আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাশকতার আশঙ্কা দেখছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নির্বাচন কমিশনকে তারা পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, কয়েকটি বিশেষ দল নির্বাচন প্রতিহতের কর্মসূচি দিয়েছে। তারা নাশকতার চেষ্টা চালাচ্ছে। বর্তমানে প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। প্রচারণা বিশেষ নজরদারিতে রাখতে হবে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
গতকাল বৃস্পতিবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ঢাকা বিভাগীয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মত বিনিময় সভা করে নির্বাচন কমিশন। সেখানে এমন আশঙ্কার কথা জানান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। ইসির বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং অফিসার মো. সাবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার ( ইসি) মো. আলমগীর এবং নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম। এছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সভায় কমিশনের পক্ষ থেকে ঢাকার আসনগুলোতে দায়িত্ব পালন করা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) কাছে নির্বাচনী পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এ সময় ১০ থেকে ১৫ জন ওসি ইসিকে জানান, ‘নির্বাচনী পরিবেশ ভালো আছে। কোনো ধরনের নাশকতার আশঙ্কা নেই।’ এর পরই গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে নাশকতার আশঙ্কার কথা জানানো হয়। তারা বলেন, বিশেষ কয়েকটি দল এবারের নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তারা নাশকতার চেষ্টা চালাচ্ছে। বর্তমানে প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা করছেন, এসব প্রচারণায় বিশেষ নজরদারি চালানো উচিত। কারণ প্রচারণার মধ্যে নাশকতা চালিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তোলা হতে পারে। ভোটের দিন পর্যন্ত এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
ঢাকা বিভাগীয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্য শোনার পর এক নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘কি হলো, না হলো তা দেখার সুযোগ বর্তমানে নেই। যেকোনো মূল্যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হতেই হবে। দেশের এবং আন্তর্জাতিক মহল যেন দেখতে পায় এই নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য হয়েছে। এই নির্বাচন ঘিরে যে গণতন্ত্রের সূচনা হলো তা অব্যাহত রাখতে হবে।
বৈঠক সূত্র আরো জানায়, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব ধরনের অসহযোগিতা ও সহিংসতা মোকাবেলা করে সকল প্রার্থীর জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরির বিষয়ে প্রস্তুতি আছে বলে মনে করেন মাঠ প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সব নির্বাচনেই তাদেরকে চ্যালেঞ্জ নিতে হয়। এবারের নির্বাচনও চ্যালেঞ্জের বাইরে নয়। তবে দেশের অন্যতম প্রধান বড় দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো ভোট বর্জন করায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য চ্যালেঞ্জ অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। তাছাড়া সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন হলেও এবং কোন ধরনের সহিংসতা হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞার যে ঘোষণা দিয়েছে তাতে চ্যালেঞ্জ আরও বেড়েছে। তবু সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সুন্দর ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন করতে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসি সূত্র বলছে, অতীতের মতো এবারো পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যালট পেপার ভোটের আগের রাতে কেন্দ্রে পৌঁছানোর দাবি জানানো হয়। বলা হয়, ঢাকা বিভাগের অনেক এলাকা দুর্গম। এসব এলাকায় সকালে ব্যালট পেপার পৌঁছানো চ্যালেঞ্জ হবে। একই সঙ্গে পুলিশের পক্ষ থেকে সাব-ক্যাম্প করে দুর্গম এলাকার ব্যালট সংরক্ষণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। জবাবে সিইসি সরাসরি পুলিশের এই প্রস্তাব নাকচ করে বলেন, রাত ৪ টার সময় রওনা দিলে নির্ধারিত সময়ের আগে পৌঁছানো সম্ভব। এর পরও সমস্যা মনে করলে আপনারা (রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) নিজেরা বসে সমন্বয় করবেন। ব্যালট পৌঁছাতে কোথায় কি ধরনের সমস্যা হবে সেটা লিখিত জানালে কমিশন বিবেচনা করবে।
একজন উধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েকটি নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি খুবই কম ছিল। এ নির্বাচনেও যদি ভোটাররা কেন্দ্রে না আসেন তাহলে নির্বাচন আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। এজন্য সব ধরনের নাশকতামূলক কর্মকান্ড প্রতিহত করে ভোটারদের কেন্দ্রে আনার বিষয়ে কাজ করতে হবে। ভোটারদের ভয় দূর করতে হবে। এজন্য সর্বত্র গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে শেয়ার করা জরুরি। তাহলে তারা সময়মত ব্যবস্থা নিতে পারবে। ঘটনা ঘটানোর আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
অতিরিক্ত সমস্যা বিএনপির অসহযোগ আন্দোলন-ডিএমপি কমিশনার
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির ডাকা অসহযোগ আন্দোলনকে ভোটের জন্য অতিরিক্ত সমস্যা বলে মনে করছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। তিনি বলেছেন, ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বিএনপি। এবারের নির্বাচনে নাশকতা, সন্ত্রাস ও আতঙ্ক সৃষ্টির পাশাপাশি অতিরিক্ত সমস্যা হলো বিএনপির অসহযোগ আন্দোলন। একটি বা দুটি দলের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শঙ্কা সৃষ্টি হতে পারে। সেইগুলো মোকাবিলা করে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা হবে। ইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি আরো বলেন, ভোট শান্তিপূর্ণ যাতে হয়, তৃতীয় পক্ষ যাতে কোনো ধরনের সহিংসতা না করতে পারে সেই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ভোট প্রতিহত-রেলে নাশকতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নাশকতা একটি নয় একাধিক ঘটনা হচ্ছে। ২৮ অক্টোবর থেকে দেশে জ্বালাও-পোড়াও হচ্ছে। অনেকে আইনের আওতায় এসেছে, বাকিরাও চলে আসবে।
নাশকতা ঠেকাতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির নির্দেশ-ইসি
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর গতকাল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, নাশকতা মোকাবিলার জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর জন্য বলেছি। এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য বলেছি। যাতে ঘটনা ঘটার আগেই যেন তারা ব্যবস্থা নিতে পারে। তিনি বলেন, নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করবেন তারা যেন নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেন সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বড় পক্ষের (বিএনপির অসহযোগ আন্দোলন) নতুন কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রার্থীরা এ বিষয়ে খুব একটা শঙ্কা প্রকাশ করেননি। আমরাও মোটেই শঙ্কিত নই।