এক হাতে চাপাতি আর এক হাতে কোনএক হতভাগার কাটা হাত নিয়ে প্রকাশ্যে এক যুবক নিজের বীরত্ব প্রচার করতে ফাকা রাস্তায় বীরদর্পে হেটে যাচ্ছে!
একজন রাজনৈতিক (যাদের কোন নীতি নাই) জনসমাবেশে দাড়িয়ে বীরত্বের সাথে ঘোষণা করেছে তার নেতৃত্বে থানা আক্রমন করে ভাঙচুর করেছে!
আর একজন চাপাতি হাতে নিয়ে ঘোষণা করছেন সে এইমাত্র একজনকে কতল করে এসেছে!
এই তিনটা ঘটনার মত শতশত ঘটনা এখন বাংলাদেশে ঘটে চলছে, এটা কিসের লক্ষণ? কারা এটা ঘটাচ্ছে? কেন ঘটাচ্ছে? প্রোশাসন এসবের খবর রাখছে নাকি প্রধান উপদেষ্টার মতো তারাও মনে করছেন এটা শেখ হাসিনা বা তাদের কর্মফল?
এসব ঘটনা ঘটান হচ্ছে কারণ তারা জানে এখন যা কিছুই ঘটুক এর বিচার করার মতো কেউ নাই, সরকার এখন হাসিনা গংদের বিচার নিয়ে ব্যাস্ত, তাই তারা তাদের মিশন সফল করার কাজে নেমে গিয়েছে।
এখন দেশে যে কার্যকর কোন প্রশাসন নাই সেটা সবাই জেনে গিয়েছে। তাদের ধারণা হাসিনার সময়ের নির্বাচিত সব জনপ্রতিনিধি অপরাধী(!) তাই একযোগে ইউনিয়ন থেকে সংসদ, সবাইকে বাতিল করে দিয়ে এখন মাঠে সরকারের কর্মচারীদের নিয়োগ দিয়ে দেশ মূলত প্রশাসন শুন্য করে দিয়েছে। সরকারের কর্মচারীদের কোন কালেই জনগনের সাথে সংযোগ ছিলো না, ফলে তারা কোনদিনই জানতে পারেনি জনগন কী চায় এবং কিভাবে চায়?
বর্তমান পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে চাইলে জনপ্রতিনিধি নিয়োগ করতে হবে, কারণ তারাই জানে জনগনকে নিয়ন্ত্রণ করতে। সরকারের হটকারী সিদ্ধান্ত আজ দেশকে গহিন অরন্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সরকার যদি দেশকে শান্তির দিকে ফিরিয়ে নিতে চায় তবে নতুন নির্বাচন না দেয়া পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের ফিরিয়ে এনে দেশকে মূল ট্রাকে ফিরিয়ে আনার দায়ীত্ব তুলে দিয়ে দেশকে আরও ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে পারে, যদি তারাও বাঁচতে চায়! এটা এখনই করতে হবে তাদের।
আন্দোলনে সংঘ দেয়া অবিভাবকরা কিন্তু এখন বলতে শুরু করেছে পোলাপানের কথায় কুড়ালটা এই ভাবে মাথায় মারলাম কোন বুদ্ধিতে? যখন এই হতাসা ব্যাপক আকার ধারণ করবে তখন যে জোয়ার আসবে তা সামাল দেয়াতো দূরের কথা, সে থেকে পালানোর সময়ও পাওয়া যাবে না। তখন খড়কুটার মত ভেসে যাবে সব প্রতিহিংসা ও দখলদারিত্ব।
প্রতিটা পণ্য এখন ২০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি দামে কিনতে হয়। বিদ্যুৎ সেক্টরে এই ভাবে হঠাৎ করে ধ্বংস নেমেছে কেন তা আমাদের বোধগম্য না, ৫ আগষ্টের আগেতো দেশ প্রায় লোডশেডিং মুক্তই ছিলো। এখন আবার কেন এমন অবস্থায় ফিরে গেল? কোন কোন এলাকায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১০ ঘন্টাও বিদ্যুৎ থাকে না। এমন যদি দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকে তবে দেশের পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা কি সরকার ভাবছে? নাকি এখানেও কর্মফলের গল্প শোনাবে আমাদের?
