পাবনার সাঁথিয়া পৌরসভায় প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক তিন মাসেই ধসে যাওয়ায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ব্যস্ততম সড়কটিতে ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। প্রায় আড়াই কিলোমিটার এই সড়কের বেশ কয়েক জায়গায় ধসে গেছে। পৌরসভার আঞ্চলিক সড়কটি বোয়াইলমারি কালিচরনের বাড়ি থেকে আমোষ তিনমাথা পর্যন্ত প্রায় তিন কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে আইইউজি আইপি প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অতি নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তার কাজ করায় কাজ শেষ না হতেই সড়কের এই বেহাল দশা। সড়কটি নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিসিএল এন্ড ওসি জেভি।
জানা গেছে, গত জুন মাসে তড়িঘড়ি করে কার্পেটিং শেষ করলেও অন্যান্য কাজ বাকি রেখেই ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে দিয়ে এটি উদ্বোধন করা হয়। যে প্রকল্পটিতে এখন সড়ক বাতি লাগানো বাকিসহ সড়কের ট্রাফিক সাইনও শেষ করা হয়নি। সম্প্রতি ওই সড়কে বেশ কয়েক জায়গায় পাল্যাসাইডিং না দেয়ায় ও রাস্তার দু’পাশে মাটি না দেওয়ার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই ধসে গেছে। ফলে ওই এলাকায় যানবাহন চলাচলে চরম ব্যাহত হচ্ছে। ভারী যানবাহন যেতেই পারছে না। ঝুঁকি নিয়ে চলছে রিকশা-ভ্যান ।
সরজমিনে দেখা গেছে, ওই সড়কের তিন স্থানে ধসে গেছে। বোয়াইলমারী সাবেক মেয়র মিরাজুল ইসলাম প্রামাণিকের বাড়ির নিকটে, একই গ্রামের এলিনের বাড়ির নিকটে ও আমোষে মাটি দেয়া দুর্বল হওয়ায় ও প্যালাসাইডিং নতুন না ব্যবহার করে পুরনো প্যালাসাইডিং ব্যবহার করা হয়েছিল। ফলে সামান্য বৃষ্টিপাতেই মাটি ধসে প্যালাসাইটিং পুকুরে পড়ে গেছে। এ ছাড়াও সড়কের বেশ কয়েক জায়গায় কার্পেটিং ওঠে যাচ্ছে। কিছু জায়গায় ফাটল ধরেছে। যেকোনো সময় ধসে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ রাস্তার অনিয়ম কাজে হতাশা প্রকাশ করে বোয়াইমারী গ্রামের আব্দুল আলিম বলেন, রাস্তার কাজ শেষ হওয়ার আগেই এভাবে ধসে যাবে, সড়ক ভেঙে যাবে এটা কেমন কথা? নিশ্চয়ই এ কাজে যথেষ্ট ত্রুটি রয়েছে।
স্থানীয় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক সিরাজ মিয়া বলেন, এতোদিন আমরা অনেক কষ্ট করে যাত্রীদের নিয়ে গাড়ি চালিয়েছি। আশা ছিল সড়কটির কাজ সম্পন্ন হলে হয়তো আমাদের গাড়ি নিয়ে চলাচলের কষ্টটা লাঘব হবে।
সাবেক পৌর মেয়র মিরাজুল ইসলাম প্রামানিক জানান, সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় আজ এই সড়কে বেশ কয়েকটি স্থানে ধস নেমেছে। দ্রুত এই ধস রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে এই রাস্তাটি অল্পদিনেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
রাস্তা নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিসিএল এন্ড ওসি জেভি এর স্বত্বাধিকারী হারুন টিকাদারের সাথে কথা হলে রাস্তায় কাজের অনিয়মের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার ফিরোজুল আলম বলেন, বিষয়টি জানার পরে আমরা তদন্ত করেছি। সেখানে মাটি এবং প্যালাসাইডিং দুর্বল হওয়ায় বৃষ্টিপাতের কারণে রাস্তাটি ধসে গেছে। যেহেতু এখনও কাজ শেষ হয়নি এমনকি ফাইনাল বিল ও দেয়া হয়নি।
পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাতুল হক বলেন, এখানে পুরাতন প্যালাসাইডিং ধরা ছিল তাই বর্তমান কাজে নতুন প্যালাসাইডিং ধরা হয়নি। পাশে পুকুর থাকায় পুরাতন প্যালাসাইডিং পড়ে গিয়েছে। ঠিকাদারকে বলা হয়েছে, মেরামত করে দেবে। ঠিকাদারকে এখনো চুড়ান্ত বিল প্রদান করা হয় নাই। ঠিকাদার যদি সড়কটি ঠিক করে না দেয় তাহলে তার চুড়ান্ত বিল প্রদান করা হবে না।