প্রেম সংক্রান্ত জটিলতার জেরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ইমন রহমানকে হত্যা করে তার বন্ধুরা।পরে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ভাসিয়ে দেয় তুরাগ নদীতে।এই ঘটনায় রাশেদুল ইসলাম ওরফে রাসু ও বিপুল চন্দ্র বর্মন নামে নিহতের দুই বন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যা)।র্যাব আরও জানায়,পচে যাওয়া লাশটি যখন উদ্ধার হয়,তখন বোঝার উপায় ছিল না এটি হত্যাকাণ্ড না দুর্ঘটনা।তবে তদন্তের একপর্যায়ে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয় র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন বলেন,গত ৭ জুলাই আনুমানিক রাত ৯টার দিকে ভুক্তভোগী যুবক গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার রসুলপুর এলাকার বাসা থেকে বের হন।ফিরতে দেরি হওয়ায় পরিবারের লোকজন চিন্তিত হয়ে পড়েন।পরের পাঁচদিন তারা সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করে তার কোনো সন্ধান না পেয়ে কালিয়াকৈর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
তিনি আরও বলেন,গত ১৬ জুলাই সাভারের আমিন বাজার এলাকার কেবলার চর সংলগ্ন তুরাগ নদীতে একটি লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা নৌ-পুলিশকে খবর দেয়।লাশটি কালিয়াকৈর থানা পুলিশ ইমনের বলে শনাক্ত করে।ভুক্তভোগীর পরিবার এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করে।র্যাব ঘটনাটির ছায়াতদন্ত শুরু করে।এরই ধারাবাহিকতায় আজ ভোরে র্যাব-১ গাজীপুর ক্যাম্পের একটি দল র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহায়তায় টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার থানার আবাদপুর গ্রামে অভিযান চালায়।এ সময় আত্মগোপনে থাকা এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী রাশেদুলকে গ্রেপ্তার করে।তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে জড়িত চারজনের মধ্যে অন্যতম বিপুলকে কালিয়াকৈর থানার কালামপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অভিযানে রাশেদুলের শয়নকক্ষে বিছানার নিচ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি দা এবং বিপুলের কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়।প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন বলেও র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান।
তিনি জানান,রাশেদুল,বিপুল ও ইমন একই স্কুলে মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ালেখা করত।৫/৭ বছর ধরে তারা পরস্পরের পরিচিত।এর মধ্যে গ্রেপ্তার দুই আসামি ২/৩ বছর ধরে মাদক কারবার ও সেবনের সঙ্গে জড়িত।তারা বন্ধু হলেও ইমনের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আগে থেকেই বিরোধ ছিল।সম্প্রতি প্রেমঘটিত বিষয়ে ইমনের সঙ্গে রাশেদুলের বিরোধ চরমে পৌঁছায়।একপর্যায়ে তিনি তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি আরও জানান,পরিকল্পনা অনুযায়ী রাশেদুল গত ৭ জুলাই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইমনকে তার বাড়ির পশ্চিম পাশের বটগাছতলায় যেতে বলে।সেখানে রাসু,বিপুলসহ হত্যায় জড়িত অন্যরা আগে থেকেই দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ওঁৎ পেতে ছিল।এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইমন সেখানে পৌঁছালে রাশেদুল তার প্রেমিকাকে গালি দেওয়ার কারণ জানতে চায়।এ নিয়ে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাশেদুল দা দিয়ে ইমনকে কোপ দেয়। তখন অন্য আসামিরাও ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে।নিস্তেজ হয়ে গেলে তার লাশ তুরাগ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।নদীতে স্রোতের কারণে লাশ সাভারের আমিনবাজারে গিয়ে ভেসে উঠে।