জানি না আমার এই কথাগুলো তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছবে কিনা ? তবুও লিখছি আমার প্রিয় পাঠক জানবে এবং সেই সাথে আমার মনের কষ্ট ও যন্ত্রণাটা একটু হালকা হবে। আমাদের চারপাশে ঘুষ , দুর্নীতি, লুটপাট, সিন্ডিকেট, দখল, খেলাপী ঋণ এবং বিদেশে টাকা পাচারের যে স্বর্গরাজ্য গড়ে উঠেছে তা ভেঙ্গে বৈষম্যহীন সমাজ ও দেশ গঠনের এখনই সময়। ঘুষ , দুর্নীতি, লুটপাট, সিন্ডিকেট, দখল, খেলাপী ঋণ এবং বিদেশে টাকা পাচারের কবলে পড়ে আমাদের অর্থনীতি, জীবনমান অনেক অনেক দূর পিছিয়ে পড়েছে। আমাদের দেশে ঘুষ দুর্নীতি এতোটাই প্রবাবিত যে, ঘুষ ছাড়া অফিসে ফাইল স্বাক্ষর হয় না। আবার ঘুষ দিতেও ঘুষ লাগে এবং ঘুষ খেয়ে মুক্তিতেও পায় ঘুষ দিয়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ছাত্ররা আমাদের কাছে বৈষম্যহীন সমাজ ও দেশ গড়ার নতুন বার্তা দিয়েছেন। আমরা তাদের সাথে একমত হয়ে বলতে চাই বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র চাই। যেখানে মানুষ তার পূর্ণ অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বাঁচবে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও আমাদের চারপাশে ঘুষ , দুর্নীতি, লুটপাট, সিন্ডিকেট, দখল, খেলাপী ঋণ এবং বিদেশে টাকা পাচারের যে স্বর্গরাজ্য গড়ে উঠেছে তা আমাদেরকে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ,মানসিক অনেক সীমাবদ্ধতা তৈরী করে দিয়েছে । আমরা যদি সত্যিকারেই দেশটাকে ভালোবাসি তবে এখনই সময় চারপাশে ঘুষ , দুর্নীতি, লুটপাট, সিন্ডিকেট, দখল, খেলাপী ঋণ এবং বিদেশে টাকা পাচারের মুলোৎপাটন করার। আমাদের দেশের রাজনৈতিক বিবেচনায় কোন রাজনৈতিক সরকারের নেতৃত্বে এই স্বর্গরাজ্য ণির্মূল করা সম্ভব নয়। একটি অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষেই শুধু এটা সম্ভব। যদি সেই সরকার দেশপ্রেমিক হয়, দেশের এবং দেশের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকে। কথায় বলে, সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়ের সমান। আসলে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুর্নীতি রোধে এবং সামাজিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। অন্তবর্তীকালীন সরকার একটি নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে, সব পক্ষের মতামত এবং তথ্যের ভিত্তিতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারে। একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার আসলেই পছন্দনীয় হতে পারে যদি তা সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ এবং অরাজনৈতিক হয়। একটি অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষেই শুধু এটা সম্ভব। অন্তবর্তীকালীন সরকার, যেহেতু রাজনৈতিক স্বার্থহীন এবং নিরপেক্ষ, তাই তারা স্বাধীনভাবে ও সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে যা একজন বর্তমান রাজনৈতিক সরকারের পক্ষে সম্ভব নয় । ঘুষ , দুর্নীতি, লুটপাট, সিন্ডিকেট, দখল, খেলাপী ঋণ এবং বিদেশে টাকা পাচারের মধ্য দিয়ে যে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শ্রেণি বৈষম্য তৈরি হয়েছে আমাদের দেশের রাজনৈতিক বিবেচনায় অন্তবর্তীকালীন সরকারই তার সুষ্ঠু সমাধান করতে পারেন। গুটিকয়েক মানুষের সুবিধার জন্য আইনভঙ্গ এবং এর ফলে বহু মানুষের বঞ্চিত হওয়া এই ছিল আওয়ামী শাসনামলের একটি বৈশিষ্ট্য। প্রায় সব ক্ষেত্রেই এমনটি দেখা যেত। এর বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করেই হাসিনা সরকারের পতন ঘটায়। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী চেতনা সব জায়গায় এখনো পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য, বাসস্থান- ইত্যাদি মানুষের মৌলিক অধিকার হলেও প্রতিটি এখন বিক্রয়যোগ্য পণ্য। এগুলো চড়াদামে বিক্রি হয় বলে দেশের বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠী এ থেকে প্রায় বঞ্চিত।