২৮ অক্টোবর সোমবার সন্ধ্যায় লন্ডনের পাঁচতারকা ওটু ইন্টারকন্টিনাল হোটেলে ব্রিটিশ মন্ত্রী, এমপি, লর্ড সভার সদস্য বিভিন্ন বারার মেয়র, মূলধারার রাজনীতিবিদ সহ মালটিকালচারাল সোসাইটির হাজারও অতিথির উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হলো ব্রিটেনে ব্রিটিশ বাঙ্গালীদের প্রাচীনতম সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েন বিসিএ-এর ১৭তম এওয়ার্ড বিতরনী ও গালাডিনার।
সিবিবিসি‘র জনপ্রিয় উপস্থাপক অ্যাঞ্জেলিকা বেল এবং টক রেডিও এর ইয়ান কলিন্স এর মনোমুগ্ধকর উপস্থাপনায় চারটি ক্যাটাগরিতে মোট ২৫টি সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করা হয়। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন অফিস মন্ত্রী হ্যামিশ ফ্যালকনার এমপি, প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী স্টিফেন মরগান এমপি, ও কর্মসংস্থান ও পেনশন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্টিফেন টিমস এমপি, লর্ড করোন বিলিমরিয়া সিবিএ,ডিএল সহ ৩০ জন এমপি, লর্ডস ও বিভিন্ন বারা কাউন্সিলের মেয়র।
এবছর ১০টি রেষ্টুরেন্ট অব দ্যা ইয়ার, ৩টি ওনার অফ দ্যা ইয়ার, ১০টি শেফ অফ দ্যা ইয়ার ও ২টি টেকওয়ে অব দ্যা ইয়ার-এই চারটি ক্যাটাগরিতে মোট ২৫টি বিসিএ সম্মানা পুরষ্কার প্রদান করা হয়। এবারের বিসিএ এওয়ার্ড এর শ্লোগান হচ্ছে-“Uniting Heritage with Fresh Perspective”। বিসিএর ‘কিংস অব স্পাইস’ শিরোনামের বাংলাদেশী কারির অর্জন উদযাপন অনুষ্টানে বক্তারা উদবেগ প্রকাশ করে বলেন আগামী মার্চে সরকারের স্মল বিজনেস রিলিফ বাতিলের পরিকল্পনা ব্রিটেনের কারি ইন্ডাষ্টির জন্য সুফল বয়ে আনবেনা। অতিথিরা তাদের বক্তব্যে বলেন, বৃটেনের জাতীয় প্রবৃত্তি ও খাবার সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশী কারি শিল্প। দক্ষ ও অদক্ষ স্টাফ সংকটে থাকা এই ইন্ড্রাস্ট্রি বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সমস্যায় নানাভাবে নিমজ্জিত। বিসিএ ধারাবাহিকভাবে কারি শিল্পের সমস্যা ও সংকট উত্তরণে সুনিদৃষ্ট দাবী জানিয়ে আসছে। যৌক্তিক দাবী বাস্তবায়নে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। নতুবা এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা যাবেনা। ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত বিসিএ এর ধারাবাহিক কাজের ভূয়সি প্রশংসা করে বক্তারা বলেন, বৃটেনে জাতীয় দুর্যোগ সহ লোকাল কমিউনিটির সামাজিক ও মানবিক কাজে বিসিএ-এর ভুমিকা প্রশংসনীয় সরকারের অসহযোগিতায় বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট দিন দিন বন্ধ হচ্ছে। বৃটেনের কারী লাভার্সরা বাংলাদেশী কারির অমৃত স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে চায় না।
