দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ভোটাভুটির খেলা মন্তব্য করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, প্রতিযোগিতা বিবেচনায়ও এটা কোনো নির্বাচন না। কারণ, নির্বাচনের যে সংজ্ঞা, নির্বাচনের যে গ্রামার-বিকল্প থেকে বেছে নেওয়ার সুযোগ, সেটা এই নির্বাচনে নেই। নির্বাচন হতে হলে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকতে হবে। বিএনপি না থাকায় এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, আওয়ামী লীগ চাইলে সকল আসনে জিততে পারে। নির্বাচনে প্রতিযোগিতা হচ্ছে নিজেদের মধ্যে। নিজেদের অনুগত, নিজেদের সৃষ্ট নামসর্বস্ব দলগুলোর সঙ্গে।
রোববার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগর থানাধীন আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবনে ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা কার্যক্রম, ভোটবিডি ওয়েবসাইট সম্পর্কিত অবহিতকরণ সভায় তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমি মনে করি- আমরা এখন ভয়াবহ সাংবিধানিক সংকটের মধ্যে আছি। মূলত পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হয়েছে তা অসাংবিধানিক। কারণ দশম ও একাদশ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না করায় কোর্টের রায় লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং গণভোট আয়োজন না করেই সংশোধনীটি পাস করা হয়েছে। তাই বর্তমান সরকারের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
ইসি গঠনের প্রক্রিয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বিষয়ে যে আইন তাতে বলা আছে রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠন নাম প্রস্তাব করবে। কিন্তু যখন অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছিল তখন সেটি উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। সুতরাং আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এই নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। তাই নির্বাচন কমিশনের আইনগত বৈধতা যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয় তাহলে তো তার সব কার্যক্রম, তফসিল ঘোষণা এবং নির্বাচন আইনগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি না থাকলে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, আওয়ামী লীগ চাইলে সকল আসনে জিততে পারে। তারা অন্যদের কিছু সিট দেয়ার জন্য আসন ভাগাভাগি করছে। নিজেদের অনুগত দলগুলোকে তারা কিছু সিট দিতে চায়। জাতীয় পার্টি-জাপা সঙ্গেও তারা সিট ভাগাভাগি করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, দলটির মহাসচিব তার পোস্টারে লিখেছে জাতীয় পার্টি মনোনীত আর আওয়ামী লীগ সমর্থিত। এভাবে নির্বাচন করলে লেজিটিমেসি দূরীভূত হবে না।
নির্বাচনে আমরা আর মামুদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হচ্ছে বলে মন্তব্য করে সুজন সম্পাদক বলেন, আমি মনে করি না এটা কোনো নির্বাচন। কারণ নির্বাচন হলো বিকল্প থেকে বেছে নেওয়া। যদি বিকল্প না থাকে তাহলে তো নির্বাচন হয় না। নির্বাচন নির্বাচন খেলা হতে পারে। নির্বাচন হতে হলে যথার্থ বিকল্প থাকতে হবে এবং অনিশ্চিয়তা থাকতে হবে। এখনকার নির্বাচনে কি অনিশ্চয়তা আছে?
তিনি বলেন, আমার যেটা বিশ্লেষণ-এটা ভোটের একটা খেলা। গত দুটি বিতর্কিত নির্বাচন হয়েছে। যার ফলে সরকারের যে লেজিস্টেমেসি সমস্যা, তা কিন্তু দূরীভূত হবে না। বরং আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। কারণ এখন কিন্তু আমাদের নির্বাচনের উপর অনেকের চোখ আছে। অতীতে কিন্তু সেই চোখ ছিল না। এই লেজিস্টেমেসির সমস্যায় বিদেশি বন্ধুদের উপর আমাদের আরও নির্ভরশীল হতে হবে। যেটায় আমাদের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ হতে পারে।
সুজনে’র সহযোগিতায় দি হাঙ্গার প্রজেক্টের পক্ষ থেকে ভোটবিডি ওয়েবসাইট সম্পর্কিত এই অবহিতকরণ সভা আয়োজন করা হয়। সভায় রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) সদস্যরাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দিলিপ কুমার সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ভোটবিডি সম্পর্কিত একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর প্রোগ্রাম অফিসার সাইফুল সারওয়ার। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আরএফইডির সভাপতি সাংবাদিক সাইদুর রহমান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান, আরএফইডির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী জেবেল প্রমুখ।