দেশের মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রত্যক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একটি করে স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে।
তবে জনবল সংকটের কারণে এসব কেন্দ্রে যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি দেশের ৫০ জেলার পৌরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেই মেডিকেল অফিসার।
দুটি জেলায় থাকলেও তাদের অন্যত্র চলে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া পাঁচটি উপজেলায় কোনো ধরনের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে না। সরকারের জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে জনগণ কী স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে তা জানতে এ গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণায় নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক আব্দুল হামিদ। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিরডাপ মিলনায়তনে এই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে অধ্যাপক আব্দুল হামিদ জানান, গবেষণাটি করতে দেশের ১২৮টি সংস্থা ও তিন হাজার ৪২০ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৪টি জেলার মধ্যে ১২টি সিটি করপোরেশন এবং ৫২টি জেলা পৌরসভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। তবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি বাদে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই প্রতিষ্ঠানের জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে তেমন কোনো অবদান নেই। অবকাঠামো থাকলেও চরম জনবল সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
পরিসংখ্যান বলছে, ৩২৮টি উপজেলা পৌরসভার মধ্যে পাঁচটি উপজেলা পৌরসভা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে না। এসব উপজেলা পৌরসভার কোনোটিতেই মেডিকেল অফিসার নেই। এমনকি সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিও বাস্তবায়ন হয় না। এসব উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নে স্ট্যান্ডিং কমিটির কোনো সভা হয় না। যদিও নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসে একবার এই সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এসব এলাকায় গরিব, খেটে খাওয়া মানুষ ও ভাসমান জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে (প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টি) তাদের কোনো কার্যক্রম নেই।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, কর্মক্ষেত্রে দায়িত্বরত কর্মচারীরা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত নয়। এই সমস্যা উত্তরণে গবেষণাপত্রে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপারিশে বলা হয়েছে, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিশ্চিত করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ এ পরিস্থিতির পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞরা যুগান্তরকে বলছেন, দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ ও পরিচালনায় সদিচ্ছার অভাবে এমনটা হচ্ছে। ফলে চরম জনবল সংকট নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র। তারা বলছেন, সরকারের সবশেষ জনশুমারি হিসাবে দেশে জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। গত এক দশকে দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে দুই কোটি ১১ লাখ ১৪ হাজার ৯১৯ জন। এমন প্রেক্ষাপটে গবেষণায় উঠা আসা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর রুগ্ণদশা চিকিৎসার আসল চিত্র ফুটে উঠেছে।
ওই গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, দেশে ২০২১ সালে শহুরে জনসংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ৩৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। যা ২০৪০ সালে ৫০ শতাংশের বেশি এবং ২০৫০ সালে ৬০ শতাংশ হবে বলে বিশ্বব্যাংকের অনুমিত হিসাবে বলা হয়েছে। কিন্তু সরকারের জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে শহরাঞ্চলে স্বাস্থ্যের ফলাফল বেশ খারাপ অবস্থানে রয়েছে। যদিও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি কাঠামো নেটওয়ার্ক রয়েছে। এরপরও প্রজনন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি পরিষেবা প্রদানে গ্রামাঞ্চল ও জেলা শহর এলাকা পিছিয়ে রয়েছে।
এখনো ৪২ শতাংশ প্রসব অপ্রাতিষ্ঠানিক হচ্ছে। ইপিআই কভারেজ এবং ভিটামিন এ ক্যাপসুল গ্রহণের ক্ষেত্রে শহরাঞ্চল পিছিয়ে পড়ছে। সিটি করপোরেশনের বস্তি এলাকায় প্রায় ২৮ শতাংশ মা প্রসব পরবর্তী সেবা (এএনসি) পান না। বস্তির পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে অর্ধেকই সেবাবঞ্চিত হচ্ছে। যা সর্বজনীন স্বাস্থ্য অর্জনের জন্য চ্যালেঞ্জ।