ওলি খান এমবিইঃ বিসিএ‘র প্রেসিডেন্ট ওলী খান এমবিই বলেন, সরকার প্রবর্তিত ব্যবস্থা অনুযায়ী রিটেইল, হসপিটালিটি ও লেজার প্রোপার্টিজ ৭৫শতাংশ কর রেহাই পাবে, যার সর্বোচ্চ সীমা প্রতি ব্যবসায় এক লক্ষ দশ হাজার পাউন্ড। এটি আগামী ছয় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে শেষ হবে। আমাদের নায্য দাবীকে যদি সরকার উপেক্ষা করে তাহলে বিশেষ করে হসপিটালিটি সেক্টরের শত শত ব্যবসার অপমৃত্যু ঘটবে। এই সেক্টরটি অতীতে বহুবার বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। ক্যাটারার্সরা সব্বোচ্চ ত্যাগ ও সংগ্রাম করে আসলেও এবারের বিপর্যকে আমাদের পক্ষে সামাল দেয়া অসম্ভব। আমাদের দরকার সকলের সাহায্য ও সহযোগিতা। আমরা দ্রুত আশ্বাস চাই যে, বিজনেস রেইটস রিলিফ আরও দীর্ঘ সময়ের জন্য বাড়ানো হোক। অন্যথায় মন্ত্রীদের হাত ধরেই বৃটেনের প্রিয় খাবারটির বিদায় ঘন্টা বাজবে।
মিঠু চৌধুরীঃ বিসিএ‘র সেক্রেটারি জেনারেল মিঠু চৌধুরী বলেন, আমরা জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি থেকে শুরু করে কঠোর অভিবাসন আইন ইত্যাদি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি। আমাদের সকল সদস্যদের পক্ষ থেকে, আমরা নিশ্চিত করতে চাই- বৃটেনের প্রতিটি রেস্টুরেন্টের কণ্ঠস্বর যেন ক্ষমতাসীনদের কাছে পৌঁছে। লেবার পার্টির প্রতি আমাদের আহ্বান, কারি ইন্ড্রাস্ট্রির এই দুঃসময়ে আমাদের দাবিগুলোকে সমর্থন করে আমাদের পাশে দাঁড়ান।
টিপু রহমানঃ চীফ ট্রেজারার টিপু রহমান বলেন, গত কয়েক বছর ধরে রেষ্টুরেন্ট পরিচালনায় আমরা যেভাবে নানাবিদ কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছি এর আগে আমরা কখনও এমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হইনি। বাংলাদেশী কারী ইন্ডাস্ট্রিকে টিকিয়ে রাখতে এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন সকলের ঐক্যবদ্ধ সমর্থন ও সহযোগিতা। আমরা দেখছি, বৃটেনের বিভিন্ন স্থানে প্রতি সপ্তাহেই রেষ্টুরেন্ট বন্ধ হচ্ছে। আমরা এভাবে গ্রেট ব্রিটিশ কারি হারানোর মতো পরিস্থিতি মেনে নিতে পারি না। সংশ্লিষ্টদের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
নাজ ইসলামঃ প্রেস ও পাবলিকেশনস সেক্রেটারি নাজ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশি কারি আধুনিক ব্রিটিশ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এবং এই সম্মাননা পুরস্কারগুলো আমাদের কারি শিল্পের মধ্যে থাকা আলোকিত ও অনন্য প্রতিভার একটি সম্মিলিত উদযাপন। আমাদের শেফ ও রেস্টুরেন্টগুলো সব সময়ই নতুন কিছু উপস্থাপনের চেষ্টা করছে। যাতে ভোজনরসিকরা সর্বোত্তম স্বাদ ও অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারেন।
জমকালো আয়োজনে ছিল নানা বৈচিত্র ও সৃজনশীলতার ছাপ। ১২শ আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে সন্ধ্যা ৪টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠানে ছিল ব্রিটেনের সেলিব্রেটিদের অংশগ্রহণে মুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাথে অতিথিরা আথিয়েতায় উপভোগ করেছেন ব্রিটিশ- বাংলাদেশী কারী ইন্ড্রাষ্টির নানা স্বাদ ও পদের মৌলিক খাবার। বিসিএ এওয়ার্ড-২০২৪ অনুষ্ঠানের এবছর স্পন্সর করেছে, কোবরা বিয়ার, কিংফিশার বিয়ার, সুপার পলো, মাইগোয়াভা বিজনেস, ইকবো, পজিটিভ এনার্জি, ডাবলিউপিসি, দুবাইথ, ইউরো ফুডস, স্কয়ার মাইল ইন্সুরেন্স, রাধুঁনী, ন্যানো সফট, এমআর প্রিন্টার্স, স্পাইস ভিলেজ, গ্যোফ, পেটাপ, এনসিএল ট্যাভেলস, বিসিএ ফাউন্ডেশন।
