দেশ অপশাসনের অন্ধকারে নিমজ্জিত হলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন বাধাগ্রস্থ হয়, কোন সেক্টরই ঠিক মত কাজ করে না। কারো জীবন পথ হারায় আবার অনেকের জীবন থমকে যায়, সেখান থেকে মুক্তির জন্য মানুষ জীবন বাজি ধরতেও পিছপা হয় না। আর এমন আধার থেকে মুক্তি পেতে দরকার হয় সর্বগ্রাসী বিপ্লব।
কোন সমাজ বা দেশ যখন পালটে যায় তখন সেখানে একদন তার সুফল ভোগ করে, আর একদল নিজেদের এক কঠিণ পরিস্থিতির মধ্যে দেখতে পায়। ২য় দলের মানুষরা তাদের দুর্দিন থেকে বের হওয়ার জন্য তাদের পক্ষে প্রতি বিপ্লবের জন্য অপেক্ষা করে।
আওয়ামী-লীগের দীর্ঘ শাসন যারা পছন্দ করতে পারেননি তারা একটা বিপ্লব করেছে, তাদের সমমনা যারা ছিল তারা এর পক্ষে কথা বলেছে ও রাস্থায় তাদের সহায়তা করেছে। তারা এখন জয়ী, এর ফলে তারা সবাই সরাসরি রাষ্ট্র ক্ষমতা না পেলেও এই জয়ের কিছুটা ফল ভোগ করছে। রাস্তায় বা সরকারে তাদের কোন প্রতিপক্ষ নাই, পরাজিত সরকারের সাথে যারা ছিল তারা এখন হয় মার খাচ্ছে বা আত্মগোপনে চলে গিয়েছে। তারা মাঠে এখন আর শক্তিশালী প্রতিরোধে যেতে পারছে না।
ব্যাপক ধ্বংসাত্মক পর্বে যেহেতু পুলিশ নজিরবিহিন মাত্রায় মার খেয়ে কর্মবিরতিতে গিয়েছিলো তাই আন্দোলনকারী ছাত্ররা ট্রাফিকের দায়িত্ব নিজেদের হাতে নিয়েছে। প্রথম দিকে অনেকেই তাদের এই কাজের জন্য প্রশংসা করেছে, কিন্তু এর মাধ্যমে তারা আবার দানবীয় চরিত্রে চলে গেলো।
বঙ্গবন্ধুকে নির্মম ভাবে হত্যার পরে সেনারা যে অপমান করেছিলো, এখন আবার তার শেষ স্মৃতি পুড়িয়ে তাকে চুড়ান্ত অপমান করা হয়েছে। সরকার শোকদিবসের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তার অবদানকে অস্বীকার করতে চায়? বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সরকারের কোন অনুভুতি নাই, থাকতে নাও পারে কিন্তু যাদের মন-প্রাণ জুড়ে বঙ্গবন্ধু, তাদের সে অনুভুতিতে বাধা দেয়া হলো কেন? যারা ১৫ আগষ্ট ৩২ নাম্বারে গেল তাদের উপর হামলা হতে দিলো কেন সরকার?
সরকার বলবে তারা এমন হামলা অনুমোধন করে না, কিন্তু হামলা হয়েছে সেতো মিথ্যা না। সরকার যারা চালায় তারা অপরাধ করেই, এটা সরকারের সিস্টেমের সাথে এখন মিশে গিয়েছে। হাসিনা অনেক অপরাধ করেছে, তার থেকেও বেশি করেছে তার চারিপাশে যারা ছিলো, কিন্তু সে তা প্রতিরোধ করেনি সেটাও অপরাধ। এর শাস্তি সে পেয়েছে, কিন্তু তার অপরাধের দায় বঙ্গবন্ধু শোধ করবেন কেন? নাকি যারা বঙ্গবন্ধুকে ধ্বংস করতে চায়, তার অর্জন অস্বীকার করতে চাওয়া দুষ্কৃতিকারিদের এজেণ্ডা এগিয়ে নিতে চাচ্ছে নোবেল সরকার?
