ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যুৎকেন্দ্র ভুগলেগিরস্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী।এ ছাড়া দেশটির দক্ষিণের তিনটি অঞ্চলে রাশিয়া ফের ব্যাপক সেনা মোতায়েন করেছে বলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা ওলেক্সি অ্যারিস্তোভিচ জানিয়েছেন।তিনি জানান,দক্ষিণাঞ্চলের মেলিতোপোল,জাপোরিজঝা ও খেরসন অঞ্চলে ফের সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া।তবে এবারের সেনা মোতায়েন আক্রমণাত্মক নয়,প্রতিরক্ষামূলক বলে মনে করছেন তিনি।
এ সময় তিনি সোভিয়েত আমলে নির্মিত দোনেৎস্ক অঞ্চলের কয়লাচালিত ভুগলেগিরস্ক বিদ্যুৎকেন্দ্র বেদখল হওয়ার কথা স্বীকার করেন।ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের মহাসচিব ওলেক্সি দানিলভ জানিয়েছেন, রাশিয়া খেরসনের দিকে যাওয়ার পথগুলোতে সর্বোচ্চসংখ্যক সেনা জমায়েত করেছে। ইউক্রেন খেরসন পুনরুদ্ধার করতে চাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশের পরই এই পদক্ষেপ নিয়েছে মস্কো।যুদ্ধের প্রথম দিকেই রুশ বাহিনীর হাতে দক্ষিণাঞ্চলীয় এই শহরটির পতন হয়েছিল।
তবে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দাবি করেছেন,ইউক্রেনের পাল্টা হামলায় রাশিয়ার দখলে থাকা দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন শহর কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।ইউক্রেনের ওই হামলার কারণে দিনিপার নদীর কাছে অবস্থান নেওয়া কয়েক হাজার রুশ সেনা চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়,দূরপাল্লার কামান ব্যবহার করে ইউক্রেনের সেনারা দিনিপার নদীর অন্তত তিনটি সেতু নষ্ট করেছে।ফলে নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থান নেওয়া রাশিয়ার ৪৯তম সেনাবাহিনীর বহর এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।খেরসনসহ রুশ নিয়ন্ত্রিত আরও কিছু শহর অন্যান্য এলাকা থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বুধবার রাতে এক ভিডিও ভাষণে জেলেনস্কি বলেছেন,ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যে কোনো পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেওয়া হবে।তিনি বলেন,কোনো দখলদার যেন আমাদের ভূখণ্ডে স্থায়ী হতে না পারে,সে জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি আমরা।জেলেনস্কি বলেন,খেরসনের কৌশলগত মূল সেতুতে (আন্তোনোভস্কি সেতু) হামলা চালিয়েছে আমাদের যোদ্ধারা।রাশিয়ার যে কোনো পরিকল্পনা থাকুক না কেন,তা আমরা ব্যাহত করব।আমাদের ভূখণ্ড অবশ্যই মুক্ত করব।মঙ্গলবার রাতে ইউক্রেনের সেনারা আন্তোনোভস্কি সেতুতে ১২ বারের বেশিবার আঘাত করেছে।এতে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।এই সেতু দিয়ে রুশ বাহিনী খেরসনে অস্ত্র-গোলাবারুদ ও সেনা আনা-নেওয়া করত।জেলেনস্কি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন,খেরসনের আন্তোনোভস্কি সেতুর পাশাপাশি অন্যান্য সেতু পুনর্নির্মাণ করা হবে।
এদিকে, ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বুধবার আরও কমিয়েছে রাশিয়া।এতে ইউরোপের দেশগুলোতে লাফিয়ে বাড়ছে গ্যাসের দাম।আসন্ন শীতে গ্যাসের চাহিদা কীভাবে পূরণ হবে,তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ইউরোপের দেশগুলো।সমালোচকরা বলছেন,রাশিয়া তাদের গ্যাসকে ‘রাজনৈতিক অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে।নর্ড স্ট্রিম ১ পাইপলাইন দিয়ে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ করে রাশিয়া।এখন ওই পাইলাইন দিয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে এক-পঞ্চমাংশ কম গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।জার্মানি তাদের মোট গ্যাস আমদানির ৫৫ শতাংশই আনে রাশিয়া থেকে।ওই গ্যাসের বেশিরভাগই আসে নর্ড স্ট্রিম ১ পাইপলাইন দিয়ে।রাশিয়ার জ্বালানি কোম্পানি গ্যাজপ্রম জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে বলেছে,একটি টারবাইনের রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য তারা গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।
তবে জার্মান সরকার একে রুশদের ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে বলেছে,গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার পেছনে যান্ত্রিক কোনো কারণ নেই।চলমান যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও ইউক্রেনে বিয়ের নিবন্ধন বেড়েছে।এএফপি জানিয়েছে,গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রাজধানী কিয়েভে গত পাঁচ মাসে বিয়ে বেড়েছে আটগুণ।যুদ্ধের পাঁচ মাসে কিয়েভে ৯ হাজার ১২০টি বিয়ে নিবন্ধন হয়েছে।অথচ গত বছরের একই সময়ে ১ হাজার ১১০টি বিয়ে নিবন্ধিত হয়েছিল।