মিডিয়াকে ব্ল্যাকআউট করতে নির্দেশ দিয়েছে অন্তবর্তিকালীন সরকারের প্রেস উইংরিপোর্টটি বাংলায় অনুবাদ করে হুবহু তুলে ধরা হলো।
বাংলাদেশে জুলাই-আগষ্ট ২০২৪এ বিক্ষোভ চলাকালীন, উগ্র জনতার কিছু অংশ পুলিশ এবং আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী বা সমর্থকদের লক্ষ্য করে গণপিটুনি ও অন্যান্য গুরুতর প্রতিশোধমূলক সহিংসতা চালায়, যা অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের দ্বারা সংঘটিত বা তাদের ওপর দোষারোপ করা বেআইনি সহিংসতার প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়া বলে মনে হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ১৯ জুলাই উত্তরায়, একদল জনতা গাজীপুরের সাবেক মেয়রকে মারাত্মকভাবে প্রহার করে এবং তার এক সহযোগীকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে, কারণ তিনি এবং আরও কয়েকজন সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থক বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে।
সবচেয়ে গুরুতর ঘটনা ঘটে ৪ আগস্ট থেকে। সাবেক সরকার ক্রমশ দেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকলে, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক সহিংসতার ঘটনা বাড়তে থাকে।
সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জে, রামদা ও রড দিয়ে সজ্জিত একদল পুরুষ (প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে) এলাকার অন্যান্য বিক্ষোভকারীদের তুলনায় পোশাকের দিক থেকে ভিন্ন দেখাচ্ছিল, স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা চালিয়ে সেটি জ্বালিয়ে দেয়। হামলাকারীরা পাঁচজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মকর্তা ও এক সাংবাদিককে হত্যা করে। নিহত কর্মকর্তাদের একজনকে প্রথমে প্রকাশ্যে অপমানিত করা হয়, তার কানে ধরে উঠবস করানো হয়, এরপর তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
একই দিনে, একই জেলায় আরও একদল তরুণের বড় একটি দল এনায়েতপুর স্টেশনে হামলা চালায়। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই ঘটনায় ১৫ জন পুলিশ সদস্য নিহত হন।
৫ আগস্ট, ফেনী জেলায় তিনটি থানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ও লুটপাট চালানো হয় এবং ১৬ জন পুলিশ সদস্যকে আক্রমণ করা হয়। এর আগে, ৪ আগস্ট ফেনীতে ৩০০-৪০০ জন সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থক ছাত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়, যাতে ৮ জন বিক্ষোভকারী নিহত হন এবং ৭৯ জন গুরুতর আহত হন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
রংপুরে, সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকরা, যাদের মধ্যে একজন আওয়ামী লীগ সিটি কাউন্সিলরও ছিলেন, বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালান। এরপর, একদল জনতা ওই কাউন্সিলর এবং তার এক সহযোগীকে পিটিয়ে হত্যা করে এবং পরে কাউন্সিলরের মরদেহ রাস্তায় টেনে নিয়ে যায়।
নরসিংদীতে, একদল উগ্র জনতা ছয়জন আওয়ামী লীগ সমর্থককে তাড়া করে এবং পিটিয়ে হত্যা করে। অভিযোগ ছিল যে, তারা বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছিল।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর প্রতিশোধমূলক সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। সহিংস জনতা বহু পুলিশ স্টেশনে হামলা চালিয়ে সেগুলো জ্বালিয়ে দেয়। বাংলাদেশ পুলিশের তথ্যানুযায়ী, দেশজুড়ে ৬৩৯টি পুলিশের থানার মধ্যে ৪৫০টি হামলায় ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অনেক ক্ষেত্রে, পুলিশ কর্মকর্তারা পালিয়ে যান বা তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের সরে যাওয়ার অনুমতি দেন। অন্যদিকে, কিছু পুলিশ কর্মকর্তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বা অন্যভাবে হত্যা করা হয়।
