হঠাৎ করে তেলের দাম বাড়ানোর কারণে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে। প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে। এসব কর্মসূচি দিয়ে যাতে কেউ পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে না পারে সেদিকে নজর রাখছে আওয়ামী লীগ। বিরোধীরা কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে দাম বৃদ্ধির ইস্যুটি যেন বড় করতে না পারে সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে সারা দেশের দলীয় সংসদ সদস্য ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে স্থানীয় কাউন্সিলরের নেতৃত্বে দলীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটির কাজ-দিনে বা রাতে বিরোধীরা কোনো ধরনের আন্দোলন, সভা-সমাবেশ বা মিছিল-মিটিং করছে কিনা তা নজরে রাখা।
এ ধরনের কর্মসূচি পালন করলে তৎপর হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর এসব তদারকি করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অবস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে। দলের নেতারা জানান, ঢাকা মহানগরে বিরোধী দলগুলোর বড় ধরনের কর্মসূচি পালন করতে দিতে নারাজ মহানগর আওয়ামী লীগ। তাদের মতে ঢাকা মহানগরে আন্দোলন সফল করতে পারলে তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তাই ঢাকায় তারা বাড়তি সতর্ক অবস্থান নিয়ে থাকছেন। মহানগরের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সে ধরনের নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ মানবজমিনকে বলেন, মানুষের জানমালের যেন কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয়, সাধারণ মানুষ যেন কষ্ট না পায় সেজন্য আমরা সব সময় প্রস্তুত আছি। প্রত্যেকটা থানা, ওয়ার্ডে আমাদের সেই নির্দেশনা দেয়া আছে। দিনের আলোয় কিংবা রাতের অন্ধকারে বিরোধীরা মিছিল-মিটিংয়ের নামে, সমাবেশের নামে, যেন অরাজকতা করতে না পারে সেজন্য আমাদের থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ পাহারায় রয়েছে। তাদেরকে প্রতিরোধ করতে মহানগর আওয়ামী লীগ সবসময় সতর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে মহানগর সেল থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। এ জন্য আমরা টিমও তৈরি করেছি। স্থানীয় কাউন্সিলর, ওয়ার্ডের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং যারা সমাজের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি তাদেরকে নিয়ে ওই টিম তৈরি করা হয়েছে।
গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ নিয়ে বিএনপিকে রাজপথে মোকাবিলা ও ফয়সালার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি’র উদ্দেশ্যে। তিনি বলেন, আমরা রাজপথের পুরাতন খেলোয়াড়, বিএনপি তো এই পথে নতুন। আসুন রাজপথে মোকাবিলা হবে, ফয়সালা হবে। বিএনপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজপথ কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ রাজপথে ছিল, রাজপথে আছে। আপনারা (বিএনপি) রাজপথে আসুন, মোকাবিলা হবে, ফয়সালা হবে। তবে আগুন নিয়ে খেলতে গেলে পরিণাম হবে ভয়ঙ্কর। এদিকে তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বিরোধী দলগুলোকে ইস্যু তৈরি করতে দেয়া হবে না বলে মানবজমিনকে জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি বলেন, এ নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান স্পষ্ট।
পরিস্থিতির কারণে নিরুপায় হয়ে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে ৮ মাস ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। যার পরিমাণ ৮ হাজার কোটি টাকা। জনগণের কষ্ট আমরা বুঝি। এতে আমরাও ব্যথিত। সরকারে যেই থাকতো তাকেই এই কাজ করতে হতো বলে মনে করি। তিনি বলেন, এখানে সরকারের লাভ-লোকসানের কোনো বিষয় নেই। কিন্তু বিরোধী দল এ নিয়ে যা করছে তা অপরাজনীতি। তাদের রাজনীতির যে অপসংস্কৃতি সেখানেই তারা রয়ে গেছে। আজকে তারা আমাদের হুমকি দেয়, ভয় দেখায়, এটা বলে, সেটা করে। মিথ্যাচার করে। মানুষের দুঃখ-দুর্দশার সঙ্গে আমরা সহমর্মিতা প্রকাশ করি। সেখানে আমাদের ভয় দেখিয়ে হুমকি ধামকি দিয়ে উৎখাত করে দেবে- সেটা হতে পারে না। জনগণ এই রাজনীতি গ্রহণ করবে না। বিষয়টি নিয়ে সতর্ক রয়েছি। পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। তারা যদি মানুষের জানমাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলে তবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা মোকাবিলা করা হবে।