দেশের নানা স্থানে উৎপাদনে থাকা বহু কারখানা ঘেরাও করা হচ্ছে, যৌক্তিক অযৌক্তিক দাবি তুলে শতশত কারখানা বন্ধ হয়ে আছে, কিছু কারখানায় আগুন দেয়া হয়েছে! পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে লখো মানুষের কর্ম ক্ষেত্র, কেন পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে? কে করছে এসব? সরকার এদিকে খেয়ালই করছে না। এই সেক্টরকে অগ্রাধীকার দিয়ে সরকারের এই সব অরাজকতা এখনই নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
মালিকদের প্রতি কারো ক্ষোভ থাকতেই পারে, তাই বলে যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করে এ দেশের হাজার হাজার মানুষ তাদের জীবন চালায়, সেই সব প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে কার সার্থে? সরকার আদালত থেকে বের হয়ে এদিকে কী নজর দেবে, নাকি শিল্প সেক্টর তারাও ধ্বংস করতে চায়? তারা কী এখনও মনে করে এসব প্রতিষ্ঠাণে ভারতীয়রা কাজ করে? তাই ভারতীয়দের ক্ষতি করতেই এইসকল প্রতিষ্ঠাণই ধ্বংস করতে হবে?
শুধু কি ব্যবসা প্রতিষ্ঠাণ? ভিন্নমতের সবকিছুই এরা ধ্বংসের মিশনে নেমেছে। বেশ কিছু মাজার ধর্মপ্রতিষ্ঠাণ ভাঙ্গা হয়েছে, আরও এমন ভাংচুর হয়তো দেখতে হবে। ভিন্নমত দমন করাই যদি এদের মিশন হয় তবেতো হাসিনা যা করেছে তাও ঠিকই ছিলো। এর পরে আবার যারা আসবে তারাও যদি এমনই করে তাওতো তবে ঠিক অপরাধ বলে চিহ্নিত করা যাবে না।
সোসাল মিডিয়ার ভিডিওগুলি যদি সত্যি হয় তবে বলতে হয় দেশ এখন নরকে পরিনত হয়েছে, অনেক বয়ষ্ক মানুষকে যে ভাবে মারপিট করা হচ্ছে তা মনে হয় ৭১ এর পরে এদেশে কেউ দেখেনি। এসব কে থামাবে? সরকারতো আছে হাসিনার পিলে চটকানোর তালে!
হাসিনা কোথায় গিয়েছেন? তিনি কী বলছেন, কী করতে চাচ্ছেন, এসব না ভেবে সরকারের দেশের জন্য কাজ করা উচিত। দেশটাকে রক্ষা করাই এখন অগ্রাধীকার হওয়া উচিত। তা না করে সরকার পড়ে আছে হাসিনাকে নিয়ে, এটা আমাদের কাম্য না। তিনি তার কথা বলতে থাকুক, তারাওতো হাসিনাকে নিয়ে কত কথা বলেছে, হাসিনা কি তাদের কথা বলতে নিষেধ করেছে তখন? করেনিতো, তিনি তার কাজ করে গিয়েছেন। এই সরকারেরও উচিত হাসিনা কী বলে সে সব নিয়ে না ভেবে তাদের কাজ করে যাওয়া।
আন্দোলনকারীরা এখন পুরো দেশটাকে নিজেদের দখলে নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করছে। যাকে পছন্দ না তাকেই আক্রমন করছে, পুলিশ দেখছে কিন্তু তারা তাদের কাজ করছে না। এটা একদমই শুভ লক্ষণ না। দেশে একজনও জনপ্রতিনিধি নাই, পুলিশ কাজ করছে না। মাঠে কাজ করার কেউ নাই, সরকার সর্বস্তরে নিজেদের নিয়ে যেতে পারেনি এখনো। দুই মাস আগের অবস্থায় ফিরে যেতে আমাদের আর কতোদিন অপেক্ষা করতে হবে?
আর কিছু না হোক পুলিশকে পূর্ণ মাত্রায় কাজে নিয়ে আসা দরকার। দেশে আইন আইনশৃঙ্খলা বলতে আর কিছু আছে বলে মনে হচ্ছে না। দুঃষ্কৃতিকারীরা উল্লাস করে অপরাধ করে চলছে প্রতিকারের কোন ব্যাবস্থা নাই, এই ভাবে একটা দেশ চলতে পারে? এখনই এই অরাজকতা বন্ধ করতে না পারলে দেশ হিসাবে আমরা চরম ভাবে ব্যার্থ হয়ে যাব। আমরা রসাতলে হারিয়ে যেতে চাই না।