৫ আগস্ট যখন সাভার পুলিশ স্টেশনে আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগ করা হয়, পুলিশ সদস্যরা গুলি চালিয়ে নিজেদেরকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। সিলেটে বেশ কয়েকটি পুলিশ স্টেশনে আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। একটিতে পুলিশ সদস্যরা স্থানীয় একটি মসজিদে আশ্রয় নিয়ে নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হয়। রামপুরায়, একজন স্থানীয় ইমাম পুলিশ সদস্যদের একটি নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে সাহায্য করেন।
৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশের নির্বিচার গুলির প্রতিক্রিয়ায় এলাকার একদল সহিংস মব স্টেশনটিতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে, এরপর হামলা চালিয়ে স্টেশনটি পুড়িয়ে দেয় ও লুট করে। দুইজন র্যাব কর্মকর্তা এবং অন্তত চারজন আনসার/ভিডিপি ও পুলিশ কর্মকর্তা উগ্রবাদীদের হাতে নিহত হন। অন্যান্য র্যাব এবং পুলিশ কর্মকর্তারা আঘাত নিয়ে পালিয়ে যায় এবং স্থানীয় লোকদের দ্বারা আশ্রয় পায়। উত্তরা পূর্ব থানায় একদল সহিংস জনতা হামলা চালায়। আক্রমণকারীরা চারজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে।
আশুলিয়ায়, উন্মত্ত জনতা কমপক্ষে তিনজন পুলিশ কর্মকর্তাকে শাস্তি দেয় পুলিশের বিক্ষোভকারীদের হত্যা করার প্রতিশোধ হিসেবে এবং তাদের দেহ পুড়িয়ে দেয়। তিনটি জায়গায়ই, হত্যা করা পুলিশ কর্মকর্তাদের রক্তাক্ত দেহগুলো পাবলিক স্থানে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
৫ আগস্ট থেকে, সহিংস জনতা আওয়ামী লীগের কার্যালয় এবং নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ চালায়। ওএইচসিএইচআর এর কাছে দেওয়া সাক্ষ্যে দেখা যাচ্ছে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী সমর্থকরাও এতে জড়িত ছিল। বিএনপি প্রকাশ্যে স্বীকার করেছে যে ছাত্রদল ও যুবদলের কিছু স্থানীয় নেতা এবং কর্মী প্রতিশোধমূলক সহিংসতায় অংশ নিয়েছে এবং ১০ আগস্ট জানিয়েছে তারা ৪৪ জন স্থানীয় নেতা এবং কর্মীকে বহিষ্কার করেছে।
আগস্টের শুরু থেকেই ঢাকার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে দফায় দফায় হামলা চালানো হয়। পুলিশ, দলীয় কর্মীরা সেসকল হামলা প্রতিহত করে। ৫ আগস্ট, সকল কর্মচারী চলে যাওয়ার পরে, একদল সহিংস জনতা অফিসটিতে হামলা চালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। একই দিনে, যাত্রাবাড়ীতে এক আওয়ামী লীগ সমর্থককে আক্রমণকারীদের একটি দল ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে, যাদেরকে ভুক্তভোগীর পরিবার বিএনপি সদস্য হিসেবে সনাক্ত করে।
সহিংস জনতা আওয়ামী লীগ নেতাদের, সরকারী কর্মকর্তাদের বা তাদের কাছের পরিবারের সদস্যদের বাসা-বাড়ি এবং ব্যবসায় ভাঙচুর, লুট করে বা পুড়িয়ে দেয়। এক ঘটনায়, বিএনপি সমর্থকরা একজন সিনিয়র যুবলীগ নেতার ব্যবসায় হামলা চালায়। ওএইচসিএইচআর এর কাছে দেওয়া এক সাক্ষ্যে দেখা যায় তারা তার বাবা-মাকে জিম্মি করে এবং একজন স্থানীয় বিএনপি নেতা মুক্তিপণ আদায় করে। বিএনপি সমর্থকরা ব্যবসা দখল করে এবং পুলিশ অভিযোগ দায়ের করতে চেষ্টা করলে পরিবারের একজন সদস্যকে আক্রমণ করে। আরেকটি ঘটনায়, যশোরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার মালিকানাধীন একটি হোটেল পুড়িয়ে দেয়। ঘটনায় প্রায় ২৪ জন মারা যায়। বিরোধীদলের সমর্থকরা মিলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। আরেকটি দল শেখ হাসিনার পিতা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের স্মৃতিবিজড়িত বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে লুটপাট চালায় এবং পেট্রোল বোমা দিয়ে হামলা করে।
প্রতিশোধমূলক যৌন সহিংসতার আরেকটি ঘটনা ওএইচসিএইচআর নথিভুক্ত করেছে। আগস্ট মাসে এক নারীকে দুই ব্যক্তি আটক করে যারা ছিল বয়স ও পোশাক অনুযায়ী ছাত্রদের চাইতে আলাদা। তারা নারীটিকে ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত বলে চিহ্নিত করে। পুরুষরা তাকে অশ্লীল মন্তব্য করে অপমান করে, তার পোশাক ধরে টানে, তার মুখে বারবার থাপ্পড় মারে এবং তার বুকে ঘুষি মারে। কয়েক দিন পর একই নারীর বিরুদ্ধে দ্বিতীয়বার এবং আরও গুরুতর আক্রমণ করা হয়। আক্রমণকারীরা তাকে ঘিরে ধরে, তার পোশাক ছিঁড়ে ফেলে, তার স্তন এবং গোপনাঙ্গ স্পর্শ করে এবং শেষ পর্যন্ত তাকে ধর্ষণ করে। রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে কোন হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয় নি।
