শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গত ২২ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের সদ্য বরখাস্ত শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে অভিযান চালায় দেশটির এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ওই দিন সন্ধ্যায় পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে ২১ কোটি ৯০ লাখ রুপি উদ্ধার করা হয়।
পরদিন গ্রেপ্তার করা হয় পার্থ ও অর্পিতাকে। ২৭ জুলাই বেলঘরিয়ায় অর্পিতার আরেকটি ফ্ল্যাটে ফের অভিযান চালানো হয়। উদ্ধার হয় ২৭ কোটি ৯০ লাখ রুপি। সঙ্গে কয়েক কোটি রুপির সোনা। বেশ কিছু সম্পত্তির দলিল, কাগজপত্র। অর্পিতার টালিগঞ্জ এবং বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ কোটি রুপি উদ্ধার হয়েছে। এরপর পার্থের সঙ্গে সখ্যের অভিযোগ আনা হয়েছে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান মোনালিসা দাসের ওপর।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, মোনালিসা এখন আর বাংলা বিভাগের প্রধান নন। তিনি বছর দুয়েক ওই পদে নেই বলেই দাবি কলা বিভাগের ডিনের।
এদিকে পার্থ কেলেঙ্কারিতে অর্পিতা ও মোনালিসাকে নিয়ে পুরো পশ্চিমবঙ্গে তোলপাড় শুরু হয়েছে। যদিও মোনালিসা দাস কোথায় তা বলতে পারছেন না কেউ। পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন মহলের আলোচনায় যে নামগুলো আলোচনায় এসেছে তার মধ্যে অন্যতম মোনালিসা। কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষিকা।
পার্থকে নিজের ‘অভিভাবক’ বলে ব্যাখ্যা করা মোনালিসার কোনও হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ফোন ধরছেন না। হোয়াট্সঅ্যাপে পাঠানো বার্তাও তিনি দেখছেন না। তবে গুঞ্জন উঠেছে, তাকে নাকি ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করছে। কিন্তু তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে আবার তেমন কিছু জানানো হয়নি।
গত শুক্রবার পার্থের বাড়িতে যখন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে, জিজ্ঞাসাবাদ করছে তাকে, তখন ‘খবর’ ছড়িয়ে পড়ে, মোনালিসার শান্তিনিকেতনের একাধিক বাড়িতে ইডি ইতিমধ্যেই তল্লাশি চালিয়েছে। কয়েকটি সূত্রে দাবি করা হচ্ছিল, মোনালিসার উপরেও নাকি ‘নজর’ রেখেছে ইডি। গত এক সপ্তাহ ধরে আলোচনায় এসেছে মোনালিসার শিক্ষকজীবন এবং তার উত্থানের কাহিনি। সব কিছুর সঙ্গেই জড়িয়ে গিয়েছে পার্থের নাম।
প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ‘অনুগ্রহ’তেই নাকি মোনালিসার এই ‘বেড়ে ওঠা’। শুধু তা-ই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পদোন্নতি, মোনালিসার তত্ত্বাবধানে পিএইচডি করা ছাত্রছাত্রীদের ‘সুবিধা’ পাইয়ে দেয়া, তাদের চাকরির ক্ষেত্রেও ‘অনুচিত অগ্রাধিকার’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেখানেও পার্থের নাম জোড়া হয়েছে। অনেকের মতে, পার্থের সঙ্গে নিজের ‘পরিচিতি’-কে ব্যবহার করে মোনালিসা নিজেকে ‘প্রভাবশালী’ করে তুলেছিলেন।
অনেকে বলতে শুরু করেছেন, শান্তিনিকেতনের একাধিক বাড়িতে সপ্তাহান্তে যেতেন পার্থ-মোনালিসা। যদিও এসব অভিযোগ শুনে সপ্তাহখানেক আগে মোনালিসা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, এর পুরোটাই ‘অসত্য’। তাতে জল্পনা থামেনি। বরং তার পদোন্নতি, সম্পত্তি, ছাত্রছাত্রীদের চাকরি পাওয়া, বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক, বিদেশভ্রমণ সব কিছু নিয়ে চুলচেরা আলোচনা চলেছে। সেই আলোচনায় এমন কথাও উঠে এসেছে যে, পার্থের কাছে ‘সুপারিশ’ করেই তিনি এসব ‘বাগিয়েছিলেন’।