পাপী(!) হাসিনা আউট কোটায় ভর করে দেবতার ইন, এখন হাসিনা নাই, দেশেও কোন অপরাধ নাই। দেশ এখন সার্বোভৌম স্বর্গ, কোন হুমকি নাই, অপরাধ নাই, নাই সাইবার অপরাধের হুমকি! আছে শুধু শান্তি শান্তি আর আছে দেশ জুরে গণতন্ত্র! আরও আছে গণতান্ত্রীক ডাকাতি।
জুলাই মাস জুড়ে যে অন্দোলন চলেছে সেখানে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে কো-অর্ডিনেটর দাড়িয়ে গিয়েছে অনেকে কিন্তু নেতা হতে পারেনি কেউ। কো-অর্ডিনেটরদের আহ্বানে সবাই হয়তো রাস্তায় নেমে পরেছে কিন্তু তারা কেউ নিয়ন্ত্রিত ছিলো না, তাদের কেউ নিয়ন্ত্রণ করেনি বা করতে চায়নি অথবা করতে পারেনি।
আমি বলব নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি, কারণ আবেগ ও বডি স্প্রিডে সবাই নেমে এসেছে ঠিকই তার পরে সবাই চালিত হয়েছে নিজের মত করে। যতক্ষণ তারা মিছিলে ছিলো ততক্ষণ তারা জানতো না তাদের হাতে বিজয় ধরা দিলে তারা কি করবে এবং কি করতে হবে। এর ফলে তারা যখনই জানতে পেরেছে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছে তখন তাদের আর কিছু করার ছিলো না, তাই তখন সামনের দলকে ফলো করার প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছে। সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে মৌমাছির মত চারি দিকে ছড়িয়ে পরেছে, যে যেদিকে পেরেছে ছুটে গিয়েছে।
উৎসবের মত করে তারা এতো দিনে সুরক্ষিত স্থাপনা অরক্ষিত পেয়ে বাধভাঙ্গা জলের মত হুহু করে ঢুকে পরেছে। এর পরে অনন্দের অতিশয্যে খেই হাড়িয়ে কেউ গণভবনের হাস, মুরগি, লেপ, তোষক, টেবিল, চেয়ার, ফ্রিজ, এসি, ফ্যান নিজের মনে করে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছে। কেউ কেউ তার শাড়ী-ব্লাউজ এমনকি তার অন্তর্বাস পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছে! কি নির্লজ্জ আমরা!
একদল গিয়েছে সংসদে, তারা এতটা অসভ্যতা না করলেও যে ভাবে টেবিলের উপরে উঠে নাচা-নাচি করেছে, ধুমপান করেছে সেটাও কম নির্লজ্জ কাজ না। এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের ভাগ্য ভালো সেখানে কেউ ভাংচুড় ও অগ্নি সংযোগ করেনি, যদি কেউ তা করত তবে আমাদের করার কিছুই ছিলো না।
সব থেকে দূর্ভাগা ৩২ নাম্বারের হেরিটেজ বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি, সেখানে যে দুর্বৃত্তরা গিয়েছে তারা হিংস্রতায় সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। ওরা হেরিটেজ বোঝে না, বঙ্গবন্ধু বোঝে না। ওরা আবেগ বোঝে না, সংস্কৃতিতো বোঝেই না। ওরা বোঝে প্রতিহিংসা, ওরা আরও বোঝে বর্বরতা। ওরা জ্বালিয়ে দিন বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া স্মৃতির সাথে রাহুল আনন্দ’র হৃদপিন্ড। কী লাভ হয়েছে ওদের এইসব করে?
হাসিনা কিভাবে গেলো, কেন গেলো সে সব সবাই এখন জানি। সে সব আর না ঘেটে এগিয়ে যাই। আমাদের বলা হয়েছে হাসিনা একজন বদ চরিত্রের অ-সুর(!) তাকে আর রাখা যায় না। তাই আন্দোলনকারী ও সেনাবাহিনী সিদ্ধান্ত নিলো তাকে বাদ দিয়ে একজন দেবতার কাছে ক্ষমতা ইজারা দিতে হবে। তাই সবাই খোজ করতে লাগলো একজন ইজারাদার, যিনি সবার চাহিদা মত ফসল ফলাবে।
এখন সেই ইজারাদার ও তার পারিষদদের বসিয়ে দেয়া হয়েছে দেশ পরিচালনার চেয়ারে, আশা করা যায় দীর্ঘ মেয়াদে দেশে শান্তি ফিরে আসবে। আমাদের প্রত্যাশা দেশে শান্তি আসুক।
এখন দেখা যাক আমরা কতটা পরিচ্ছন্ন। শেখ হাসিনা বেশ কিছু বছর ধরে যেসব কাজ করে আসছিলো তার বেশ কিছু একেবারেই গ্রহণযোগ্য ছিলো না। সে নিজেকে একজন রাজার মত ভাবতে শুরু করছিলো, এর ফলে তার দলের সবাই নিজেকে এককজন রাজপুত্র ভাবত। কেউ সহনশীলতা চর্চা করত না। অনেকেই নিজের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছিলো, তাদের পছন্দ না এমন কাজ কেউ করতে পারত না।
দখলবাজীতে তারা ছিলো অপ্রতিরোদ্ধ সেটা আমরা জানি, আমরা বলি না সেটায় অপরাধ ছিলো না। সেটা অবশ্যই অপরাধ ছিলো, আর সে অপরাধের শাস্তি তার দলবল সহ পেয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাদের জন্য আমাদের সামান্য পরিমান সহানুভুতি নাই।
আমরা জানি শেখ হাসিনা প্রধান মন্ত্রী থাকা অবস্থায় বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্ল করে কথা বলতেন, এটা ছিলো চুড়ান্ত রুচিহীন অপরাধ। তাকে কিছু তুচ্ছ অভিযোগে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য করেই থেমে থাকেননি, যে অপরাধ তিনি করেননি তার জন্যও তিনি আদালত থেকে ৬মাসের জেল দেয়ার রায়ও বের করেছিলেন। যেটা তাকে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক ভাবে বিপর্যস্ত করেছে সন্দেহ নাই। পরাক্রমতা, হিংসা মানুষের মনের অপূর্ণতা প্রকাশ করে, একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষের এসব বদগুন থাকে না।
ড. ইউনুস একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ, সারা পৃথিবী তাকে মাথায় তুলে রেখেছে, আমরাও রেখেছি। পৃথিবীর সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান থেকে দারিদ্রের সর্বনিম্নে অবস্থানকারী সবাই তাকে সম্মান করে, এমন মানুষেরতো বিনয়ী ও ক্ষমাশীল হওয়ার কথা, তারতো পরাক্রমশালী হওয়ার কথা না। তিনিইতো আমাদের ক্ষমাশীল হতে উপদেশ দিয়ে থাকেন, কিন্তু সেই তিনিই যদি পরাক্রমশালী হন তবে তার সেই উচ্চ মানবিক গুনতো আর থাকে না। তবে তো সে উচ্চ ও সৎগুনের উদাহরণ আমাদের সামনে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেন না, সেটা কী তার জন্য সুখকর?
হাসিনা একজন পরাক্রমশালী, দাম্ভিক ও ক্ষমতান্ধ মানুষ ছিলেন তাইতো তাকে এই ভাবে বিতারিত করা হয়েছে। এখন তিনি আশ্রয়হীন হয়ে গিয়েছেন, সারা পৃথিবী তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এর থেকে খারাপ অবস্থা আর কী হতে পারে! তার কর্মফল তিনি ভোগ করা শুরু করেছেন, কতদিন তা চলবে তা তার নিয়তি নির্ধারণ করবে। আর দেশের আদালতে তার বিচার হতে পারে কিন্তু শালীন সরকার ও সরকার প্রধান তাকে আক্রমন করে কথা বলতে পারে না। সরকার হয় দেশের সবার অবিভাবক, আইন ও বিচার বিভাগ অপরাধীর বিচার করবে সেখানে সরকারের কথা না বলাই নীতি থাকা উচিত।
তিনি প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহনে রাজি হওয়ার পরে ভারতের একটা সংবাদ মাধ্যমের সাথে সাক্ষাৎকারে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো শেখ মুজিবের জাদুঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তার ভাস্কর্য ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে সে বিষয় আপনার মন্তব্য কী?
তিন এর উত্তরে বলেছেন “এসব হাসিনার কাজের ধারাবাহিকতা, তার কর্মফল। এর দায় তার”।
এটা কেমন কথা? হাসিনা অপরাধ করেছে বলে শেখ মুজিবের অর্জন আমরা উপেক্ষা করব?
বুঝলাম কোটিকোটি মানুষের সুখ, শান্তি, সম্পদ ও জীবনের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। কিন্তু সেই মানুষটা ছাত্রজীবনে স্বাধীনতার বিজটা রোপন করার পরে সেটা লালন-পালন করে এক মহা মহিরুহে রুপান্তরিত করতে গিয়ে নিজের ভবিষ্যত, সুখ-শান্তি, বিসর্জন দিয়েছেন। জীবনটা বাজি ধরে কোটি মানুষের মনে স্বাধীনতার স্বপ্নটা ছড়িয়ে দিয়েছেন, জাতিকে সংঘবদ্ধ করেছেন। বছরের পর বছর পুরো দেশ চষে বেড়িয়েছেন এক মূহুর্ত নিজের কথা না ভেবে তাকে আমরা ভুলে যাব! তাকে আমরা অপমান করব?
এক মাস রাস্তায় মিছিল আর ভাংচুর করে তারা এমন হিরো হয়ে গেল যে তারা সরকার নিজেদের দখলে নিয়ে গেলো। আর তিনি তার ৫৫ বছরের জীবনটার ৩০/৩৫ বছর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে দেশটাকে মুক্তির জন্য প্রস্তুত করলেন তাকে অপমান করতে তাদের বিবেকে একবার ধাক্কা লাগেনি!
সন্তান অপরাধ করলে তার শাস্তি কেন পিতা পাবেন? এই দেশে শেখ মুজিবের অবধান কারো পক্ষে কোন দিন অতিক্রম করা সম্ভব হবে না। সে যতবড়ই বিশ্বমানের মানুষ হোকনা কেন, যত পুরষ্কারই পাক। মানুষ যত বড়ই হোকনা কেন সে দেশের থেকে বড় হতে পারে না, কিন্তু যিনি দেশের জন্ম দেন তিনি দেশের থেকেও বড় হয়ে যান। তাই শেখ মুজিবর রহমন দেশের থেকেও বড়, তাকে অতিক্রম করার দুঃসাহস কারো দেখানো উচিত না। যদি কেউ তেমন চেষ্টা করেন তিনি হোছোট খাবেনই।
প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে ড. ইউনুসের কাছ থেকে আমরা রাজনীতি না, উন্নত নৈতিকতা আশা করি। আমরা জানি তিনি নীতিবান মানুষ, সেই জায়গায় তিনি অটল থাকবেন সেটা আমাদের কামনা। তা না হলে আবার হোছোট খাওয়ার ঝুকি দেখা দিতে পারে।
একজন সরকার প্রধান হবেন রুচিবান ও আদর্শবান মানুষ, তরুন প্রজন্ম তাকে অনুসরণ করবে, তার মত হওয়ার স্বপ্ন দেখবে। কিন্তু আমাদের দেশে এমন কোন রাজনীতিক নাই যাকে দেখে উদ্ভূদ্ধ হবে নতুন প্রজন্ম, তারই মত হতে চাবে। এমন রাজনীতিক আমাদের দেশে বঙ্গবন্ধুর আগে বা পরে, কখনও ছিলো না। বড় ত্যাগের বিনিময়ে এখন সময় এসেছে সরকার প্রধান হিসাবে ড. ইউনুস এর সেই আদর্শ আমাদের সামনে প্রতিষ্ঠা করার। এখন আমারা আশা করি তিনি সে সুযোগ হাতছাড়া করবেন না।
হাসিনা যেহেতু অ-সুর ছিলেন সেহেতু এই সরকার সুর হয়ে আমাদের সুর রাজ্যে নিয়ে যাক। তাদের আচরণও যদি হাসিনার মতই হয় তবে তাকে কেন তাড়ানো হলো? এই সরকারও যদি তার মতই কাজ করে তবেতো তারা হাসিনার প্রেতাত্মা হয়ে গেলো, তাই নয় কী?
সৈরাচার সে গণতান্ত্রীক হোক বা অ-গণতান্ত্রীক, তার স্থান কিন্তু আস্তাকুঁড়েই হয়।