পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করেছে ভারত। নিজেদের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগামী মার্চ পর্যন্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড বা বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয় গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ থাকবে। এই নির্দেশনা গতকাল শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়েছে। এদিকে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় দেশের বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। লাগামহীনভাবে বাড়ছে পণ্যটির দাম। গতকাল শুক্রবার একদিনেই রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজে ৪০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজে ২০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে।
খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, রপ্তানি বন্ধের কারণে ক্রেতারা আতঙ্কিত হয়ে বাড়তি দরে পেঁয়াজ কিনছেন। এক শ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ী এর সুযোগ নিচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের বিষয়টি নিয়ে আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব। তিনি বলেন, চলতি মাসে বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠলে দাম কমবে। এছাড়া ফেব্রুয়ারিতেই নতুন পেঁয়াজের মৌসুম শুরু হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কারসাজি চক্র’ সব সময়ই সুযোগ খোঁজে পণ্যের দাম বাড়ানোর। তবে আমরা বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি বন্ধে অভিযান জোরদার করব।
উল্লেখ্য, বিরূপ আবহাওয়ায় ফলন ভালো না হওয়ায় ভারত নিজেদের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গত ২৯ অক্টোবর প্রতি টন পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ৮০০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে দেয়। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। তবে কোনো দেশের সরকারের অনুরোধে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার রপ্তানির সুযোগ দিতে পারবে বলে দেশটির ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেডের (ডিজিএফটি) আদেশে জানানো হয়েছে। এছাড়া, ইতিমধ্যে যারা পেঁয়াজ আমদানির এলসি চালু করেছেন, তাদের মধ্যে যারা আদেশ জারির আগেই পণ্য জাহাজিকরণ শুরু করেছেন, তারা এর আওতামুক্ত থাকবেন। এছাড়া শিপিং বিল দপ্তরে জমা দিলে এবং সংশ্লিষ্ট জাহাজ বন্দরে ভিড়লে বন্দর কর্তৃপক্ষ এ ধরনের চালান অনুমোদন করতে পারবে।
বর্তমানে ভারতের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ রুপির মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু রপ্তানি বন্ধের সংবাদে বাংলাদেশে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম ১২০ টাকায় উঠে গেছে। যা একদিন আগেও যথাক্রমে ১১০ থেকে ১২০ টাকা ও ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) গতকাল তাদের বাজারদরের প্রতিবেদনে হঠাত্ করে পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়টি তুলে ধরেছে।
গত কিছুদিন ধরেই দেশের বাজারে পেঁয়াজের বাজার অস্থির। গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের খুচরা দর সর্বোচ্চ ৬৫ টাকায় নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু এ দরে খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা যায়নি। পরে সরকার পেঁয়াজ আমদানি উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এরপরও পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসেনি।