গণতান্ত্রীক বাংলাদেশ দেখল এক ভাঙচুরের উৎসব! আন্দোলনের নামে এমন অরাজকতা কারও কাম্য না। এমন কাজের নিন্দা জানানো সকল সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।
ক্ষোভ থাকবেই, একটা দেশের শতভাগ মানুষ একত্রে খুশি থাকে না। যাদের সাথে সরকারের নীতি মেলে না তারা ক্ষিপ্ত হতেই পারে, তাই বলে তার প্রকাশ এমন সহিংস হলে সেটা গ্রহনযোগ্য না, এটা অপরাধ। এর জন্য মন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করা যেতে পারত, তা সম্ভব না হলে আদালত আছে, সেখানে বিচারের জন্য আবেদন করা যেত। সেখানে কোনরকম বিচার না পেলে বিকল্প পথে হাটা যেত। এতো পথ থাকতেও সে পথে সমাধানের জন্য না গিয়ে অবিবেচকের মতো সরাসরি রাস্তায় নামা কোন ভাবেই বুদ্ধিমানের কাজ হয়নি।
এখন দেশের অবস্থা এমনিতেই নাজুক, পৃথিবীর পরিস্থিতি পালটে গিয়েছে। এই পরিবর্তিত পরিবেশে বহু দেশ ও সংগঠন চায় একটা অরাজকতা হোক দেশে, কারণ গোলা জলে মাছ শিকারে অভ্যস্ত তারা।
যারা সরকার নিয়ে ভাবে না এবং ভাবার সুযোগ নাই, দিন-রাত নিজের কাজ করে উপার্জন করে তাদের কোন দাবিদাওয়া নিয়ে মাথাব্যাথা নাই, তাদের জন্য এটা একটা মহা-বিপর্যয়। যাদের আয় নিত্য কাজের উপর নির্ভরশীল তারা কি করে খেয়েছে, সরকার বা আন্দোলনকারীরা কেউ খবর রেখেছে?
তারা বুঝতেই পারেনি যে তাদের আন্দোলন আর তাদের হাতে নাই, একদল হায়না সেই অরাজক পরিবেশের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে গিয়েছিলো। তারা তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার দিকে ছাত্রদের পরিচালিত করেছে।
যোগাযোগ ক্ষেত্রে এমন স্থাপনা বাংলাদেশে এর আগে নির্মাণ করা হয়নি যা এখন আমরা ভোগ করছি, এর উপরে এমন পৈশাচিক আঘাত শুভ লক্ষণ না। এটা পূর্ব পরিকল্পিত, এরা একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো যা নিজের হাতে করে সরকার তাদের হাতে তুলে দিয়েছে এর অসৎ-ব্যাবহারতো তারা করবেই। আর এর ফলে ফ্লাই-ওভার, মেট্রোরেল, এলিভেটেড ওয়ে, পুলিশ স্টেশন দাউদাউ করে জ্বলেছে, আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে তা দেখেছি। আমরা অসহয় হয়ে দেশকে জ্বলতে দেখি, সাথে নিজেরাও জ্বলি কিন্তু আমাদের কিছুই করার নাই। এ এক দম বন্ধ করা অবস্থা।
এই যে এতো সময় ধরে গড়ে তোলা স্থাপনা কিছু সময়ের উত্তেজনায় পুড়ে ছাই হয়ে গেলো, এতো সম্পদ ধ্বংস হলো, এতো মানুষ মারা গেলো, এর দায় কে বহন করবে? আমরাইতো, যারা ট্যাক্স পে করি? বাহির থেকে কেউ এসেতো এর মূল্য শোধ করবে না। তবে এমন ধ্বংসযজ্ঞে কেন নামলো দেশের মানুষগুলো? সরকার কী তা ভেবে দেখবে?
মানুষকে উপেক্ষা করে শান্তিময় দেশ আশা করা যায় না, আর এটাই বার বার করে চলছে দেশের সরকার। এর ফল যে ভালো হয় না তাতো সরকার বহুবার দেখেছে। বেশি আগের উদাহরণ দিব না। এই সেদিন ২০১৩, ২০১৮ এ সরকার দেখেছে লাগাম ছাড়া আন্দোলন, তবুও সরকার মানুষকেতো উপেক্ষা করছেই সাথে সেই আন্দোলনকেও উপেক্ষা করেছিল। যার ফল হলো এইসব স্থাপনার বহু বছরের জন্য ক্ষতি এবং কিছু মানুষ শুধু শুধু জীবন হারালো। সরকার চাইলে প্রথমেই তাদের আটকে দিতে পারতো।
এতোদিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে একটা দেশকে তার কতটা ধাক্কা বহন করতে হয় তা তাদের ধারণা আছে? আমরা এই যে লাখ লাখ অনলাইন কেন্দ্রীক কর্মী দিনের পর দিন কাজ বন্ধ করে বসে ছিলাম, আমাদের যা ক্ষতি হয়েছে তা কে পূরণ করবে?