তারা প্রতি পদে পদে বঞ্চিত । কোন দায়বদ্ধতা নেই, নেই কোন জবাবদিহিতা। যে যার মতো ব্যবসায়ের নামে লুটপাট করে কেটে নিচ্ছে আমাদের সাধারণের পকেট। চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া যেন আর কোন রাস্তাই আমাদের খোলা নেই। জীবন-জীবিকায় আমরা জিম্মি হয়ে পড়েছি সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী মালিক শ্রেণির হাতে । কোথাও কোন স্বস্তি নেই। জীবনের অধিকার নেই, শিক্ষার অধিকার নেই, খাদ্যের নিরাপত্তা নেই-নিরাপদ খাদ্য নেই। আছে শুধু ভেজালের সমারোহ , ঘুষ- দুর্নীতির নানা আয়োজন। স্বাস্থ্যের অধিকার নেই, স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, গত ৪ সেপ্টেম্বর পিএসসি প্রমার্জনার সুপারিশ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। ৫ সেপ্টেম্বর সুপারিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার চিকিৎসকরা। তখন গেজেট আকারে প্রকাশ না করে সেই সুপারিশের কিছু অংশ তদন্তের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তদন্ত প্রতিবেদন পাঠালে পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। আশা করা যাচ্ছে, মন্ত্রণালয় নিয়ম মেনে, বৈষম্য না করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। আর সব ক্ষেত্রের মতো চিকিৎসা ক্ষেত্রেও বিগত সরকারের আমলে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। অন্তর্বর্তী সরকার সেসব অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত এবং চিকিৎসা খাতকে নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে পারবে এটাই প্রত্যাশা।
প্রশাসনিক কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং দায়িত্বশীলতা প্রতিষ্ঠা করা। দুর্নীতি দমন এবং আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।খেলাপী ঋণ বিষয়ক সমস্যার সমাধান এবং ঋণ ব্যবস্থার পর্যালোচনা করা। অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার করা যাতে বিদেশে টাকা পাচার এবং অর্থনৈতিক অপব্যবহার বন্ধ করা যায়। ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট, সিন্ডিকেট এবং অন্যান্য অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করার জন্য বিশেষ কমিশন গঠন করা। দুর্নীতি, খেলাপী ঋণ, এবং পাচারের মতো বিষয়গুলির নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে । দুর্নীতি দমন এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য আইন সংস্কার করা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং কার্যকর বাস্তবায়ন। পুলিশ এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, যাতে তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে। ঋণ ব্যবস্থাপনা ও অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাস করা। বিদেশে অর্থ পাচার রোধে কড়া নজরদারি এবং বৈদেশিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের পুনর্বিবেচনা করা।দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে সচেতন করা এবং তাদের আইনগত অধিকার সম্পর্কে অবহিত করা। জনগণের মানসিক সংস্কারও জরুরী। আমরা যদি আমাদের সংস্কার করতে না পারি তবে তবে আইনের প্রয়োগ এবং এর সুফল কখনোই আমাদের নাগালে আসবে না।ভবিষ্যতের নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং রাজনৈতিক দুর্নীতি রোধে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সংস্কার করা। বিচার বিভাগের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা এবং দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া প্রবর্তন করা যাতে দুর্নীতি ও অপরাধের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যায়। প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি এবং দুর্নীতির সুযোগ কমাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা। ঘুষ , দুর্নীতি, লুটপাট, সিন্ডিকেট, দখল, খেলাপী ঋণ এবং বিদেশে টাকা পাচার রোধ করতে এমন কিছু দৃষ্টান্তমূলক কর্মসূচী ও পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করতে হবে ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট, সিন্ডিকেট, খেলাপী ঋণ ও টাকা পাচার করার আগে ৭বার ভাবে। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষেই সম্ভব ঘুষ , দুর্নীতি, লুটপাট, সিন্ডিকেট, দখল, খেলাপী ঋণ এবং বিদেশে টাকা পাচার রোধ করে এবং দুর্নীতি, ঋণখেলাপী ও পাচারকৃত টাকা উদ্ধার করে দেশেকে একটি সমৃদ্ধশালী ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে একটি শক্তিশালী দেশ গঠন করা সম্ভব।