বাংলাদেশে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে পরিচালিত এক জরিপের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রাইভেট টিউশন ও গাইড নির্ভরতা বেড়েছে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জরুরি আশ্রয়ের কারণে পাঠের সময় নষ্ট হচ্ছে। দেশের দুর্যোগপ্রবণ চার উপজেলার ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওপর করা এই প্রতিবেদন বলছে, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী কোচিং করে। আর কোচিং-প্রাইভেট টিউশন ও গাইড বইয়ের জন্য অভিভাবকদের মাসে ২০০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গবেষণার অন্তর্ভুক্ত বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ নিজ উদ্যোগে কোচিং করে। স্কুলশিক্ষকের কাছে কোচিং বা টিউশন নেয় ২৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী স্কুল থেকে দেওয়া কোচিং নেয়। স্কুল থেকে কোচিংয়ের জন্য গড়ে ৩৬৭ টাকা, নিজ উদ্যোগে করা কোচিংয়ের জন্য ৮৩৪ টাকা, স্কুলশিক্ষকের কাছে কোচিং বা প্রাইভেট টিউশনের জন্য মাসে ৫২১ টাকা ব্যয় করতে হয়।
বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশে দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষায় পাঠদান, শিখন এবং মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় ঘাটতি’ নামে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের দুর্যোগপ্রবণ এলাকা খুলনা ও বাগেরহাট জেলায় পরিচালিত এ গবেষণায় প্রাথমিক শিক্ষায় পাঠদান, শিখন এবং মূল্যায়ন প্রক্রিয়া এবং ঘাটতি বিষয়ে বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে ‘শিক্ষার গুণমান উন্নয়নে জাতীয় নীতি সংলাপ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজনেরা বক্তব্য রাখেন। সভাপতির বক্তব্যে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী বলেন, আমাদের গার্মেন্টসের বেশির ভাগ কারিগরি দায়িত্বে আছে ভারত আর নেপালের লোক। আমাদের দেশের লোকেরা এ ঘাটতি পূরণ করতে পারছে না কেন? এটা আমাদের শিক্ষার দুর্বলতা।
অনুষ্ঠানে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ বলেন, ‘আমরা সামগ্রিকভাবে একটা দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মধ্যে আছি। তিনি বলেন, এর আগের শিক্ষা কারিকুলাম আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আমরা নতুন শিক্ষাকার্যক্রম বাস্তবায়নে চেষ্টা করছি। কিন্তু এক্ষেত্রেও আমরা যদি ব্যর্থ হই, তাহলে আমাদের শিক্ষার্থীদের বড় একটা ক্ষতি হয়ে যায়। সৃজনশীল পদ্ধতি করছিলাম, তা বাদ দিতে ১০ বছর সময় লেগেছে।
গবেষণায় কয়েকটি নীতিসংক্রান্ত সুপারিশ করা হয় যাতে বলা হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্য পদে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়নের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। দুর্যোগপ্রবণ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে উন্নত সড়ক যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থায় মনোযোগ দিতে হবে।