মরুভূমি থেকে উপকূলবর্তী এলাকাজুড়ে ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বহুতল নগর তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে সৌদি আরব। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সালমান এই প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন।
সালমানের মতে, মিসরের পিরামিডের পর এই স্কাইস্ক্র্যাপারটি সৌদিতে একটি দৃষ্টান্ত গড়ে তুলবে। আয়না যে ধরনের কাচ দিয়ে তৈরি হয়, এই স্কাইস্ক্র্যাপারটিও একই ধরনের কাচ দিয়ে তৈরি করা হবে বলে এর নামকরণও করা হয়েছে ‘মিরর লাইন’।
এই প্রকল্পের জন্য সৌদি আরবের তরফে এক ট্রিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রা অনুযায়ী, ১১৯ লাখ কোটি টাকা) খরচ করা হবে বলে জানিয়েছেন সালমান।
গালফ অব আকাবা থেকে জর্ডান শহর, লোহিত সাগর পর্যন্ত ‘নিয়োম’ প্রকল্পের অন্তর্গত এই স্কাইস্ক্র্যাপারটির দুদিকে সমান্তরালভাবে ১৬০০ ফুট লম্বা আবাসনও তৈরি করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অ্যাম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের থেকেও উঁচু হতে চলেছে এই গগনচুম্বী। পাঁচ লাখ মানুষ এখানে থাকতে পারেন বলে জানিয়েছেন সালমন। স্কাইস্ক্র্যাপারটির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে ২০ মিনিট সময় লাগবে।
‘মিরর লাইন’-এর উচ্চতা এতই বেশি যে, এর উপরে উঠলে আর সরলরেখায় নয়, বরং পৃথিবীর দিগন্তরেখার কার্ভেচার (বক্ররেখা) স্পষ্ট চোখে পড়ে।
এর নিচ দিয়ে হাইস্পিডবিশিষ্ট ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থাও রয়েছে। পরিবেশের ওপর যেন কোনো ক্ষতিকর প্রভাব না পড়ে, সে কারণে নবায়ণযোগ্য শক্তির মাধ্যমে এই ট্রেন চলবে বলে জানানো হয়েছে।
২০৩০ সালে এই প্রকল্পটি পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এর নির্মাতা এবং শহরের পরিকল্পকরা জানিয়েছেন, এই কাজ সম্পূর্ণ করতে পঞ্চাশ বছর সময় লাগবে।
শুধু ট্রেনই নয়, মাটি থেকে হাজার ফুট উপরে একটি স্পোর্টস স্টেডিয়াম বানানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। স্কাইস্ক্র্যাপারবাসীদের খাবারের ব্যবস্থা করতে দেওয়ালের গায়ে ‘ভার্টিক্যাল ফার্মিং’ অথবা উল্লম্ব পদ্ধতিতে চাষ করে খাবারের জোগান দেওয়া হবে। এমনকি, দিনের তিন বেলার খাবারের জন্য আলাদাভাবে ‘সাবস্ক্রিপশন’ নিতে হবে এখানকার বাসিন্দাদের। এই প্রকল্পটি পরিবেশের কথা চিন্তা করেই বানানো হবে। কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ প্রায় শূন্য।
তবে, এই বহুমূল্য প্রকল্প নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন পরিকল্পকরা। অতিমারির পর কেউ আর বিলাসবহুল আবাসনে থাকবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তারা।
এছাড়া গগণচুম্বী তৈরি করার ফলে পরিযায়ী পাখিরা কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হবে কি না, তা নিয়েও নিশ্চিত নন পরিকল্পকরা। কারণ, যে ধরনের কাচ দিয়ে এটি বানানো হয়েছে, তা পাখিদের ওড়ার সময় দিকভ্রষ্ট করতে পারে।
শুধু তা-ই নয়, ভূগর্ভস্থ জল কীভাবে ব্যবহার করা যাবে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন নির্মাতারা। এখন সবাই সৌদি আরবের বুকে এই স্কাইস্ক্র্যাপারটি তৈরি হওয়ার অপেক্ষায়।