উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে সবার আগে যার নাম আসে তা হলো আমেরিকা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবছর প্রচুর শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে আমেরিকায় আসে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর প্রায় সব দেশ থেকেই আমেরিকায় উচ্চ শিক্ষার জন্য ছাত্র-ছাত্রীরা আসে। উচ্চ শিক্ষা নিয়ে এখানে কিছু কমন প্রশ্ন ও তার উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
উচ্চ শিক্ষা কার জন্য?
অনার্স, মাষ্টার্স, পিএইচডি বা ডক্টরেট ডিগ্রীর জন্য আমেরিকার দরজা সবার জন্য খোলা। কমিউনিটি কলেজে এসোসিয়েট ডিগ্রী বা এক্সচেঞ্জ ভিসায়ও কিছু ছাত্র-ছাত্রী আমেরিকায় আসে। তবে তাদের সংখ্যাটা তুলনামুলক অনেক কম। বাংলাদেশে যারা এইচএসসি বা সমমান পাশ করেছে তারা ব্যাচেলর ডিগ্রীর জন্য আবেদন করতে পারে। অনার্স পাশ করা থাকলে মাস্টার্স বা পিএইচডি তে সরাসরি আবেদন করা যায়।
কখন আবেদন করব?
আমেরিকায় প্রধানত ২টা সেমিষ্টারে সবচেয়ে বেশী ছাত্র-ছাত্রী আবেদন করে। ফল এবং স্প্রিং সেমিষ্টার। কিছু কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় সামারেও ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে এই ফল, স্প্রিং এবং সামার কখন শুরু হয়? ফল সেমিষ্টার: আগষ্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত, স্প্রিং সেমিষ্টার: জানুয়ারী থেকে মে পর্যন্ত, সামার সেমিষ্টার: মে থেকে জুলাই পর্যন্ত। প্রত্যেক সেমিষ্টারের জন্য আবেদনপত্র জমা দেয়ার শেষ সময়সীমা সবসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া থাকে, যেটা সাধারণত সেমিষ্টার শুরুর ৬-৭ মাস আগে হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তজার্তিক অফিস বা অ্যাডমিশন অফিস বরাবর ইমেইল করলে তারা সব ইনফরমেশুন জানিয়ে দেয়। পর্যাপ্ত সময় নিয়ে আবেদন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কিভাবে আবেদন করব?
প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে আবেদন করে সাথে আনুসংগিক কাগজপত্র কুরিয়ার করে পাঠাতে বলা হয়। আবেদন করতে কিছু আবেদন ফি প্রদান করতে হয় যা সাধারনত ২০-১০০ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আবার এই আবেদন ফি মওকুফ করে দেয়।
আবেদন করতে কি কি লাগে?
প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে প্রায় কমন যে ডকুমেন্ট গুলো লাগে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আবেদন প্ত্র, আগের লেখাপড়ার অফিসিয়াল বা নোটার ট্রান্সক্রিপ্ট, SAT স্কোর (অনার্সের জন্য), ইংরেজীর দক্ষতা (IELTS/TOEFL), GRE/GMAT স্কোর, রেকমেন্ডেশন লেটার। করনা মরামারির ভিতর অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কিছু কিছু রিকয়ারমেন্ট শিথিল করেছিল বা এখনো তা কার্যকর আছে। বাংলাদেশের অনেক ছাত্র-ছাত্রী SAT/IELTS/TOEFL/GRE/GMAT স্কোরগুলো ঠিক মত যোগার করতে না পারায় তাদের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন সফল হয় না।
খরচ কেমন?
উচ্চ শিক্ষার সবচেয়ে বড় যে খরচ তা হচ্ছে বাৎসরিক টিউশন ফি। বছরে এই ফি এর পরিমান ১৫ থেকে ৪০ হাজার ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় বা সাবজেক্টে ভিন্নতার জন্য এই ফি কিছু কম-বেশী হতে পারে। বাসস্থান ও অন্যান্য খরচ বাবদ বাৎসরিক প্রায় ১০০০০ থেকে ২৫০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকেশন অনুযায়ী এই ব্যয় কম-বেশী হতে পারে। চিকিৎসা সংক্রান্ত ইন্সুরেন্সের জন্য বাৎসরিক কিছু ব্যয় আছে। যারা রিসার্স বেজড মাস্টার্স বা পিএইচডিতে আসে তারা প্রায় সবাই স্কলারশিপ বা রিসার্স বা টিচিং এসিস্ট্যান্ট হিসাবে প্রফেসরের সাথে কাজ করে এই ব্যয় মেটাতে পারে। কিন্তু অনার্সের জন্য এই সুযোগ নেই বললেই চলে। তাদের সবাইকে প্রায় নিজের টাকায় এই ব্যয় গুলো মেটাতে হয়।
ভিসা পাবার সম্ভবনা কতটুকু?
যদি কোন বিশ্ববিদ্যালয় এডমিশন কনফার্ম করে, পরের ধাপ হলো ভিসার জন্য ঢাকাস্থ আমেরিকা এম্বাসিতে আবেদন করা। নিজে নিজেকে কয়েকটি প্রশ্ন করে কেউ ভিসা পাবে কি পাবে না তা টেষ্ট করে নিতে পারে। যেমনঃ
- আপনি কি আমেরিকায় সত্যিই পড়াশোনা করতে চান?
- আপনি কি আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছরের টিউশন ফি দিতে সক্ষম? বিশেষ করে যারা অনার্সের প্রগ্রামে আসবে বা সেলফ ফান্ডে পড়তে আসবে।
- পড়াশুনা করে কি দেশে ব্যাক করবে কিনা?
এই সকল প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যা-বাচক হয়, ধরে নেয়া যায় তার ভিসা হবার সম্ভবনা বেশি।
কাজ করার সুযোগ আছে কি?
অনেকে যে প্রশ্ন সবচেয়ে বেশি করে বা গুগোল সার্চ করে তা হলো লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ করার সুযোগ আছে কিনা? থাকলে তা দিয়ে নিজের ব্যয় মেটানো সম্ভব কিনা? হ্যা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভিতর কাজ করার সুযোগ আছে। অনার্স ছাত্র-ছাত্রীদের সপ্তাহে ১০ ঘন্টা, মাস্টার্স বা পিএইচডি ছাত্র-ছাত্রীদের সপ্তাহে ২০ ঘন্টা করে। যে টাকা পাওয়া যায় তা দিয়ে নিজের সব খরচ মেটানো অনেকটা অসম্ভব। যদিও রিসার্স বেজড প্রগ্রামে মাস্টার্স বা পিএইচডি ছাত্র-ছাত্রী ফান্ড ম্যানেজ করেই আসে, যা দিয়ে তাদের দৈনন্দিন খরচ মেটানো সম্ভব।
অতিরিক্ত কিছু কথা।
- আমেরিকায় স্টুডেন্ট ভিসায় গিয়ে অবৈধ হয়ে গেলে দেশে ফেরত যাওয়া অনেক সমস্যা। আবার ফিরত গেলে আমেরিকার দরজা তার জন্য চিরতরে বন্ধ।
- আর্থিক সাপোর্ট না পেলে ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা প্রায় অসম্ভর, বিশেষ করে যারা অনার্স প্রগ্রামে আসবে।