যুদ্ধ করে রাজাকার ও হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করলেও নিজের নামটি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় লেখাতে পারেননি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের উজান খানমামুদপুর গ্রামের মোঃ হাফিজুর রহমান চাঁদু। জীবনবাজি রেখে তিনি অংশ নেন পাবনা জেলাসহ সাঁথিয়া উপজেলার কয়েকটি অভিযানে।
মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি স্বরূপ সকল সনদ থাকলেও স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও তা গেজেটভুক্ত হয়নি। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরতে ঘুরতে আজ তিনি ক্লান্ত। নানা অসুখ ভর করেছে শরীরে। আপিল করেও হয়নি কোন সুরাহা। সরকার প্রদত্ত ভাতা নয়, তার শেষ চাওয়া, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি। অন্তত মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নিজের নামটি লেখা দেখে মরতে চান রণাঙ্গনের এই সম্মুখযোদ্ধা।
জানা যায়, পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের উজান খানমামুদপুর গ্রামের মৃত কলিমুদ্দিন শেখের ছোট ছেলে হাফিজুর রহমান চাঁদু। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে চাঁদু কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমি একজন অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধা। আমি কতো জায়গায় যুদ্ধ করেছি। আমি সম্মুখযুদ্ধ করেছি নন্দনপুরপুর, নাগডেমড়া, ডেমড়া কাইল্যান। আমার সাথে যুদ্ধ করেছে আনোয়ারুল, খালেক, বিজয়। সবাই যুদ্ধ করে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পায় আমি কেন পাই না? আমি ধুলাউড়িতে একবার পাকিস্থানিদের হাতে ধরা পড়েছিলাম। পরে সুযোগ পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে বেঁচে ছিলাম। আমার সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধারা তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা হয়ে সরকারের প্রদত্ত নানা সুবিধা ভোগ করছেন। তাদের ছেলেমেয়েরা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাচ্ছে। অথচ আমি আর্থিক অনটনে পড়ে নিঃস্ব অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছি। আমি আপিল করেছি কিন্তু সেই আপিলে কেনো আমাকে ডাকা হয় না? বয়স হয়েছে যেকোনো দিন মারা যাবো। সরকারের কাছে আবেদন মরার আগে অন্তত মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নিজের নামটি দেখে যেতে চাই।
উজান খানমামুদপুরের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম জানান, হাফিজুর রহমান চাঁদু আমার চাচা। তিনি ৭১ সালে যখন মুক্তিযোদ্ধা হন তখন আমি ৭ বছরের বালক। তখন আমি দেখেছি হাফিজ চাচা অস্ত্র হাতে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে করে আমাদের বাড়িতে আসছে। তাদের সাথে বিভিন্ন জায়গা গেছে যুদ্ধ করতে। তার সাথে যারা যুদ্ধ করেছে তারা সবাই ভাতা পাচ্ছে। অথচ আমার চাচা আজও মুক্তিযোদ্ধার গেজেটভুক্ত হলো না।
সাঁথিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ বলেন, যেহেতেু তিনি (হাফিজুর) সকল সনদ নিয়ে আপিল করেছেন। এখানে আমার কোন কিছু বলার নেই। আদালত যেটা করবে সেটাই।
মুক্তিযোদ্ধা হাফিজুর রহমানের সাথে যুদ্ধ করেছেন ধোপাদহ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল ইসলাম। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, হাফিজুর রহমান চাঁদু একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। হাফিজুর যেন গেজেটভুক্ত হয় এ জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও সরকারের কাছে আমার দাবী। ধোপাদহ গ্রামের অপর বীর মুক্তিযোদ্ধা বিজয় কুমারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি হাফিজুর রহামান চাঁদুর বিষয়ে বলেন, সে একজন আমাদের রণাঙ্গনের সাথী। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা গেজেটপ্রাপ্ত হলো অথচ চাঁদু হলো না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতি আবেদন থাকবে হাফিজুর রহমান চাঁদু যেন গেজেটভুক্ত হয়।