আর কদিন পরই ভোট। শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রচার, চলছে পুরোদমে। নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। দেশের প্রতিটি পাড়া-মহল্লা, অলি-গলিতে এখন নির্বাচনী আমেজ। এবারে নির্বাচনে ৩০০ সংসদীয় আসনে লড়ছেন ২৭টি রাজনৈতিক দলের মোট ১ হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থী। এর একটি বড় অংশ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীকের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ভোটের মাঠে ইতোমধ্যে তারা ‘আওয়ামী স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠে নেমেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের পাশে পাচ্ছেন না রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনুসহ ১৪–দলীয় জোটের শরিক দলের নেতারা। উল্টো আওয়ামী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।
এবারের নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জোটের শরিক তিনটি দলকে মোট ছয়টি আসন ছেড়ে দিয়েছে দলটি। এর মধ্যে জাসদকে কুষ্টিয়া–২, বগুড়া-৪ ও লক্ষ্মীপুর–৪ আসন, ওয়ার্কার্স পার্টিকে বরিশাল-২ ও রাজশাহী-২ আসন এবং জেপিকে পিরোজপুর-২ আসন ছাড়া হয়েছে। এসব আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন শরিক দলগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
এবারে নির্বাচনে ২৬৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। এছাড়া দলটির আরও ২৬৯ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। বিএনপির বর্জনে এবারও যাতে ২০১৪ সালের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অধিকাংশ সংসদ সদস্য জয়ী হতে না পারেন, সে কারণেই এমন কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আর এতেই বিপদে পড়েছেন শরিক দলের নেতারা। তারা চেয়েছিলেন সমঝোতার আসনগুলোতে যেন স্বতন্ত্রদেরও তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ তা করেনি।
জোটের শরিক জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর ও ভেড়ামারা) আসনে। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করা কামারুল আরেফিন। এ দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাদের অধিকাংশই কাজ করছেন কামারুল আরেফিনের পক্ষে। অন্যদিকে হাতেগোনা কজন সমর্থন দিয়েছেন ইনুকে।
আরেক শরীক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন নৌকা নিয়ে নির্বাচন করছেন বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে। তার সঙ্গে এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে আওয়ামী লীগের দুই নেতা বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম এবং উপজেলা কমিটির সদস্য ফাইয়াজুল হক। তারা দুজনই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। বানারীপাড়া-উজিরপুরের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বড় অংশ তাদের জন্যই কাজ করছেন।
একই চিত্র লক্ষ্মীপুর–৪, রাজশাহী-২ ও বগুড়া-৪ আসনেও। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর–৪ আসনে জোটের প্রার্থী জাসদের সহসভাপতি মোশারফ হোসেন। রাজশাহী-২ আসনে জোটের প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। আর বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে জোটের প্রার্থী জাসদের এ কে এম রেজাউল করিম (তানসেন)। এ তিন আসনেও নৌকা প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বরং কিছু ক্ষেত্রে তারা ঘোষণা দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিচ্ছেন।