তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে গঙ্গাচড়ার শংকরদহ বধ্যভূমি। গত কয়েক বছর ধরে ঝুঁকিতে থাকা বধ্যভূমিটি গত অক্টোবরে তিস্তায় বিলীন হয়ে যায়। শহিদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ওবায়দুল্লাহ বলেন, ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার শংকরদহ গ্রামে ঘটেছিল এক নির্মম হত্যাকাণ্ড। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীনতবিরোধী রাজাকার-আলবদরদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বুলেটে নির্মমভাবে নিহত হন ২২ জন নিরীহ গ্রামবাসী। ১২ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা খবর পান, পাকিস্তানি সেনারা গঙ্গাচড়া আক্রমণ করবে। এস এম মনিরুজ্জামান বাবলুর নেতৃত্বে ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নদী পার হয়ে মহিপুরে পৌঁছান ১৩ ডিসেম্বর সকালে। পাকিস্তানি সেনারা গঙ্গাচড়া এবং লক্ষ্মীটারীর সীমানা গান্নারপাড়ে পৌঁছলে শুরু হয় সম্মুখযুদ্ধ।
এ যুদ্ধে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আব্দুল আজিজ, আব্দুল সালাম, সিরাজুল ইসলাম, মজিবর রহমান, সামসুল আলম, রওশোনুল হক, ছাদেকুল ইসলাম, মহুবর রহমান, আব্দুল হামিদ প্রমুখ অংশ নেন। টানা কয়েক ঘণ্টা সম্মুখযুদ্ধ শেষে পাকিস্তানি সেনারা শংকরদহ মসজিদে চালায় হত্যাযজ্ঞ। এরপর তারা আবারও ব্রাশ ফায়ার করতে করতে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। হত্যাযজ্ঞের শিকার হন মুন্সী মঞ্জুম আলী, রহিম উদ্দিন, আকবর আলী, সহিদার রহমান, বদিউল ইসলাম ও আলী মাস্টারসহ ২২ জন। আর এদিনেই শত্রুমুক্ত হয় গঙ্গাচড়া। ১৩ ডিসেম্বর পালন ও শহিদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবিতে বেসরকারি একটি সংগঠন গত মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ মাঠে স্মৃতিচারণ ও আলোচনাসভার আয়োজন করে।
লক্ষ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, তিস্তার ভাঙন থেকে বধ্যভূমি রক্ষার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনেক আবেদন নিবেদন করার পরও কাজ হয়নি। ভাঙনে শংকরদহ বধ্যভূমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গঙ্গাচড়া উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘যেহেতু বধ্যভূমি তিস্তা নদীতে বিলীন হয়েছে, সেহেতু সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য নতুন করে জমি খুঁজছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য নতুন করে দুইটি জমি নির্বাচন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি জমি নির্বাচন করে সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে।’