অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায় প্রমাণিত হওয়ায় টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ২০ বছর ও তাঁর স্ত্রী চুমকি কারনকে ২১ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।আজ বুধবার (২৭ জুলাই) বেলা সোয়া ১১টায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদের আদালত এই রায় দেন।এ ছাড়াও তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার কথা বলা হয়েছে।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হক মাহমুদ।
রায়ের আগে দুই আসামিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে হাজির করে পুলিশ।রায়ের পর পুনরায় তাদের কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
এর আগে বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো.রাশেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল কক্সবাজারে আদালত।এবার তিনি দুদকের মামলায় সস্ত্রীক সাজা পেলেন।
কক্সবাজারের টেকনাফ থানায় দায়িত্ব পালনকালে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলায় আসামি হয়েছিলেন।ওই মামলার পর দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করে।দুদকের মামলার বিচার কার্যক্রম চলছিল চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে।বিচারিক আদালতে,দুদক পক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়।এরপর বিচারক ২৭ জুলাই রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছিলেন।
এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।১৭ ফেব্রুয়ারি চুমকির বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।তবে এই মামলায় প্রদীপের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিপরীতে উচ্চ আদালতে একটি আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়ায় ওই দিন সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি।
পরবর্তীতে গত ৪ এপ্রিল আবেদন নিষ্পত্তি হওয়ায় প্রদীপের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।মামলায় ২৯ জনকে সাক্ষী করা হলেও দুদকের পক্ষে ২৪ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।
আসামিপক্ষের দুজন সাফাই সাক্ষ্য দেন।মামলার শুরু থেকে চুমকি কারন পলাতক থাকলেও গত ২৩ মে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ দিন তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
২০২০ সালের ২৩ আগস্ট দুদকের সহকারী পরিচালক মো.রিয়াজ উদ্দিন অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে মামলা করেন।মামলায় প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন,সম্পদের তথ্য গোপন ও অর্থপাচারের অভিযোগ আনা হয়।
তদন্তের পর টাকার অঙ্কে কিছু পরিবর্তন আনা হয়।২০২১ সালের ২৮ জুলাই দুদকের সহকারী পরিচালক মো.রিয়াজ উদ্দিন অভিযোগপত্র দাখিল করেন।২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর আসামি প্রদীপের উপস্থিতিতে অভিযোগপত্রের শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন।সম্পদ বিবরণীতে ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৭ টাকা সম্পদের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দেওয়া এবং দুই কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জন ও হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়।প্রদীপ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ গোপন করতে নগরের কোতোয়ালি থানাধীন পাথরঘাটা এলাকার একটি ছয়তলা বাড়ি শ্বশুরের নামে নির্মাণ করেন।পরে ওই বাড়িটি প্রদীপের শ্বশুর চুমকির নামে দান করেন।দানপত্র দলিল হলেও বাড়িটি প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি কর্তৃক অর্জিত।আয়কর রিটার্নে আসামি চুমকি কমিশন ব্যবসা এবং বোয়ালখালী উপজেলায় ১০ বছরের জন্য লিজ নেওয়া পাঁচটি পুকুরে মাছের ব্যবসার যে আয় দেখানো হয়েছে তাও প্রদীপ দাশের অপরাধলব্ধ অর্থ স্থানান্তর,রূপান্তর ও হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে ভুয়া ব্যবসা দেখানো হয়েছে।প্রদীপ তার স্ত্রীকে কমিশন ব্যবসায়ী ও মৎস্য ব্যবসায়ী সাজিয়ে অবৈধ সম্পদ বৈধ করার চেষ্টা করেছেন।