বেনজীর অবৈধ পথে বিপুল পরিমান সম্পদের মালিক হয়েছে, এটা পত্রিকাতে প্রকাশ হওয়াতে আমরা এখন সবাই জানি। কিন্তু আগে আমরা জানতাম না?
জানতাম, কিন্তু বলতে পারিনি। সম্পাদকদের সম্পাদক জনাব মাহফুজ আহমদ তার পত্রিকাতে স্লোগান দিয়েছে ‘সাহসিকতা, সততা ও সাংবাদিকতা’। এর একটাও তিনি বেনজীরের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলেন না। কেন? ভয়ে?
কীসের ভয়ে, কাকে ভয় পেয়েছেন এতো বড় একজন সাংবাদিক? বেনজীর? নাকি সরকারের ভয়ে তিনি বেনজীরের লাগামহীন অপরাধের কথা চেপে গেলেন? এ প্রশ্ন তার জন্য রাখা থাকলো, আমরা বেনজীরের দিকে ফোকাস করি।
আমাদের সরকারগুলো সব সময় বলে তারা জনগনের সেবক আর সরকারী প্রতিষ্ঠাণে চাকরিজীবিরা প্রজাতন্ত্রের চাকর(!) আসলেই কি তাই? জনগনের সেবা করেছে এমন সরকার কী কেউ কখনও কোথাও দেখেছে? আর প্রজাতন্ত্রের চাকর হয়ে গিয়েছে শাসক। এদিকে আমরা জনতা থেকে হয়ে গিয়েছি আম-জনতা।
গোপালগঞ্জ পরিচয়ের কারণে বিএনপির সময় চাপে থাকা বেনজীর আওয়ামী-লীগ ক্ষমতায় এলে পেখম মেলে ধরেছে সরকারের দিকে, সরকারও সেই পেখমে মুগ্ধ হয়ে দুই হাত ভরে দিয়েছে বেনজীরকে।
প্রমোশনতো সবাই পায়, কিন্তু সবগুলো লোভোনীয় পদ একজন নিম্ন মানের মধাবীকে দেয়া কেন? এতে মেধাবী অফিসাররা হতাশায় ভোগেন ফলে সেবার মানও কমে। এই পদের শক্তিতেই শক্তিমান হয়ে সরকারী কাজের থেকে কালো টাকার পিছনেই সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে পুরানের কশ্যপ পত্নী দিতির সন্তান অসুর শিরোমণি ‘বেনজীর’। চাকরিজীবনের ৩৪ বছরে বেতন পেয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা, অথচ চাকরির শেষ ৭-৮ বছরে সে প্রায় হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হলো কী ভাবে? সরকার এসব দেখেনি!
আমরা বছরে ৫লাখ টাকা আয় করলেই সরকার নানা রকম তথ্য চেয়ে প্রায় পাগল করে দেয়, আর বেনজীররা বাধাহীন ভাবে এতো টাকার মালিক হয়ে গেলো আর সরকার তা জানে না? এটা আমাদের বিশ্বাস করতে বলে! আমরা জানি বেনজীর সরকারের অংশ ছিলো আর এই অবৈধ টাকার কত বড় একটা অংশ সে তার সাঙ্গ-পাঙ্গ ও সরকারকে দিয়ে নিজের অংশ রক্ষা করেছে তা আমরা বুঝি, কিন্তু মাহফুজ সাহেবের মত চেপে আছি।
অনেক আগে একটা গল্প শুনেছিলাম এক বড় ভাইয়ের কাছে। এক স্মাগলার ভারত থেকে বড় এক চালানে কয়েক কোটি টাকার পণ্য পাচার করেছে, তা রক্ষার জন্য কিছু পণ্য অন্যদিক থেকে পাঠিয়ে স্থানীয় থানায় সে খবর নিজের লোক দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে। ফলে পূর্ণশক্তিতে গিয়ে পুলিশ সেই চালান আটক করেছে, এ দিকে তার কোটি টাকার পণ্য নিরাপদে গোডাউনে চলে গেলো। সরকারের তেমন ট্রাপে বেনজীর আটকে গিয়েছেনাতো আবার?