অনার অব দ্য ইয়ারঃ এছাড়া কমিউনিটিতে বিশেষ অবদানের আরো তিনটি অনার অব দ্য ইয়ার ২০২৪ প্রদান করা হয় এওয়ার্ড প্রাপ্তরা হলেন কারি ইন্ডাষ্ট্রিতে বিশেষ অবদান রাখায় মোহাম্মদ আব্দুল মোনিম ওবিই , ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটিতে বিশেষ অবদানের জন্য ইকবাল আহমদ ওবিই ডিবিএ, ব্রিটিশ কারি ইন্ডাষ্ট্রিতে বিশেষ সাপোর্টের জন্য আফসানা বেগম এমপি।
বিসিএ রেষ্টুরেন্ট অব দ্য ইয়ারঃ এবছর যাদের সম্মানা প্রদান করা হয় এর মধ্যে বিসিএ রেষ্টুরেন্ট অব দ্য ইয়ার ২০২৪ বিজয়ীরা হলেন সোহেল আহমদ ‘‘বাবুলস‘‘ ডার্লিংটন নর্থ ইষ্ট রিজিওন, মিয়া জাহান মিয়া ‘‘ দি বোম্বে‘‘ অর্পিংটন কেন্ট সাউথ ইষ্ট রিজিওন-৫, মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান ‘‘ হান্নান রেষ্টুরেন্ট‘‘ লেষ্টার ওয়েষ্ট মিডল্যান্ড রিজিওন, রোকন আহমদ রিকি ‘‘ দি করিয়েন্ডা লাউঞ্জ‘‘ ইপিং এসক্স ইষ্ট অব ইংল্যান্ড রিজিওন-২, সাইদুর রহমান চৌধুরী ‘‘ স্পাইচ লাউঞ্জ‘‘ কেম্বাররী সারে সাউথ ইষ্ট রিজিওন-২, আব্দুল রউফ ‘‘ সুন্দরবন‘‘ সাউথ গ্রীণফোর্ড সাউথ ইষ্ট রিজিওন-৩, আব্দুস সালাম ‘‘ স্পাইচ লাউঞ্জ‘‘ ব্রেকলী ইষ্ট মিডল্যান্ড রিজিওন, রব্বি মালিক ‘‘মেলফোর্ড ভেলী’’ লংমেলফোর্ড সাফক ইষ্ট অব ইংল্যান্ড রিজিওন-৩, বাবুল হোসাইন ‘‘লে-স্পাইস’’ নিউ এল্টহ্যাম কেন্ট সাউথ ইষ্ট রিজিওন -৫, শামীম আহমদ ‘‘জলসা ’’ নর্টন স্টকেনটন, টিইস নর্থ ইষ্ট রিজিওন, রোমান মিয়া ‘‘মসলা’’ ব্রিকলেন লন্ডন রিজিওন-১, মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম ‘‘ স্পাইস অব পারাডাইস’’ হ্যারল্ড বেডফোর্ড , ইষ্ট মিডল্যান্ড রিজিওন, জাহির আবিদিন ‘’নীলাকাশ’’ এম-ওয়েল-ইন্ড ওয়ার লন্ডন রিজিওন-২, খাইরুল ইসলাম ‘‘ আচারী ইন্ডিয়ান কিচেন’’ ক্লথহ্যাম হিল ব্রিষ্টল সাউথ ওয়েষ্ট রিজিওন-১,।
বিসিএ সেফ অব দ্য ইয়ার ২০২৪ঃ মিফতাউর চৌধুরী ‘‘ লালবাগ’’ ব্রউন কেমব্রীজ ইষট অব ইংল্যান্ড রিজিওন-৩. মশরফ আলী ‘’ দি কারয়েন্ডা‘‘ অর্টিংটন কেন্ট সাউথ ইষ্ট রিজিওন-৫, মোহাম্মদ আলম ‘‘ দি স্পাইজ বালতি হাউজ’’ পেটার্স ফিল্ড হান্ট সাউথ ইষ্ট রিজিওন-৪, আব্দুল হাই ‘‘ সাফরান রেষ্টুরেন্ট ‘’ নর্থহ্যামটন ইষ্ট মিডল্যান্ড রিজিওন, আজাদ খান ‘’ ইন্ডিয়ান সামার’’ ওয়েষ্টারহ্যাম কেন্ট সাউথ ইষ্ট রিজিওন-৫, মোহাম্দ লিলু মিয়া, ‘’ দি স্পাইস টি’’ সার্নব্রক ব্রেডফোর্ড ইষ্ট মিডল্যান্ড রিজিওন, কবির হোসেন ‘’ ট্রি ইলিফেন্ট’’ ল্যান্ডইবোড নিউপোর্ট ওয়েলস রিজিওন, নেছার আহম ‘’মুনলাইট তান্দরি’’ হারলো এসক্স ইষ্ট অব ইংল্যান্ড রিজিওন-২, হাবিব সিদ্দিক ‘’ দি চিনামন স্কয়ার’’ হিলডেন বারা কেন্ট সাউথ ইষ্ট রিজিওন –৫, এম এ কুদ্দুস ‘’ মিন্ট লিফ’’ বিসফ ষ্টাটফোড ইষ্ট অব ইংল্যান্ড রিজিওন-৩,
টেকওয়ে অব দ্য ইয়ার ২০২৪ঃ জাকারিয়া চৌধুরী ‘’ মোগল এক্সপ্রেস’’ সাডবারি সাফোক ইষ্ট অব ইংল্যান্ড রিজিওন-৩, আব্দুল হামিদ ‘’কারি রাজ‘‘ ব্রিষ্টল সাউথ ওয়েষ্ট রিজিন।