আরো কিছু ঘটনায় দেখা গেছে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের নারী সমর্থকরা মৌখিক ও সামাজিক মাধ্যমে ধর্ষণের হুমকি পেয়েছে। উল্লিখিত কারণগুলির জন্য, ওএইচসিএইচআর মনে করে যে অনেক বেশি যৌন সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে যা ওএইচসিএইচআর নথিভুক্ত করতে পারেনি। বিক্ষোভের পরে, কিছু নারী যারা নেতৃত্বের অবস্থানে ছিলেন বা দৃশ্যমান প্রোফাইল ছিল তারা হুমকি বা প্রতিশোধের ভয় পেয়েছিলেন, যা তাদের পরিচয় গোপন করার প্রচেষ্টায় মুখ এবং চুল ঢেকে রাখতে বাধ্য করে।
শেখ হাসিনার পতনের পরের দিনগুলোতে, অনেক পুলিশ কর্মকর্তা কাজে উপস্থিত হতে ভয় পেতেন এবং অনেক স্থানে পুলিশ কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। এটি আরও প্রতিশোধমূলক সহিংসতা এবং সুযোগসন্ধানী অপরাধকে সহজতর করেছিল। যদিও প্রতিশোধমূলক সহিংসতার সবচেয়ে বেশি ঘটনা ৫ আগস্ট এবং তার পরের কয়েক দিনে ঘটেছে বলে মনে হয়, তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসার পর থেকেও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বিরুদ্ধে সহিংস হামলার খবর ওএইচসিএইচআর পেতে থাকে।
উদাহরনস্বরুপ ১৯৭৫ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড স্মরণ করতে আসা আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সমর্থকদের দ্বারা হামলার শিকার হয়, যদিও কিছু ছাত্র হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছিল। অনেক নারী আওয়ামী লীগ সমর্থকসহ কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছিল, এবং একজন আওয়ামী লীগ নেতা দুর্ঘটনার দু’সপ্তাহ পরে ১৫ আগস্টের হামলা কারণে মারা যান বলে জানানো হয়। বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, ১৪ আগস্ট স্থানীয় বিএনপি সমর্থকের নেতৃত্বে একটি দল একজন বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ সমর্থকের মালিকানাধীন একটি কারখানায় আক্রমণ করে এবং মালিকের কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য চাপ দিতে শ্রমিকদের উপর হামলা চালায়। দ্বিতীয় আক্রমণে কারখানাটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ দুটি আক্রমণের সময় কোন ফোন কলের জবাব দেয়নি, এবং যথাযথভাবে তদন্তও করেনি।
প্রতিশোধমূলক সহিংসতা, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার কোন পরিসংখ্যান ওএইচসিএইচআর নিজ থেকে দিতে না পারলেও আওয়ামী লীগের কাছ থেকে পাওয়া বিস্তারিত তথ্য অনুযায়ী ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে সংঘটিত হামলায় আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের ১৪৪ জন কর্মকর্তা ও সদস্য নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ২৩ জন, ৪ আগস্ট ৩৫ জন, ৫ আগস্ট ৬৮ জন এবং ৬ থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে আরও ১৮ জন নিহত হয়েছেন।
ওএইচসিএইচআর স্বাধীনভাবে এ তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
বাংলাদেশ পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়কালে ৪৪ জন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত এবং আরও ২,৩০৮ জন আহত হয়েছেন। ৩৯৪ বিডিআর (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) রিপোর্ট করেছে যে তিনজন সীমান্ত প্রহরী নিহত এবং ১২৯ জন আহত হয়েছেন। ৩৯৫ আনসার/ভিডিপি (গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী)-এর মধ্যে তিনজন নিহত এবং ৬৩ জন আহত হয়েছেন। ৩৯৬ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-এর দুইজন কর্মকর্তা নিহত এবং ৩০৭ জন আহত হয়েছেন।
