লন্ডন বরো অফ বার্কিং এন্ড ডাগেনহ্যাম কাউন্সিলের ব্রিটিশ বাংলাদেশী মেয়র মঈন কাদরির আমন্ত্রনে ৬ ফেব্রুয়ারী বৃহস্প্রতিবার সন্ধ্যায় মেয়র পার্লারে আয়োজিত চায়ের আড্ডায় বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থা, নীতিনির্ধারণ ও কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তির প্রভাব কেমন, সুধীজনদের সাথে খোলামেলা আলোচনায় সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব ও কুটনীতিক করিব বিন আনোয়ার বলেন আমরা এই সব বিষয় গুলোর উপর একটি গবেষণা কাঠামো লিখার উপর গুরুত্ব মনে করছি।
বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এসব বিষয়গুলোর উপর গবেষনা করা উচিত। সেই মোগল আমল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন ও আমলাতন্ত্র – প্রশাসনিক সেবার ইতিহাস, কালেক্টরদের ভূমিকা, এবং শাসন কাঠামোর পরিবর্তন। পররাষ্ট্রনীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব – আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ভূমিকা, এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে তাদের প্রভাব। অর্থনৈতিক নীতি ও আর্থিক বিষয়াবলি – জাতীয় রাজস্ব আয়, বৈদেশিক সহায়তা, এবং বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আর্থিক নিয়ন্ত্রণ। ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরে বলেন সময়ের সাথে সাথে এসব বিষয়ের উপরও আমাদের অন্যভাবে দেখতে হবে।
বাংলাদেশে আমলাতন্ত্র ও নীতিনির্ধারণ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রের স্বাধীনতা কতটুকু, এবং এটি রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও বিদেশি স্বার্থের দ্বারা কতটা প্রভাবিত? প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (PMO) কীভাবে আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত প্রণয়নে ভূমিকা রাখে, এবং মন্ত্রণালয়গুলোর কতটুকু স্বাধীনতা রয়েছে? রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও প্রশাসনের মধ্যে সম্পর্কের ধরণ কেমন এবং এর ফলে নীতির স্থিতিশীলতা কতটুকু বজায় থাকে? আমলাতন্ত্রে দুর্নীতি রোধ করতে কী ধরনের আইন ও নীতিমালা কার্যকর রয়েছে, এবং সেগুলো কতটা কার্যকর? বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও পররাষ্ট্রনীতিতে সরকারি টেকনোক্র্যাটদের ভূমিকা কিভাবে পরিবর্তিত হয়েছে? এসব বিষয়ে তিনি বলেন এসব বিষয়ে আলোচনা করতে হলে আমাদের অথীত এবং বর্তমান বিবেচনায় এগুনো উচিত।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত এবং রাশিয়া এবং রাশিয়ান ব্লক ভূক্ত দেশ গুলো ছাড়া কেউ আমাদের সহায়তা করেনি। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু তার কুটনৈতিক দক্ষতা বলে বাংলাদেশকে ওআইসি-জাতিসংঘ সহ আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলোর সদস্য হন। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত চীন এবং সৌদি আবর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। ১৯৭৪ সালে আমেরিকানরা বঙ্গবন্ধুর কাছে সেন্টমার্টিন দীপ চেয়েছিল বঙ্গবন্ধু তা প্রত্যাখান করেন। চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন—এই দেশ ও জোটগুলো বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে কীভাবে প্রভাব ফেলে। কোন দেশই শর্ত ছাড়া সহায়তা করেনা। এসবের উপরও রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব ও শাসনব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ।
বিদেশি অনুদান ও অর্থায়ন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম, নির্বাচনী প্রচারাভিযান ও নীতিনির্ধারণে কীভাবে প্রভাব ফেলে। তিনি বলেন বাংলাদেশের রাজনীতি এখন আর রাজনীতিকদের নিয়ন্ত্রনে নেই। সর্বত্রই ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রনে। রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত রাজনীতিকদের হাতে, আমি মনে করি এটি একটি বড় সমস্যা।
এছাড়া আমাদের দেশে রয়েছে বিদেশী গোয়ন্দাদের প্রভাবও । বিশেষ করে ভারতীয় এবং পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা গুলো তৎপর। কয়েকজন বিশেষ এজেন্ট ব্যতিত আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ বাংলাদেশে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর মাধ্যমে বাংলাদেশে তাদের স্বার্থ হাসিল করছে।
চায়ের আড্ডায় অন্যোন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর সৈয়দ ফিরোজ গনি, কাউন্সিলর গিয়াসউদ্দিন মিয়া, সাংবাদিক মতিয়ার চৌধুরী-গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী আনসার আহমেদ উল্লাহ, শিকদার আতিয়ার রসুল কিটন, ব্যারিস্টার মুন ইমু রহমান, রাজনীতিক ফয়েজ খান তৌহিদ, সাংবাদিক শাহ মোস্তাফিজুর রহমান বেলাল, আজিজুল আম্বিয়া, ব্যবসায়ী কাজী শাহীন, মোঃ কুতুবুল আলম, নাজমুল হক, আরতার হোসেন (আটা), তৌহিদ আহমেদ, আমিনুল ইসলাম, আব্বাস বিন চমক- মুহাম্মদ হুসাইন ফাহাদ, উমাল হোসেন প্রমুখ।