প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য ভূমি সিলেট। শীত, বর্ষা হেমন্ত সব মৌসুমেই নয়নকাড়া পর্যটকদের আনাগোনা হয় সিলেটের অনাচে-কানাচে। কক্সবাজারের পরেই সিলেটের সৌন্দর্য ভিন্ন মাত্রার। আর তা উপভোগ করতে প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ হাজার লোকের সমাগম ঘটে শুধু সিলেট নগরীতেই। সিলেটে হযরত শাহজালাল (র.) ও হযরত শাহপরান (র.) এর মাজারসহ ৩৬০ আউলিয়া এখানে শুয়ে আছেন। এখানকার ছোটবড় পাহাড়. টিলা, চা-বাগান, বনবনানী, হাওর, মাছ, শীতের পাখি নানা জীববৈচিত্র্য, বিছানাকান্দি, সাদা পাথরের মতো নয়নকাড়া পর্যটন স্পট দেখতে শীতে পর্যটক সমাগম ঘটে বেশি। আর এসব ঘিরে গত কয়েকদশকে সিলেটে পর্যটন কেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যেও বেশ প্রশার লাভ করেছে। কিন্তু বিরোধীদলের হরতাল অবরোধের কারণে সব পর্যটন স্পট মৃয়মান।
যেখানে শীত মৌসুমে সিলেটের হোটেল-মোটেল গিজগিজ করত পর্যটকদের উপস্থিতিতে। সড়কের পাশে সন্ধ্যায় ‘চিতই পিঠা’ ও ‘ভাপা পিঠা’র দোকানগুলোতে যেখানে লাইন পড়তো—সেখানে অনেকটাই নিরবতা। প্রতি শীত মৌসুমে সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রিক ব্যবসাগুলো চাঙ্গা হয়ে থাকলেও, এবার ভিন্ন চিত্র। ব্যবসায়ীরা শীতের আগমনীতে পর্যটকদের কেন্দ্র করে প্রস্তুতি নিলেও আশায় গুড়েবালি।
এদিকে সিলেটের পাহাড়ি এলাকায় শীত নামার সঙ্গে সঙ্গে বিছানাকান্দি ও সাদা পাথর এলাকায় পাহাড়ি পানির প্রবাহ কমে গেলেও হিমশীতল পানির স্পর্শ আনন্দ দেয় । আসাম-মেঘালয় থেকে নেমে আসা ঝর্ণার কল কল শব্দও হ্রাস পেলে মেঘহীন আকাশে এর সৌন্দর্য আরো স্পষ্ট। কিন্তু উপভোগের লোক নেই। সুনসান নিরবতা।
পর্যটন এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ‘বিগত বছর মরণব্যাধি করোনা। তার পর ভয়াবহ বন্যায় বিশেষ করে পর্যটন কেন্দ্রিক ব্যবসায় যে থাবা পড়ে, তা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এখন হরতাল, অবরোধ আমাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিচ্ছে,’ এই মন্তব্য করে একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা লাখ লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে এখন অন্ধকার দেখছি। ব্যাংক ঋণ শোধ করব কীভাবে সেই চিন্তায় ঘুম হয় না।’
‘যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এখনে পর্যটন কেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য আজও সেভাবে গড়ে উঠছে না। সঠিক উদ্যোগ নিলে বছরে এখানে হাজার কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ রয়েছে,’ বলেন, পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীগণ। বিভিন্ন সময় সরকারি ছুটি উপভোগ করতে সিলেটে নানা বয়সের অন্তত ৫০ হাজার পর্যটক সমাগম ঘটে সিলেটে। তিল ধারণের ঠাই হয় না নগরীর হোটেল মোটেল ও গেস্ট হাউজগুলোতে। আর যারা আগে থেকে হোটেল বুকড না করে আসেন তাদের দুর্ভোগে পোহাতে হয়।
সিলেটে পর্যটক সমাগম বেশি
‘কক্সবাজারের পরেই সিলেটে পর্যটক সমাগম ঘটে বেশি’ বলেন, সিলেট হোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউজ ওনার্স গ্রুপের সভাপতি এ টি এম সোয়েব আহমদ। তিনি বলেন ‘সিলেট প্রকৃতির অপার দান। মেঘালয় পাহাড় ও চেরাপুঞ্জির পাদদেশের এই জনপদে সঠিক উদ্যোগ নিলে আগামীতে পর্যটন কেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে, কর্মসংস্থান হবে। তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক বিকাশে সিলেটের পর্যটন সম্ভাবনাময় খাত।’