আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত হচ্ছে। তাই নির্বাচনি পরিবেশটা যাতে সুন্দর থাকে, উত্সবমুখর ও প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ হয়; সেই দিকে সবাই খেয়াল রাখবেন। দলীয় নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, সবাই নির্বাচনি আচারণবিধি মেনে ভোট চাইবেন। জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে। জনগণের রায় মেনে নেবেন। শেখ হাসিনা তার দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনি ইশতেহার নিয়ে দ্বারে দ্বারে গিয়ে জনগণের কাছে নৌকায় ভোট চাওয়ার আহ্বান জানান।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে ছয়টি জেলায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনি জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে পর্যায়ক্রমে ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর ও শেরপুর জেলা, ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী জেলা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের বান্দরবান ও চাঁদপুর জেলায় নির্বাচনি জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবারের মতো এবারও গত ২০ ডিসেম্বর সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত শেষে জনসভার মধ্য দিয়ে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। আজ শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী বরিশাল যাবেন। সেখানে জনসভায় বক্তব্য শেষে বিকাল ৫টায় টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে যাত্রা করবেন। সেখানে রাতযাপন শেষে আগামীকাল শনিবার গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া) আসনে জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। একই দিন মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি। সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন। আগামী ১ জানুয়ারি কলাবাগান মাঠে নির্বাচনি জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। এবারের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ জনসভা হবে আগামী ৪ জানুয়ারি। ঐ দিন নারায়ণগঞ্জ শহরের এ কে এম শামসুজ্জোহা স্টেডিয়ামে নির্বাচনি জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন তিনি।
গতকালের জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, ভোট চাওয়ার অধিকার যেমন প্রার্থীর আছে, তেমনি ভোট দেওয়ার অধিকার জনগণের। এখানে কেউ কারো ওপর কোনো বল প্রয়োগ করার চেষ্টা করবেন না। কোনো সংঘাত সৃষ্টি করবেন না। এখন ডিজিটাল যুগ। সবার হাতেই মোবাইল ফোন রয়েছে, সিসি ক্যামেরা রয়েছে, কাজেই যারাই গোলমাল করবেন, ছবি কিন্তু উঠে আসবে। আর নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হলে কেউ কিন্তু রেহাই পাবে না। এটা মাথায় রাখতে হবে। আর জনগণ ভোট দেবে তাদের সেই ভোট দেওয়ার সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে দিতে হবে এবং যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় সেই ব্যবস্থাটা সবাইকে নিতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নয়, বরং একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। আরেকটা দল হচ্ছে জামায়াত, যুদ্ধাপরাধীর দল। এরা নির্বাচনে না এলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ হবে না—এটা আমরা বিশ্বাস করি না। জনগণের সমাবেশ হলে, ভোটারদের আগমনে এবং ভোটারদের অংশগ্রহণে এখানে নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক—আমরা সেটাই চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গত ১৫ বছরে দেশের যে উন্নয়ন করেছি সেই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে এবং একমাত্র আওয়ামী লীগই পারবে ক্ষমতায় এলে সেই অগ্রযাত্রাটা ধরে রাখতে। সে কারণে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য আপনারা জনগণের দ্বারে দ্বারে যাবেন। আপনারা ভোট চাইবেন। জনগণ ভোট দিয়ে যেন আমাদের সেবা করার সুযোগ দেন। তিনি বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’—এই স্লোগান দিয়েই তো আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে বিএনপির ক্ষমতায় আসার পর আরো এক ধাপ অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। দুর্নীতি, হত্যা, গুম, খুন ধর্ষণ, হামলা, নির্যাতন—এমন কোনো বিষয় নেই যে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন করেনি। এই কারণেই বিএনপিকে ২০০৮ সালে দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করে। আবারও ২০১৩-১৪ সালের মতো বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে নির্বাচন বানচালের নামে। তিনি বলেন, একটি দেশে ক্ষমতার পরিবর্তন হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দেওয়া ইশতেহার নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের পড়ে দেখার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। সেই লক্ষ্য নিয়ে মানুষের কাছে গিয়ে নৌকায় ভোট চাওয়ার নির্দেশনা দেন তিনি।
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে খুঁজলেন শেখ হাসিনা: বিকাল ৫টার দিকে প্রধানমন্ত্রী চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সংযুক্ত হন। জেলার হাসান আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সভায় জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা দাঁড়িয়ে দলীয় প্রধানকে সম্মান জানান। এ সময় শেখ হাসিনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কোথায় জানতে চান তাদের কাছে। তবে অনুষ্ঠিত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন না জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল। জবাবে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপি প্রার্থী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জানান, তারা এখনো পৌঁছাননি সভাস্থলে। এ সময় শেখ হাসিনা আবারও জানতে চান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কোথায়। তখনো উত্তর না দেওয়ায় আবারও একই প্রশ্ন করেন। তখন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া উত্তরে বলেন, ওরা তো এখনো আসে নাই। পরে শেখ হাসিনা দলীয় প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন।