২৬ লাখ ভারতীয় বাংলাদেশে চাকরি করে(!) প্রচার করে ধ্বংসাত্বক বিপ্লবে বাড়তি জ্বালানী যোগ করেছে মিথ্যা ও অপরাধকে শৈল্পিক রুপ দেয়া প্রফেসর “আসিফ নজরুল”। মিথ্যা প্রচারণা আর বাস্তবতা মেনে দেশ শাসন যে এক না তা কতটা উপলব্ধি করছে এই সরকার সেটা তারা বলতে পারবেন।
তবে আমরা যা উপলব্ধি করেছি তা হল একটা পূর্বপরিকল্পিত আন্দোলনে সর্বস্তরের ছাত্রদের টেনে আনার মিশন আশ্চর্য রকম ভাবে সাফল্যের দিকে নিয়া যাওয়ার জন্য যে সাংগঠনিক শক্তি দরকার, তা অর্জন করা এক বা দুইদিনের ফিল্ড ওয়ার্কে সম্ভব না। কেউ যদি মনে করে হঠাৎ মাঠে নেমেই তারা এতো মানুষ রাস্তায় টেনে এনেছে তবে তারা কোন স্বর্গে বাস করছে সেটা তারাই জানে।
কয়েক বছরের ফিল্ড ওয়ার্ক এর সাথে যুক্ত ছিলো (এর ধরণ দেখেই বলা যায়) আন্দোলনের চরিত্র কেমন হবে তার পরিকল্পনা, ফান্ড সংগ্রহ, নেতৃত্ব নির্ধারণ। পিছনে কারা থাকবে, মাঠে কারা কোথায় থাকবে। ধাপেধাপে তাদের দাবি সামনে এনে পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পিনা ধরেই এগিয়েছে।
আমরা বলতে পারি সাধারণ আন্দোলন এটা হলে এমন করে ভাংচুর হতো না। এখানে রাজনৈতিক এজেন্ডা সামনে আসার কথা না, যদি না এতে রাজনীতির আকাঙ্ক্ষা যুক্ত হয়। অরাজনৈতিক ছাত্রদের যেহেতু রাজনৈতিক প্রস্তুতি ছিলো না সেহেতু তাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব থাকার কথা না। আর যদি সে প্রস্তুতি থেকে থাকে তবেতো প্রমানই হয়ে যায় এটা রাজনৈতিক আন্দোলন ছিলো।
এই আন্দোলনে চরমপন্থায় বিশ্বাসীরা যুক্ত ছিলো তার আর এক প্রমান জঙ্গিবাদের সাথে যুক্ত থাকার ফলে যারা জেলে আটক ছিলো তারা একে একে মুক্ত হয়ে গিয়েছে বা বলা যায় মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। তারা এখন আবার সমাজে একই এজেন্ডা নিয়ে তাদের কর্মকান্ড চালাবে। আবার মানুষের জীবন হুমকির মধ্যে নিয়ে যাবে, মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা হাতছাড়া হবে, এর দায় নেয়ার কেউ কী থাকবে? এই সবের উত্তর ভবিষ্যতের কাছে থাকলো। এখন প্রশ্ন হলো ২৬লাখ ভারতীয় বাংলাদেশে কাজ করছে বলে প্রচার করা হলো, তারা কোথায়? তাদের খোঁজ পাব আমরা?
সাবেক শিক্ষক, উপদেষ্টা “আসিফ নজরুল” নিয়মিত ভাবে বলে বেড়িয়েছে বাংলাদেশে ২৬ লাখ ভারতের নাগরিক কাজ করে বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে আর আমাদের শিক্ষিত যুবকরা কাজ পাচ্ছে না, অভিযোগটা অবশ্যই গুরুতর। এর তদন্ত হওয়া উচিত ছিলো, তখন যেহেতু ভারত এ দেশ চালিয়েছে (তাদের এটা অভিযোগ ছিলো) সেহেতু তার কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এখনতো অভিযোগকারী নিজেই সরকার চালাচ্ছেন তাই আমরা এখন সেই গুরুতর অপরাধের প্রতিকার চাই। তার কাছে আমাদের দাবি থাকবে তিনি এখন লিষ্ট ধরে সেই সব ভারতীয় নাগরিক চিহ্নিত করে সবার সামনে উম্মুক্ত করবেন।
আমরা এখন সেই ২৬লাখ ভারতীয় চাকরিজিবীর সন্ধান চাইলে তার হিসাব কে দিবে? উপদেষ্টা সাহেব উত্তর দিবেন? তিনি যদি এখন চুপ থাকেন তবে আমরা কী ধরে নিব পুরাটাই প্রোপাগান্ডা ছিলো? তিনি মিথ্যা বলেছিলেন? তবেতো সেই মিথ্যা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য তাকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা উচিত।
তার সেই প্রোপাগান্ডার ফলে ৫ আগষ্টের পরে অগণিত পেশাজিবীকে জোর করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে, এখন সেই জোরজবরদস্তির দায় কে নিবে? সেই মানুষদের সামাজিক ভাবে সম্মানহানী হয়েছে, মানসিক ক্ষতি হয়েছে, অনেকের হয়তো জীবনজাপনই কঠিন হয়ে গিয়েছে। তারা এবং তাদের পরিবার হয়তো মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। সে থেকে তাদের মুক্তির পথ কে দেখাবে? এই অপকর্মের দায় আসিফ নজরুল এড়াবেন কী ভাবে? এর উত্তর কী তার কাছে আছে?
শেখ হাসিনা প্রতিপক্ষকে চাপে রেখেছিলেন, নিজেদের পক্ষের মানুষদের সব সুবিধা দিয়েছিলেন বলে সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য নোবেল বিজয়ী শান্তীর সোল-এজেন্টকে নিয়ে আসা হয়েছে। এখনতো কোন রকম স্বজনপ্রীতি থাকার কথা না, স্বেচ্ছাচারী থাকার কথা না।
মায়ানমারে এক নোবেলধারী গণতন্ত্রের মা-বাপ সুকি ১০লাখ রোহীঙ্গাকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছিলেন আর আমাদের সেই স্বৈরশাসক তাদের আশ্রয় দিলেন কোন রকম প্রশ্ন না করে! তার মানে মুখে শান্তির কথা বললেই শান্তিবাদী হয়ে যায় না, তা প্রমান করতে হয়।
ছাত্ররা সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে লাখ লাখ মানুষকে রাস্তায় টেনে নিয়েছিলো, কিন্তু এখন কী হচ্ছে? এটাকে সমান অধিকার বলে? যাকে পছন্দ হচ্ছে না তাকে লীগের ট্যাগ দিয়ে দলবেধে আক্রমন করা হচ্ছে, যারা নিরিহ মানুষ তারাও এখন আতংকে থাকে কখন কোথা থেকে আক্রোমন আসে বলা যায় না। আমরা বলছি না আওয়ামী-লীগ সৎ ছিলো, তারাও দেশের সব কিছুই দখল করে নিয়েছিলো। এখন এতো ধ্বংসের বিনিময়ে যে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে তাতেতো দেখছি সেই বরাবরের মতই, শুধু দখদার পালটেছে কিন্তু অবস্থার কোন পরিবর্তন নাই। যদি সেই পরিস্থিতিতেই বাস করতে হয় তবে এতোটা ধ্বংসের দরকার কী ছিলো? কেন একটা সজ্জিত দেশ ধ্বংস করলাম আমরা?
আসিফ নজরুল সব সময় শ্রোতের সাথে ভেসে বেড়ানো মানুষ, তিনি বঙ্গবন্ধুকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন আবার তিনিই তার শোকদিবসকে উপহাস করেছেন! কোন আসিফ সত্যি? তিনি এতো দিন বলেছেন বাংলাদেশে ২৬ লাখ ভারতীয় চাকরি করছে, এখন হয়তো বলবে বাংলাদেশে কোন ভারতীয় নাই! অথচ একটা মানুষও ভারতে চলে যাওয়ার প্রমান পাওয়া যাচ্ছে না। আসিফ নজরুল ভারতীয়দের নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তা নিয়ে একটা ব্যাখ্যা তার দেয়া উচিত।
তিনি যদি এখন চুপ থাকেন তবে প্রমান হবে তিনিই বুঝে শুনেই দেশটাকে এই অরাজকতার দিকে নিয়ে গিয়েছেন, নিজের আক্রোশ মেটানোর জন্য তিনি দেশটাকে ধ্বংসের প্রান্তে নিয়ে গেলেন। হ্যামিলিয়নের বাসি বাজিয়ে তিনি দেশটাকে ধ্বংসের দিকে চালিত করে ১৮ কোটি মানুষের জীবন হুমকির মধ্যে ফেলে দিলেন, আর আমরা কিছু নির্বোধ ভগল বাজিয়ে তাদের স্বাগত জানালাম! একবারও ভাবলাম না এমন ধ্বংসের মধ্য থেকে যে সরকার জন্ম নেবে তারা কতটা সৎ হবে বা হতে পারবে?
আমরা বলি না আওয়ামী লীগ যা করেছে সব ঠিক করেছিলো, তারা নাগরিকদের অতিরিক্ত মূল্যে পন্য ও সেবা কিনতে বাধ্য করেছে। দেশের সম্পদ নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করেছে, নিজেদের দেশের মালিক মনে করে তাদের অধিকারের বাইরে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে তা অবশ্যই অপরাধ ছিলো, যার প্রতিকার হওয়া দরকার।
এই হতভাগা দেশটার নিয়তিই খারাপ, যখনই একটু দম নিয়ে চলা শুরু করে তখনই ভয়ংকর প্রতিবন্ধক পথ আটকে দেশকে পথহারা করে দেয়। তা দিক, নিয়তিতে যা আছে তাতো হবেই। কিন্তু আসিফ সাহেব আমাদের যে বিভ্রান্ত করেছে তার সেই অপকর্মের সমাধাণ আমরা এখন চাই, তিনি আমাদের বলুক সেই ২৬ লাখ কোথায় গেল বা কোথায় আছে?
Discussion about this post