সার্জিল খান :-
ধ্বংস হলো বহু গুরুত্বহীন জান, বহু যানবাহন। তবুও শান্তি! শেষ পর্যন্ত সমাপ্ত হলো সাংশনের হুমকিতে থাকা লীগের নির্বাচন।
ভোটার ভোট দিবেন, কর্মীরা রক্ত দিবেন আর নেতারা নেত্রীত্ব দিবেন এটাইতো গনতন্ত্রের পবিত্র বন্ধন! এভাবেই গনতন্ত্র চলে, চলতে হয়।
এই নির্বাচন থেকে ভোটার কি পাবে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না, তবে কর্মীরা এলাকার নিয়ন্ত্রণ আরও ৫বছরের জন্য হাতে পেলো। নেতারা তাদের সোনার ডিম পাড়া হাঁসটা (এখন আর হাঁস নাই এখন উট পাখি) আবার তাদের দখলে রাখলো।
আর যারা ভোট দেয় না, ক্ষমতা কী বোঝে না, দেশ নিয়ে ভাবার সময় করতে পারেনা তাদের দুই বেলা খাওয়ার জন্য সারাক্ষণ দৌড়াতে হয়, হাত দুইটা থামানোর সময় পায় না। তাদের পা চলা বন্ধ হলে এবং হাত থেমে গেলে পেটও থেমে যাবে। তারা এই ভোটের বিলাসীতায় নিজেকে ভাসাতে পারে না তাই নেতাদের কাছে এরা ব্রাত্য! এরা খেলো কি খেলো না, হাসলো কি হাসলো না, এরা ভোট দিলো কি দিলো না, তাদের তাতে কিছু আসে যায় না।
তাইতো শ্রমিকের আয় বাড়ে না, তাদের কষ্ট যায় না। আর যেহেতু তাদের দুঃখ শেষ হয় না সেহেতু তারা সুখের নাগাল পায় না। এতে নেতা বা কর্মীদের দোষ কোথায়! একজন কর্মীর কত কষ্ট করে কর্মী হতে হয়! কত রক্ত দিতে হয়। ঠিক তেমনি একজন নেতাকেও কত ধাপ পেড়িয়ে এই অবস্থানে আসতে হয়, আবার এই অবস্থানে এসে কতগুলো ত্যাগী নেতা-কর্মী সংগ্রহে রাখতে হয়, কত রকম আবদার পূরন করতে হয়। এতো কিছু করে কাঙ্খিত যে হাসের দখল গ্রহন করে তার ভাগ খেটে খাওয়া মানুষগুলোকে দিতে যাবে কেন!
দেশ থাকলে সরকার থাকবে আর গনতন্ত্র থাকলে নির্বাচনও থাকবে, সে নির্বাচনে কে থাকল আর কে থাকল না, তা নিয়ে অধিকাংশ মানুষ এখন আর ভাবে না। কয়েকজন মানুষ ক্ষমতার স্বাদ নিবে তার জন্য কতো আয়োজন! হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে ৩০০ দানব জন্ম দিবে দেশ। তারা নিজেরাও কোটি কোটি টাকা লগ্নি করে যে ক্ষমতা হাতে পায় সে ক্ষমতাতো বিধ্বংসী হবেই। তারা নানা ভাবে লগ্নিকৃত টাকা তুলতে ব্যাস্ত থাকবে, মূনাফা তোলার জন্য সব রকম পন্থা প্রয়োগ করবে সেখানে বহু মানুষের অধীকার পদদলিত হবে, মানুষের জীবনযাপন কঠিণ করতে যা করা দরকার তা সবই তারা করবে।
যাদেরকে এতোকিছু করে সংসদে নিয়ে আসা হয়েছে তাদের কতজন এই কাজের যোগ্য? অধিকাংশ দেখা যাবে সংসদের নিয়মই জানে না, কোন ধারায় কী কথা বলা যায় তা মনে হয় অনেক পুরানো সদস্যও জানে না। তাদের তেমন জানার দরকারও হয় না, কারণ তারাতো আর আইন প্রনয়ণ করে না। আইন করার কষ্টটা প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয় সমাধা করে তাদের টেবিল চাপড়ানোর জন্য সংসদ ফ্লোরে উত্থাপন করা হয় আর সদস্যরা কিছু না বুঝে টেবিল চাপড়েই তাদের কর্ম হালাল করে নেয়।
