বাঙালির স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতা, সকল সংগ্রামের সূতিকাগার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তি ও রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ বৃহস্পতিবার লন্ডন সময় দুপুর ২ঘটিকায় 28 QUEENS GATE LONDON SW7 5JA বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ করেছে শত শত প্রবাসী বাঙালি। আওয়ামীলীগ ছাড়াও ব্রিটেনের বিভিন্ন প্রান্থ থেকে দলমত নির্বিশেষে প্রবাসীরা অংশ নিয়ে এর প্রতিবাদ জানায়।
প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ গ্রহণকারীরা বলেন ৫ফেব্রুয়ারী রাতে ঢাকাসহ দেশ জুড়ে একযোগে আওয়ামীলীগ সংশ্লিষ্টদের স্থাপনায় যত হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে তা ছিল জঙ্গিগোষ্টী এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের সুপরিকল্পিত একটি পরিকল্পনা। এর পেছনে মূল কারিগর হিসেবে কাজ করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আব্দুলল্লাহ, সারজিস আলম এবং উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও ড. ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বিদেশ থেকে এদের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রেখেছে পিনাকী ভট্র, ইলিয়াস হোসেন, কনক সরোয়ার, সাইফুর সাগর সহ কয়েকজন। যারা বিদেশে বসে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এর পেছনে ড. ইউনুসের সরকারের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। প্রশাসন বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ বাঁধা দেয়নি। পুলিশি এবং আর্মি দূর থেকে নীরবে দাড়িয়ে দেখেছে জঙ্গিদের উল্লাস ।
হামলাকারীরা যখন ভবন গুড়িয়ে দিচ্ছিল তখন দেখাগেছে হামলাকারীদের কয়েকজন ওই ভবনে জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর পতাকা টানিয়েছে। দেশব্যাপী ভবন ভাংচোর করতে ব্যবহার করা হয় সরকারী এস্কেভেটর। এতে বিষয়টি পরিস্কার অন্তবর্তিকালীর সরকারের পৃষ্টপোষকতায় হামলাকারীরা দেশব্যাপী তান্ডব চালাচ্ছে। বিষয়টি আরো পরিস্কার পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর মদদে স্বাধীনতা বিরোধীরা ১৯৭১ এর প্রতিশোধ নিচ্ছে।
বিক্ষোভকারীরা বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন- এই সরকার বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিনত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। ৫ আগষ্ট ২০২৪ এর পর থেকে দেশব্যাপী মবজাষ্ট্রিজ, একের পর এক মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা এবং দেশব্যাপী জঙ্গিদের উত্থান এরই ইঙ্গিত বহন করে। সমাবেশকারীরা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন সমূহ এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন আপনারা বাংলাদেশের ১৮কোটি মানুষকে জঙ্গিবাদের হাত থেকে রক্ষা করুন। বাংলাদেশের মানুষ যুগ যুগ ধরে সাম্প্রদায়িক সম্পৃতির মাঝে বসবাস করে আসছে। এখানে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ সম্পৃতির সাথে বসবাস করে অভ্যস্থ। বাংলাদেশে জঙ্গি উত্থান ঠেকাতে না পারলে এর পরিনতি ভোগ করতে হবে- ভারত সহ দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোকে।
সমাবেশ থেকে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্নস্থানে গতকালের হামলার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হয়।
রাজধানী ঢাকাঃ
- ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ, বুলডোজারে মাধ্যমে ধ্বংস করা।
- ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর ধানমন্ডি ৫/এ–তে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে আগুন।
- আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ভবনে আগুন দিয়েছে জঙ্গিরা।
- ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ভেতরে সেনাবাহিনী উপস্থিত হলে হামলাকারীরার ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে দেখা যায়, এসময় সেনাবাহিনী নীরব দর্শকের ভুমিকা পালন করে।
ঢাকার বাইরেঃ-
- রাজশাহীর পুঠিয়ায় যুব মহিলা লীগ নেত্রীর আওয়ামী লীগের প্রচারপত্র বিলির জেরে তার স্বামীকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দের পর বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়।
- ভাঙচুর হওয়া সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি এবার বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী হামলাকারীরা।
- কুষ্টিয়ায় বুলডোজার দিয়ে ভাঙা হয়েছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়ি।
- চট্টগ্রামে চমেক ও নগরের জামাল খান এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর।
- রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
- ময়মনসিংহ নগরের সার্কিট হাউস মাঠসংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর শুরু করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা।
- খুলনায় বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শেখ হাসিনার চাচাত ভাই সাবেক এমপি শেখ হেলালের বাড়ি।
- ভোলায় আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদের বাসভবনে ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়।
- যশোর শহরের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ মূর্তি ও ম্যুরাল ভাঙচুর।
- সাতক্ষীরা শহরের খুলনা মোড়ে শহীদ আসিফ চত্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ হামলাকারীরা।
- বরিশাল নগরীতে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর বাসভবন বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
- পিরোজপুরে জেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতার বাড়িতে আগুন।
- চুয়াডাঙ্গায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ম্যুরাল এবং জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করেছে হামলাকারীরা।
- কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়কে পাবলিক টয়লেট ঘোষণা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা।
- সুনামগঞ্জ পৌর শহরে দুটি প্রতিষ্ঠানের সামনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের দুটি ম্যুরাল ভাঙচুর করেছেন হেফজতে ইসলামের অনুসারীরা।
- পঞ্চগড় জেলা পরিষদ চত্বরের শেখ মুজিবুর রহমানের ভাঙা ম্যুরাল ভাঙচুর।
- বরিশালে আমির হোসেন আমুর বাড়ি ভাঙা হলো বুলডোজার দিয়ে।
- কুমিল্লায় সাবেক সংসদ সদস্য আ.ক. ম .বাহাউদ্দীন বাহারের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেঃ
- ১. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল নিয়ে কয়েকটি আবাসিক হলের নামফলক ভেঙে নতুন নামকরণ করেন হামলাকারী বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা।
- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ম্যুরাল ভেঙেছে হামলাকারীরা।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পাড়ায় অবস্থিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল’ থেকে শেখ মুজিবের নাম মুছে ফেলা হয়েছে।
- সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বুলডোজার দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
- সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর।
- পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) ছাত্রদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এবং ছাত্রীদের শেখ হাসিনা হলের নামফলক ভেঙে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা
- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবের ম্যুরাল বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা।
গেল বছরের ৫ আগষ্ট আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লাইভে বক্তব্য দেওয়ার ঘোষণা নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে বাংলাদেশকে ‘ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি’ মুক্ত করার ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক সাবেক ছাত্র শিবির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এসব হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনার খবর আসতে শুরু করে। আজও দেশব্যাপী এই তান্ডব চলছে।
তাৎক্ষনিক এই বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন সৈয়দ সাজিদুর রহমান, ফারুক, আব্দুল আহাদ চৌধুরী, নইম উদ্নি রিয়াজ, সৈয়দ ছুরুক আলী, আব্দুল হান্নান, হাজী জিল্লুল হক, মারুফ চৌধুরী, শাহ শামীম আহমদ, মেগের নিগার চৌধুরী, মোবারক আলী, আ.স. ম মিসবাহ, আলতাফুর রহমান মোজাহিদ, ফখরুল ইসলাম মধূ, আনজুমান আরা আঞ্জু, তৌহিদ আহমদসহ আরও অনেকে।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ মিমিনে একটি স্মারক লিপি প্রদান করা হয়।