বাচ্চু, পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামকে দেখা যায়।
এর মধ্যে শহিদুল ইসলাম ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল রাতে সদর উপজেলার চান্দুটিয়া গ্রামে নাশকতা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। ছবিতে এমপির সঙ্গে বাঘারপাড়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সদস্য আরিফ খান তুর্কিকেও দেখা গেছে। তুর্কির বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট ও ১৪ জুনের দুটি নাশকতার মামলা আছে।
বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী বলেন, ‘আমাদের এমপি রণজিৎ বাবু তো আওয়ামী লীগ করেন না। তিনি বিএনপি ও জামায়াত নিয়ে চলছেন। চাকরি দিয়েছেন বিএনপি ও জামায়াতের লোকজনদের। তিনি আমজাদ রাজাকারের পরিবারকে সমর্থন দিয়েছেন। বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকেও জানানো হয়েছে। এবারের সংসদ নির্বাচনে আমরা তার পক্ষে নেই। তবে দল যদি তাকে মনোনয়ন দেয়, সেক্ষেত্রে কাজ করব; কিন্তু এলাকার জনগণ এমপি রণজিতকে চাচ্ছে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য (এমপি) রণজিৎ কুমার রায় বলেন, ‘অনেকেই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। আপনারা যা পারেন—লিখেন, সমস্যা নাই।’
এদিকে, যশোর-৬ (মণিরামপুর) আসনের সংসদ সদস্য এবং স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। মনোনয়ন ফরম হাতে রাখা তার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, জামায়াত নেতা ও খানপুর ইউপির চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামসহ কয়েকজন নেতাকর্মী প্রতিমন্ত্রী স্বপনের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। দুই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধেই থানায় নাশকতার মামলা রয়েছে।
মণিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী সবসময় জামায়াত-বিএনপিদের সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করেন। তার প্রমাণ হলো—দলীয় মনোনয়ন কেনার ছবি। ছবিটির বেশিরভাগ নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের বিরোধী শক্তির সঙ্গে আছেন।’
প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে নাশকতা মামলার আসামিদের থাকা প্রসঙ্গে মণিরামপুর থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি জানা নেই। তারা আসামি কি-না তা কাগজপত্র দেখে বলতে পারবো।’
আওয়ামী লীগের এমপির সঙ্গে দলীয় নেতাদের মনোনয়ন ফরম কিনতে যাওয়া প্রসঙ্গে জেলা বা উপজেলা বিএনপির কোনো নেতার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ, যশোরের বিএনপির শীর্ষ নেতারা বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন।
মনোনয়ন ফরম কেনার সময় অভিযুক্ত দুই ইউপি চেয়ারম্যান ছিল বলে স্বীকার করে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘আমি বর্তমান এমপি ও প্রতিমন্ত্রী। আমার সঙ্গে অনেকেই মিশতে চায়। মনোনয়ন ফরম কেনার সময় অনেকেই ছিলেন। দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন সংগঠনের লোকজন ছিলেন। তবে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক নাশকতার মামলার আসামি কিনা তা আমার জানা নেই।’