গণতন্ত্র যদি চালাতেই হয় তবে সংসদে সমাজের সম্মানিত মানুষদের নিয়ে আসা উচিৎ, যারা মানুষের অধীকার সমুন্নত রাখবে, মানুষের জীবন সহজ করার জন্য আইন প্রণয়ন করবে। আর আমাদের সংসদে যারা আছে তারা এখন কী করে? তাদের ভাতা, বেতন, গাড়ি, বাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাট, ব্যবসার পক্ষে বিল পাশ করাতে সচেষ্ট থাকে কিন্তু তাদের প্রধান যে কাজ মানুষের জন্য আইন পাশ করা তার প্রতি কোন আগ্রহ কখনো দেখা যায় না। কারন সংসদ তাদের কাছে সম্মানজনক কোন প্রতিষ্ঠান না এটা তাদের কাছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান! তাদের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয় অধিকাংশ খুব বেশি হলে ইউনিয়নের মেম্বার হওয়ার যোগ্য, তাদের সংসদে এনে সংসদের অপমান করা হচ্ছে।
সংসদ সদস্য হতে হলে আমার মতে যে সব যোগ্যতা থাকা উচিত তার মধ্যে কয়েকটা হলো- কমপক্ষে ১০ বছর রাজনীতি করা, সংসদের সব নিয়ম জানা, সর্বস্থরে সম্মানিত ও কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত না থাকা।
আমরা জানি এই সংসদ এখন আর সম্মানিতদের স্থান না এটা এখন কুরুচিপূর্ণ অভিনেতাদের দ্বারা অভিনিত বিনোদন মঞ্চ হয়ে গিয়েছে।
এখানে এখন সুরহীন গান হয়, প্রতিপক্ষকে গালাগালী দেয়া হয়, মন্দ ইতিহাস চর্চা হয়, অশিক্ষার প্রদর্শন হয়, অনেক সদস্য তার বক্তব্য লিখে এনেও বানান করে করেও পরতে পারে না! এরা নাকি আবার আইনপ্রনেতা(!) এদের জন্য সরকারের তহবিল থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচন করা হয়! আবার নির্বাচিতকে কোটি টাকা ভাতা দেয়া হয়!
যাই হোক, ভিতরে-বাহিরে বহু চাপ সামলে নিয়ে সরকার একটা নির্বাচন শেষ করলো। এই নির্বাচনের পরে সবকিছু আমুল পাল্টে যাবে তা নয়, কিছু মন্ত্রী প্রতিস্থাপিত হয়েছে। পুরনো কেউ বাদ গিয়েছে নতুন অনেকে এসেছে আবার নতুন করে কেউ সরকারে ফিরে আসবে। সরকারের কাঠামো যা ছিলো তাই থাকবে, তা থাকুক।
তবে একটা স্বস্তি আবারও উন্নয়নের স্বপ্ননির্মাতা শেখ হাসিনা সরকার নিয়ন্ত্রণ করবেন, মানুষের স্বপ্ন নির্মান গতিশীল থাকবে।
আমাদের প্রত্যাশা উন্নয়নের যে সংস্কৃতি শুরু হয়েছে সেটা বজায় থাকুক। আমাদের দেশে এখন গনতন্ত্রের থেকেও উন্নয়ন বেশি দরকার। আমরা কে কাকে ভোট দিয়েছি কাকে দিলাম না তা নিয়ে ইতিহাস রচিত হবে না, ইতিহাসে থাকবে আমরা কেমন দিন কাটিয়েছি, সমাজ কেমন ছিলো, সরকার কি কাজ করেছে। সরকার তাই করুক তাদের যা করা উচিত, আমাদের যেন গনতন্ত্রের জন্য হাহাকার করতে না হয়। ওটা বিরোধীরা করুক।