দিন যায় দিন আসে, মাস যায় মাস আসে, বছর যায় বছর আসে কিন্তু নিয়মের বেড়াজালে আমরা একই স্থানে স্থির থাকি। আমরা শরীরচর্চা শিক্ষক হিসেবে কলেজে নিয়োগপ্রাপ্ত। আমাদের পদবি শিক্ষক। শিক্ষক পদে নিয়োগ, শিক্ষক পদে কর্মরত আবার শিক্ষক পদেই চাকরি থেকে অবসর, যা আমাদের প্রতি চরম অবহেলা এবং অবিচার। এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনকও বটে। একই যোগ্যতা নিয়ে যারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেন তারা পদোন্নতির মাধ্যমে সহকারী প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য পদে পদোন্নতির সুযোগ পান কিন্তু আমরা যারা কলেজে শরীরচর্চা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাই, তাদের পদোন্নতির কোনো সুযোগ নেই। যে পদে নিয়োগ সেই পদেই অবসর। কলেজ শরীরচর্চা শিক্ষকদের বেলাতেও পোগনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) জমা নেওয়া হয় কিন্তু এই পোগনীয় প্রতিবেদনের (এসিআর) সুফল থেকে কলেজ শরীরচর্চা শিক্ষকরা বঞ্চিত্ এস যত বিপত্তি আমাদের বেলায়।
শারীরিক ও মানসিক সুস্থ জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষা ও খেলাধুলা এবং ক্রীড়া শিক্ষকদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি জাতীয় অনুষ্ঠানে একজন ক্রীড়া শিক্ষক অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আমাদের শিশুদের এবং জাতির জন্য স্কুল, কলেজগুলোতে শারীরিক শিক্ষা অধিক প্রয়োজন। দীর্ঘস্থায়ী সুখী জীবনের মূল চাবিকাঠি হলো শারীরিক শিক্ষা ও খেলাধুলা। শারীরিক শিক্ষা এবং খেলাধুলা প্রাতিষ্ঠানিক শ্রেণির সঙ্গে সমান অবস্থায় থাকা উচিত। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ জাতি গঠনে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ-সবল যুবসমাজ প্রয়োজন। যেসব গুণ থাকলে দেশের প্রত্যেক নাগরিক সুবুদ্ধিসম্পন্ন হয় ও নিছক ভাবাবেগ পরিহার করতে পারে এবং সুস্থ-সবল ও দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন নাগরিক হয়ে গড়ে ওঠে; শারীরিক শিক্ষা মানুষকে এ গুণগুলো অর্জনে সহায়তা করে। সময়ের দাবির সঙ্গে আমাদেরও দাবি শারীরিক শিক্ষা ও খেলাধুলাকে পূর্ণাঙ্গ বিষয় হিসেবে চালু করে এ বিষয়ের শিক্ষকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করুন। এতে শিক্ষকরা যেমন সম্মানিত হবেন; তেমনি জাতিও শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে বেড়ে উঠবে। আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে বিপিএড, সম্মান এবং মাস্টার্স কোর্স চালু থাকলেও স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ে শারীরিক শিক্ষা ও খেলাধুলা বিষয়টি এখনো অবহেলিত, উপেক্ষিত। আমরা জানি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পুরো পরিবার খেলাধুলাপ্রিয়, খেলাধুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং পৃষ্ঠপোষক করা একটি পরিবার। বর্তমান সময়ে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাও খেলাধুলাকে প্রচন্ড ভালোবাসেন এবং খেলাধুলাকে সর্বাধিক গুরুত্ব ও সহযোগিতা করেন। তার সময়ই খেলাধুলার সর্বাধিক বিকাশ লাভ করে। আর ঠিক এই সময়েই শারীরিক শিক্ষা এবং খেলাধুলা স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে অবহেলিত থাকবে, উপেক্ষিত থাকবে এটা সত্যিই আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য।
আমরা দেখি, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই সুস্থ জাতি গঠনের লক্ষ্যে শারীরিক শিক্ষা এবং খেলাধুলাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলকভাবে চালু রাখা হয়েছে। কলেজ পর্যায়ে একজন ক্রীড়া শিক্ষক কলেজের প্রশাসনিক কার্যক্রম, শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা রক্ষায় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। একজন শরীরচর্চার শিক্ষক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থীর কাছে তিনি অতিপরিচিত, সদালাপী এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন বন্ধুরূপী শিক্ষক। শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যক্তিগত অনেক সুবিধা-অসুবিধার কথা নির্ভয়ে তুলে ধরতে পারে, যা অন্যান্য শিক্ষকের কাছে অকপটে বলতে দ্বিধাবোধ করে। আর আমরা সেই শরীরচর্চা শিক্ষকরা এতটাই হতভাগা যে, আমাদের হাহাকার, আমাদের আর্তনাদ কেউ শোনে না। কেউ বোঝে না আমাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ। অন্যদের পদোন্নতির সুযোগ থাকলেও আমাদের পদোন্নতির কোনো সুযোগ নেই। আমরা পদবঞ্চিত থেকেই অবসরে যাই।
তাই প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, আমাদের হাহাকার, আমাদের আর্তনাদ, আমাদের চিৎকার শুনুন এবং লাঘবে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। এতে দেশ, জাতি সবারই মঙ্গল হবে বলে বিশ্বাস করি।