বড়ধরণের এই ক্ষতির পরে সরকার কার্ফিউ দিয়ে সব নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নিয়েছে, এটাইতো যথেষ্ট। ইন্টারনেট কেন এতোদিন বন্ধ করে রাখলো? যদি রাস্তায় নামতে না পারলো তবে অনলাইনে কথা বলে কী কেউ কোন ক্ষতি করতে পারে? এটাও খুব একটা বিবেচকের মতো কাজ করলো না সরকার। তার পরেও বন্ধ যখন করেই ফেলেছে একদিন পরেই তা ওপেন করে দেয়া উচিত ছিলো। সরকার এমন হটকারী সিদ্ধান্ত নিবে কেন? তাদেরতো সর্বোচ্চ বিবেচক হতে হবে। তাদেরতো ভবিষ্যত দেখতে হবে, সবরকম পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বুজতে হবে কোন কাজের ফল কেমন হবে।
পাকিস্তানের মত লোপ্রোফাইল দেশগুলো কথায় কথায় এ ভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখে, আমরাও যদি একই পথে আন্দোলন আটকাতে চাই তবে সেই একই কাজের জন্য তাদের কেন গালমন্দ করি?
এসব না করে সরকার যদি দূর্ণীতি আটকে দিতে পারত, মানুষের ভাষা বুঝতে পারতো তবে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে মানুষকে রাস্তায় নামাতে পারতো না। মানুষের সামনে ভালো কোন উদাহরণ নাই, তারা দেখছে যুবকদের জন্য চাকরির নিশ্চয়তা নাই, যারা সরকারে বা প্রশাসনে আছে তারা দেশের টাকা লুটেপুটে খাচ্ছে, সরকার তার কথা শুনছে না, ভাবছে না। কোন ভরসায় মানুষ ঘরে বসে থাকবে?
যারাই সরকারে যায় তারাই কৈলাশবাসী হয়ে যায়, মানুষ তাদের নাগাল পায় না, এটা ঠিক কাজ না। সরকার নার্সিসিজমে আক্রান্ত হয়ে থাকে। সরকারের ইলাস্ট্রিসিটি বাড়াতে হবে, মানুষের জন্য তাদের দরজা অবারিত রাখতে হবে। তবেই সরকারের ভাষা বুঝবে জনগণ। এমন হলে জনগণের দাবি আদায়ের জন্য আর রাস্থায় নামতে হবে না, তাদের দাবি সরাসরি সরকারের টেবিলে পৌছে দিতে পারবে। এতে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও বিশ্বাস বাড়বে, এর ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে কোন ভুলবোঝাবুঝি থাকবে না এবং দূরত্ব সৃষ্টি হবে না।
এতো কিছুর পরে সরকার আরও জনসম্পৃক্ত হবে এমন ভাবনাও মনে হয় আকাশকুসুম চিন্তা, সরকার আরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। তার ফলে গণতন্ত্রর পথ আরও সংকীর্ণ হয়ে যেতে পারে, কারণ সরকার নিজেকে আরও কুঁকড়ে নিতে পারে। যদি তাই হয় তবে নাগরিক অধিকার আরও সংকুচিত হতে পারে।
যত যাই হোক দেশের ক্ষতি হয় এমন কাজ আমাদের কখনই করা উচিত না, দেশ যদি উন্নত হয় তার ফল সবাই আনুপাতিক হারে পেয়ে যায়। আবার দেশ দরিদ্র হলে সাবাইকেই তা বহন করতে হয়। সখ করে কে দরিদ্র হতে চায়? দেশকে আমরা যে দিকে নিব দেশ আমাদের ঠিক সে দিকেই নিয়ে যাবে, এটা পারস্পরিক সমতার বিষয়।
সরকার যদি এখন আরও কর্তৃত্ববাদি হয়ে যায় তবে হয়তো এমন আরও ধ্বংসযজ্ঞ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
সব দেবতাকে নিয়েও দক্ষ কিন্তু তার মহাযজ্ঞ রক্ষা করতে পারেননি। দক্ষযজ্ঞ ধ্বংস হয়েই আজ সেটা ধ্বংসের চুড়ান্ত রুপ ধারণ করে মানব মনে স্থান করে আছে। দেশটার এখনও দক্ষযজ্ঞ থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ আছে যদি সরকার চায়, যদি আমরা চাই।