মুজিব ভক্তদের কাছে ১৫ আগষ্ট একটা আবেগ, একটা স্বপ্ন। এর অনুভূতির উপরে আঘাত এলে তারাতো বিদ্রোহী হবে সেটাতো জানা কথা, তবে তারা সেখানে আঘাত দিতে গেল কেন, বুঝতে পারছি না। হাসিনার থেকে প্রাপ্ত আঘাতে তারা একত্র হয়ে যেমন বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছিলো তারা কি মনে করে এমন আন্দোলন আর কারো পক্ষে সম্ভব না? এটা ভাবা কী ঠিক হচ্ছে তাদের? পতিত সরকারের বিচার যদি করতেই হয় তা আদালতের উপর ছেড়ে দেয়া উচিত। সরকারের হাতে কী বিচারের ক্ষমতা আছে? তারা যদি মনে করে তাদের সে ক্ষমতা নাই তবে আদালতের কাজ নিয়ে তাদের কথা বলা বন্ধ করে নিজেদের কাজ নিয়ে থাকলে দেশের উপকার হয়।
সরকার রুটিন ওয়ার্ক করে যাচ্ছে, কিন্তু এখনতো শুধু রুটিন ওয়ার্ক করলে চলবে না। দেশ এখন একটা জরুরী অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাই এখন অগ্রাধীকার ভিত্তিতে কিছু জরুরী পদক্ষেপের দরকার ছিলো। কিন্তু সরকারের সে সব ক্ষেত্রে তেমন কোন পদক্ষেপ এখনও দৃশ্যমান হচ্ছে না। রাস্তায় ছাত্র নামধারী কিছু দুষ্কৃতিকারী মানুষজনের স্বাভাবিক জীবনজাপনে বাধা দিচ্ছে, কোথায় কেন যাচ্ছে সে বিষয়ে তাদের কাছে জবাবদিহী করতে হচ্ছে, এটা কী হওয়ার কথা ছিলো? এটা কেন হলো সে নিয়ে সরকারের কোন কথা নাই, এর প্রতিকার নিয়েও তাদের কোন নির্দেশনা নাই, কেন এমন হলো?
বিপরিত মতামতকে সম্মান না করা থেকেই স্বৈরাচারির জন্ম হয়, খালেদা এবং হাসিনা বিরুদ্ধ মত পছন্দ করেন না। কিন্তু ভাংচুরের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষায় যে সরকার ফর্ম করেছে তাদেরতো বিরুদ্ধ মত আটকানোর কথা না, তারা কেন বিরোধীদের উপর হামলা করছে? তবে কী ধরে নিব তারা মাঠে থাকা রাজনৈতিক দলের এজেণ্ডা বাস্তবায়ন করছে? কুকুর কামড় দিলেও নাকি ভদ্রলোকদের পক্ষে কুকুরকে কামড় দেয়া ঠিক না, তবে ভদ্রলোকদের সরকার কেন প্রতিহিংসা লালন করছেন?
রাস্তা থেকে এখনই ছাত্রদের তুলে নিয়ে সরকারের কাজ সরকার করুক, দেশে অনেক সমস্যা রয়ে গিয়েছে সে থেকে দেশকে উদ্ধার করার দায়তো এখন তাদের। রাষ্ট্রের আইন ছাত্ররা নিয়ন্ত্রণ করলে তার ফল কখনো সুখকর হবে না, এখন এমন হচ্ছে বলেই দুষ্কৃতকারীরা এই সুযোগে তাদের এজেণ্ডা বাস্তবায়ন করছে। এখন যা ঘটছে আমরা এর দায় সরকারকেই দিব, কারণ দেশের নিরাপত্তাতো সরকারেরই দেখার কথা। দেশের সার্বিক নিরাপত্তা না দিতে পারলেতো তাদের যোগতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিবে।
সরকারের বাইরের কোন সংঘঠনের কথায় যদি সরকার চালিত হয় তবেতো তাদের আর এই পদে থাকার কোন দরকার দেখছি না। এই নৈরাজ্য এখনই বন্ধ করার পদক্ষেপ নিতে হবে, না হলে খুব দেরি হয়ে যাবে। তখন আর এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।