মানুষ বলে, শুধু বেনজীর না জনগনের সেবক ও প্রজাতন্ত্রের প্রতিটা চাকরই একেকটা রাক্ষস! এদেরকে দিয়ে বিনা টাকায় কোন কাজ করান যায় না, আর পুলিশতো বিনা অপরাধেই যখন তখন যাকে তাকে ধরে নিয়ে মোটা অংকের টাকা দিতে বাধ্য করে, আর বেনজীরতো তাদের কর্তা ছিলো, সে কালো টাকার ভাগ পাবে না তা হয়নাকি? তারতো সিমাহীন সম্পদ থাকবেই! সে যদি ১০ হাজার কোটি টাকার মালিকও হয় তাতেও আমি অবাক হব না।
চাকরিজীবিরা কোন প্রতিশ্রুতি না দিয়ে কাজে নিয়োগ পেলেও তাদের কিছু নিয়ম মেনে চলার বাধ্যবাদকতা আছে, তাদের তা থেকে বিচ্ছুতি দেখার দায়ীত্ব সরকারের। কারণ তারা অনেক রকম প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতা হাতে পায়, তাই তাদের জনগনের কাছে জবাবদীহি করার বাধ্যবাদকতাও আছে, যদি তারা সত্যিকারের জনগনের সরকার হয়ে থাকে! কিন্তু আমাদের মত দেশগুলোর সরকার কখনও তেমন সরকার হতে চায় না। এটাই আমাদের নিয়তি।
পুলিশের কাজ রাষ্ট্রের আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষা করা, দেশের সম্পদ রক্ষা করা। আইন নিয়ন্ত্রণ ও সম্পদ অর্জন করা না। কিন্তু আমাদের পুলিশ তাই করে যা তাদের করার ক্ষমতাই নাই এবং সেইসব কাজ করে না যা তাদের করার কথা।
পুলিশ বাহিনি যে উদ্দেশ্যে নিয়োগ দেয়া হয় সে কাজ করতে তাদের খুব কমই দেখা যায়। তারা এই চাকরিটা ইনভেস্ট (ঘুষ না দিয়ে চাকরি হয় না) মনে করে। যার ফলে চাকরিটা তাদের কাছে হয়ে যায় ব্যবসা, আর ব্যবসার মূনাফারতো কোন সীমা থাকে না। প্রজাতন্ত্রের চাকরদের এই মনভাব পাল্টানো দরকার, আর তা পাল্টানোর জন্য প্রধান নিয়ন্ত্রক হওয়ার কথা রাজনীতিকে, কিন্তু সমস্যা হলো এই দেশে তেমন রাজনীতি নাই। তাই জনগন তাদের অধিকার ঠিকমত বুঝে পাচ্ছে না।
রাজনীতিকরা ক্ষমতায় থাকতে প্রজাতন্ত্রের সদস্যদের কোন অপকর্মে বাধা দেয়ার কথা চিন্তাই করে না, অধিকন্তু তাদের সে অপকর্মের সুবিধা ভোগ করে। সেই কর্মচারি চাকরি থেকে চলে যাওয়ার পরে তাদের অপকর্ম প্রকাশ পেলে সেই সরকার তাদের দায় আর স্বীকার করেনা, যা বেনজীরের ক্ষেত্রেও ঘটেছে। হয়তো আজিজের সাথেও তাই হবে।
সরকার যদি মানুষের জন্য সততার সাথে কাজ করতো তবে আর এই হায়নাগুলোকে (হায়না অন্যের খাবার খেয়েই বাঁচে) পূষতে হতো না। বাংলাদেশে এমন কোন অপরাধ নাই যা এই হায়নারা করে না।
দেশের সকল সরকারী অফিস হায়নামুক্ত হোক। বাংলাদেশ হায়নামুক্ত হোক।