যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) লিফট অপারেটরের নিয়োগ পরীক্ষা দিতে আসা ১৭ চাকরিপ্রার্থীকে ধরে নিয়ে ছয় ঘণ্টা ‘বন্দি’ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ঘটনার শিকার চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, গতকাল বৃহস্পতিবার পরীক্ষা হলে ঢোকার সময় যবিপ্রবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে তাদের ধরে নিয়ে ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে আটকে ফেলে। পরীক্ষা শেষে হলে সেখান থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি তদন্তের স্বার্থে সিসি ক্যামেরার হার্ডডিক্স সংগ্রহ করতে গেলে সেটিও ছিনিয়ে নেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এই ঘটনায় অভিযুক্তদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার কথা জানিয়েছেন যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন।
যবিপ্রবি প্রশাসন ও ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লিফট অপারেটর পদের নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে। ১১টি পদের বিপরীতে এই পরীক্ষায় প্রার্থী ছিলেন ৩৮ জন। এর মধ্যে ২১ জনকে ছাত্রলীগ পরীক্ষা দিতে ‘অনুমতি’ দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লিফট অপারেটর পদে ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের কয়েক জন প্রার্থী ছিল। ফলে তাদের প্রার্থী ছাড়া অন্যরা যাতে পরীক্ষা দিতে না পারে, সেজন্য বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন। তাদের প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থী ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলেই তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসীয়ূর রহমান ছাত্রবাসের ৩০৪ ও ৩০৯ নম্বর কক্ষে অবরুদ্ধ করা হচ্ছিল।
ঘটনার শিকার চাকরিপ্রার্থী সোহান হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ইজিবাইক থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই কয়েক জন আমাকে ডাকে। কাছে গেলে জানতে চায় পরীক্ষা দিতে এসেছি কিনা। পরীক্ষার্থী এটা জানার পর আমাকে শহীদ মসীয়ূর রহমান হলের ৩০৯ নম্বর রুমে নিয়ে গিয়ে বলে, তোরা পরীক্ষা দিতে আসছিস, এডমিট কার্ড কোথা থেকে পাইলি?’ ওই রুমে সোহান আরো পাঁচ জন প্রার্থীকে এভাবে আটকে থাকতে দেখেন। এছাড়াও হলের ৩০৪ নম্বর কক্ষ ও পাঁচতলার একাধিক রুমে মোট ১৭ জনের মতো আটকা ছিল বলে তিনি জানান। ৩০৯ নম্বর রুমে জোরে চিল্লাচিল্লি করলে আমাকে মাথায় ও নাকে-মুখে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুসি মারে তারা। আমার চেয়ে রুমের অন্য পরীক্ষার্থীদের অনেক বেশি মারধর করে। অন্য প্রার্থীরাও সাংবাদিকদের কাছে প্রায় একই রকমের অভিজ্ঞতার কথা জানান।
এ বিষয়ে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা দাবি করেন, ছাত্রলীগের কোনো কর্মী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ কখনোই নিয়োগের সঙ্গে জড়িত হয় না। আমাদের কোনো কর্মী যদি পরীক্ষা দেয় তবে আমরা ভিসি স্যারকে জানাই, পরীক্ষার্থী যদি যোগ্য হয় তবে তাকে চাকরি দেওয়া হয় নিয়ম মেনে।’ তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, লিফট অপারেটর পদে চাকরির পরীক্ষা ছিল। সাড়ে ১২টার দিকে আমি জানতে পারলাম কিছু পরীক্ষার্থীকে ছাত্রাবাসে আটকে রাখা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে প্রভোস্টকে বিষয়টি দেখার জন্য পাঠাই এবং প্রভোস্ট আমাকে জানান ছাত্রাবাসে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তী সময়ে দুপুরের পরে ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থী ও অভিভাবকরা আমার সঙ্গে দেখা করেন। তারা আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে আমরা প্রাথমিকভাবে ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। পরবর্তী সময়ে বিকালের দিকে এই ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করতে গেলে ছাত্রলীগের কিছু ছেলে ক্যামেরার হার্ডডিক্স ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জাজনক। আগামী শনিবার রিজেন্ট বোর্ডে সভা ডাকা হবে। সেখানে এই বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অপহরণ মামলা করা হবে। আর যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।