বখতিয়ার রহমানঃ-
খেলা এখন শুধু প্রতিযোগিতা না, খেলা এখন অন্যতম বিনোদনের উপকরণ। মানুষ এখন আর নাটক-সিনেমা দেখে না কারন সেগুলো কৃত্তিম, তারা এখন সিনেমা হল ও ড্রইংরুম ছেড়ে লাইভ বিনোদনের জন্য কনসার্ট ও খেলার মাঠে যাচ্ছেন বেশি।
আমেরিকা মাতাচ্ছে রাগবি ও বাস্কেট বল। ইউরোপ, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা মাতাচ্ছে ফুট বল। এশিয়াকে কোন একক খেলা মাতাতে পারছে না, মধ্যপ্রচ্যে ফুটবল মোটামুটি ঘাটি বেধেছে কিন্তু দক্ষিণ এশিয়াতে ক্রিকেট এখন ধর্ম! ক্রিকেটাররা একএকজন দেবতা। এখানে শচিন, জয়সুরিয়া ও বিরাটের ব্যাট, মুরালি, কুমলে, মাশরাফিদের বলের পূজা করা হয়। এদিকে দলনেতা হিসাবে ইমরান খান, রানাতুঙ্গা, কপিল দেব ও ধোনি ইন্দ্র সমতূল্য ।
খেলোয়ারের কাছে খেলা প্রতিযোগিতা, দর্শকদের কাছে বিনোদন, অতিউৎসাহীর কাছে ধর্ম, বিপনণ ম্যানেজারের কাছে প্রচার মাধ্যম। আর সব পরিচয়কে ছাপিয়ে এখন খেলার মাঠ হয়ে গিয়েছে যুদ্ধের ময়দান! খেলোয়ার যুদ্ধ করে মাঠে, দর্শক গ্যালারিতে, বিপনন ম্যানেজার পর্দার আড়ালে, এখন খেলার মাঠে রাজনীতি নিয়ে এসেছে রাজনীতিকরা।
ভারত-পাকিস্তান খেলাকে রাজনৈতিক হয়ে আছে অনেক আগে থেকে, এবার ভারত খেলার রাজনীতিতে মেতেছে বাংলাদেশের সাথে। মাত্র সমাপ্ত বিশ্বকাপের মাঠে ভারত-পাকিস্তান, ভারত-বাংলাদেশ এর খেলা নিয়ে যে পরিমান রাজনীতি ও হেট ক্রাইম হয়েছে তাতে খেলার উত্তাপ ছড়িয়েছে সপ্তমে। আর এর সাথে এখন রাজনীতিকরাও যুক্ত হয়েছেন।
এই বিশ্বকাপ খেলায় গ্যালারীতে দেখলাম বাংলাদেশের সাপর্টারদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছে ভারতের দর্শকরা, একজন দর্শকের বহন করা একটা বাঘের রেপ্লিকা ভারতীয় দর্শকরা ছিড়ে ফেলেছে(!) এটা অসৌজন্যমূলক আচরণ। এটা যদি সাময়ীক উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ ধরে নেই তবে এটা একেবারেই স্বাভাবিক ব্যাপার, আর যদি পরিকল্পীত হয় এবং অধিকাংশ মানুষ এই হিংসা ধারণ করে তবে সেটা হবে মারাত্মক সমস্যা।
আমরা জানতে পেরেছি বেশ কিছুদিন থেকে ভারতীয় কিছু রাজনৈতিক নেতা বলছে আমাদের স্বাধীনতা তারা এনে দিয়েছে(!) তারা কী আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস জানে না?
আমদের পূর্ব প্রজন্ম ৯মাস ধরে জীবন দিলেন, ইজ্জত দিলেন, সম্পদ দিলেন, তাদের সুখ-শান্তি বিসর্জন দিলেন। ভারতই যদি স্বাধীনতা দিলো আমাদের, তবে তাদের এতোকিছু বিসর্জন দিতে হলো কেন? ভারততো তাদের দেশে আমাদের ভিসাফ্রি প্রবেশের অধিকারই দিচ্ছে না, সেখানে আমাদের স্বাধীনতা ফ্রীতে দিয়ে দিলো! এটা কী যুক্তির কথা? তবে তারা আমাদের স্বাধীনতার প্রাপ্তিতে সহায়তা করেছে তা সার্বজনিন সত্যি, আমরা সবাই জানি।
তবে প্রথম থেকে ভারত এই যুদ্ধে জড়াতে ভয় পাচ্ছিল কারন যদি তারা সেনা পাঠাত তবে যুদ্ধটা পুরা এলাকায় ছড়িয়ে যেতে পারতো। অবশ্য যুদ্ধে বাঙ্গলাদেশের নেতৃত্বে যারা ছিলো তারাও চায়নি ভারত যুদ্ধে জড়িয়ে যাক, কারণ তা হলে এটা ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে পরিনত হয়ে পরতো ফলে আমাদের স্বাধীনতার ইসুটা পিছনে চলে যেত, সেটা আমাদের জন্য সুখকর হতো না।
এদিকে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, চীন পাকিস্তানের পক্ষে কাজ শুরু করে দিয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভূরাজনৈতিক কারনে বাংলাদেশের পক্ষ নিলো। যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধজাহাজ পাঠালে সোভিয়েত ইউনিয়নও বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধ জাহাজ পাঠানোর হুমকি দিলো। এদিকে ভারতের ভূখন্ডে পাকিস্তান ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করলে ভারত প্রস্তুতি নিলো পাল্টা আক্রমনের, তারই ধারাবাহিকতায় ভারত মৈত্রী চুক্তি করলো রাশিয়ার সাথে যার ফলে তারা রাশিয়ার পরামর্শে সেনা পাঠাতে সাহস করলো।
আমরা মানলাম ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতায় সহায়তা করেছে, সে কী শুধু আমাদের জন্য নাকি ভারতের স্বার্থটাই সেখানে বেশি ছিলো? আমরা স্বাধীন হওয়ায় ভারতের সীমান্তে শান্তি বিরাজ করছে, যদি এটা পাকিস্তানের প্রদেশ থাকতো তবে ভারত চারিদিক থেকে চাপে থাকতো। এখন তারা চীন, পাকিস্তান ও মায়ানমারের সীমান্তে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করে রেখেছে নিজের ভূখন্ড রক্ষার জন্য, আর বাংলাদেশের সীমান্তে সেনা রেখেছে এ দেশের কিছু নিরীহ মানুষকে গুলি করার জন্য।
এখন ভারত তার শত্রু তিন দেশের সীমান্তে যত মানুষকে গুলি করে হত্যা করে তার থেকে বন্ধু(!) বাংলাদেশের সীমান্তে অনেক বেশি মানুষকে গুলি করে। এটা কী বন্ধুত্বের প্রমাণ? ভারত যদি মনে করে তারা আমাদের স্বাধীনতায় সাহায্য করেছে তবে এই সব হত্যাকান্ড বন্ধ করতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশের সাধারণ জনগন যদি ভারতবিদ্বেষী হয় তবে কি তাদের দোষ দেয়া যায়?