পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার গাগড়াখালি-সোনাতলা বাইপাস সড়কের উন্নয়ন কাজ এক বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় চার বছরেও শেষ হয়নি। এতে কয়েক গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ চরমে।
গত ২০১৯ সালের জুলাই মাসে সড়কের কাজ শুরু হয়ে পরের বছর (২০২০ সাল) জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কাজের মেয়াদ তৃতীয়বারের মতো বাড়ানো হলেও প্রায় চার বছরেও কাজ শেষ হয়নি। মোট আট কিলোমিটার সড়কের চার কিলোমিটার (অর্ধেক কাজ) হওয়ার পর সড়কের ভূমি অধিগ্রহণসংক্রান্ত জটিলতা ও জমি নিয়ে মামলার কারণে প্রায় দুই বছর ধরে কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে।
অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় সড়কটি পড়ে থাকায় এলাকাবাসীর চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অপরদিকে পাটগাড়ি গ্রামে সড়ক ছাড়াই কালভার্ট নির্মাণ করে ফেলে রাখা হয়েছে। সংযোগ সড়ক না থাকায় সেটাও কোন কাজে আসছেনা।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) পাবনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়,২০১৯ সালের ২৪ জুলাই ভ‚মি অধিগ্রহণ ছাড়াই গাগড়াখালি-সোনাতলা বাইপাস সড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ সড়কের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২৩ কোটি টাকা। সড়ক নির্মাণের কাজ পায় ঢাকার এমএম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজ পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি আগের অপ্রশস্থ সড়কের পাশে মাটি ফেলাসহ কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু করে। কিছু অংশ পাকা করার পাশাপাশি সড়কের বর্ধিত অংশেরও কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু সড়কের বর্ধিত ও প্রশস্থ অংশের বেশির ভাগই ব্যক্তি মালিকানাধীন হওয়ায় জমির মালিকেরা ক্ষতিপূরণের দাবিতে সড়কের কাজে বাঁধা দেন। জমির মালিকেরা একজোট হয়ে ক্ষতিপূরণের দাবিতে আদালতে মামলা করেন। এর ফলে সব মিলিয়ে সড়ক নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
সড়ক সংলগ্ন জমির মালিক তেঘড়ি গ্রামের সৈয়দ গোলাম মওলা,গোলাম রসুল,গোলাম কিবরিয়া,গোলাম মোস্তফা,আব্দুল সাত্তার,আব্দুল ওহাব,আব্দুল বারি,আব্দুল বাছেদ,জাহাঙ্গীর হোসেন,আলমগীর হোসেন ও রিজিয়া খাতুন প্রমুখ জানান, আমরা ২৭ আগষ্ট ২০১৯ সালে জমির ক্ষতিপূরণ চেয়ে পাবনা আদালতে মামলা করেছি। এখন রায়ের অপেক্ষায় আছি। তবে ক্ষতিপূরণ পেলে মামলা তুলে নেব।
এছাড়া মামলার বাদী ফেঁচুয়ান গ্রামের মকবুল হোসেন,সুজন হোসেন,বদিউজ্জামান ও আজিজ খাঁ জানান, এই গ্রামের ওপর দিয়ে যাওয়া সড়কের পুরো অংশই ব্যক্তি মালিকানাধীন। জমির মালিকেরা সবাই সড়কের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। এ ক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তা না করে জোর করে সড়কের কাজ শুরু করায় তারা মামলা করেছেন। পাটগাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক ছাড়াই কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এই কালভার্টের দুই পাশে মাটি ফেলে সড়ক নির্মাণের কথা থাকলেও সেটা করা হয়নি। ওই এলাকাতেও ক্ষতিপূরণের দাবিতে জমির মালিকেরা মামলা করায় সেখানেও সড়কের কাজ বন্ধ রয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, প্রায় ২ বছর ধরে সড়ক নির্মাণের কাজ বন্ধ থাকায় এটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অল্প কিছু অংশ পাকা হলেও বেশিরভাগ অংশ নির্মাণজনিত ভাঙাচোরায় এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। এর ফলে আগে রিকশা,ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন যাতায়াত করতে পারলেও এখন সেগুলোও ঠিকমতো চলতে পারে না। এমনকি প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। সম্প্রতি ফেঁচুয়ান গ্রামের অটোরিক্সা চালক দায়েন সরদার(৩৫) দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন।
পাটগাড়ি গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন,‘এই সড়ক নিয়ে অনেক বেশি স্বপ্ন দেখেছি আমরা। কিন্ত সে স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিনত হয়েছে। আগে মাটির সড়ক থাকায় কোনমতে হাঁটাচলা যেত। এখন খোঁড়াখুড়ি করায় ও মাঝখানে কালভার্ট তৈরি করে রাখায় চলাচল করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃষ্টি হলে এ পথে যাতায়াতের কোন উপায় থাকে না।
একই গ্রামের কৃষক হালিম বলেন,‘ জমি থেকে ফসল কেটে অনেক কষ্ট করে মাথায় করে ঘরে তুলি। রাস্তা না থাকায় সেতুর নিচ দিয়ে কষ্ট করে চলাচল করতে হয়।’
পাটগাড়ি গ্রামের স্কুল শিক্ষার্থী মুন্না ও লিমু জানায়,‘রাস্তা না থাকায় আমরা এই সেতুতে উঠতে পারিনা, অনেকটা ঘুরে স্কুলে যেতে হয়।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপক প্রল্লাদ কুমার বলেন,ভ‚মি অধিগ্রহণ জটিলতা এবং জমি নিয়ে মামলার কারণে কাজ করার সময় পেরিয়ে যাওয়ায় আমাদের সাথে কাজের চুক্তি বাতিল হয়েছে।
পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের(সওজের)নির্বাহী প্রকৌশলী মনসুর আহমেদ বলেন,ভ‚মি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ ১৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ওই টাকা দিয়ে কিছু জমি অধিগ্রহণ করেছেন। বাকি অংশ অধিগ্রণের প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া ভূমি মালিকদের ক্ষতিপূরণ চেয়ে দায়ের করা মামলা নিয়েও জটিলতা রয়েছে। ঠিকাদারের কাজের সময়সীমা শেষ হওয়ায় তাদের সাথে চুক্তি বাতিল হয়েছে। এসব কারণে সড়কটির কাজ বন্ধ আছে। ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হলে নতুন করে প্রস্তাবনা পাঠাতে হবে। অনুমোদন হলে দরপত্র আহবান করে নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সড়কটির কাজ শুরু করা হবে।