সাংবাদিক এবং মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোও প্রতিশোধমূলক সহিংসতার লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল যেগুলোকে আওয়ামী লীগের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট এবং সাবেক সরকারের সমর্থক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। ৫ আগস্ট, শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করার অল্প সময়ের মধ্যেই, হিংস্র জনতা বেশ কয়েকটি টিভি স্টেশন আক্রমণ করে এবং পুড়িয়ে দেয় বা ভাঙচুর করে। এর মধ্যে একটি স্টেশন, একাত্তর টিভি, ইতিমধ্যেই ৩ আগস্ট লাঠি ও পাথর সজ্জিত একদল হিংস্র জনতার হামলার শিকার হয়েছিল, যারা অন্যান্য বিক্ষোভকারীদের চেয়ে আলাদা দেখাচ্ছিল। ৫ আগস্ট, কয়েকশ মানুষ স্টেশনটিতে আবার আক্রমণ করে এবং শেষ পর্যন্ত জোর করে ভেতরে প্রবেশ করে, এরপর স্টেশনটি লুটপাট করে এবং পুড়িয়ে দেয়। স্থানীয় লোকজন এবং ছাত্র বিক্ষোভকারীদের সমন্বয়ে গঠিত একদল উন্মত্ত জনতা সময় টিভিতে হামলা চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। এটিএন নিউজ টিভিতে আক্রমণকারীরা দুইজন সাংবাদিক এবং দুইজন অন্যান্য কর্মীকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করে, পাশাপাশি স্টেশনটি ভাঙচুর ও লুটপাট করে। ৫ আগস্ট অন্যান্য আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিল এটিএন বাংলা, ডিবিসি নিউজ, মাই টিভি, বিজয় টিভি এবং গাজী টিভি। ৭ আগস্ট ২০০ জনের একটি মব আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিএনপির স্লোগান দিতে দিতে মোহনা টিভি স্টেশনে জোর করে প্রবেশ করে। তারা একজন সিনিয়র সাংবাদিককে মারধর করে এবং স্টেশনটি ভাঙচুর বা পুড়িয়ে না দেওয়ার জন্য টাকা আদায় করে।
একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাংবাদিককে হত্যা এবং অন্যান্য সহিংস অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে বিবেচিত বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট সাংবাদিককে এই ধরনের মামলার ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই মামলাগুলোকে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। অক্টোবর মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানির মামলা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কমিটি গঠন করে। ২১ নভেম্বর একটি সাক্ষাত্কারে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন যে হত্যার মামলাগুলো “পুরানো আইন ও অনুশীলন অনুসরণ করে তাড়াহুড়ো করে করা হয়েছিল।” বাংলাদেশ সরকার জোর দিয়ে বলেছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো বর্তমান আইন অনুযায়ী ভুক্তভোগীদের দ্বারা দায়ের করা হয়েছে এবং মামলা দায়ের করার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সরকার উল্লেখ করেছে যে তদন্ত সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে এবং প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করা হবে।
অনেক সাংবাদিক এবং অন্যান্য সুশীল সমাজ পর্যবেক্ষক ৫ আগস্টের পর থেকে একটি বিপরীত ভীতির পরিবেশ অনুভব করেছেন, যেখানে সাংবাদিক এবং মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলো এমন কোন সংবাদ বা প্রতিবেদন প্রচার করতে সতর্ক করা হয়েছে যা আওয়ামী লীগের পক্ষে বা এর রাজনৈতিক বিরোধীদের বিপক্ষে বলে বিবেচিত হতে পারে।
ধর্মীয় ও আদিবাসী গোষ্ঠীর সদস্যদের বিরুদ্ধে নির্যাতন
বাংলাদেশ বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং গোষ্ঠীর আবাসস্থল, যারা ধর্মীয়, জাতিগত বা ভাষাগতভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলা ভাষাভাষী সুন্নি মুসলিম জনগোষ্ঠী থেকে স্বতন্ত্র। এই সম্প্রদায় এবং গোষ্ঠীগুলি কাঠামোগত এবং গভীরভাবে প্রোথিত সামাজিক বৈষম্যের শিকার হয়েছে, যা ঐতিহাসিক ঘটনাবলি এবং একটি সাংবিধানিক কাঠামোর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, যা বৈষম্য নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও দেশের বাঙালি এবং ইসলামিক পরিচয়কে জোর দেয়। বিশেষ করে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে, এই গোষ্ঠীগুলি ষড়যন্ত্রের লক্ষ্যবস্তু এবং ঘৃণাজনিত অপরাধের শিকার হয়েছে। তাদের প্রকৃত উদ্বেগগুলি প্রায়শই ভুল তথ্য, বিকৃতি এবং তাদের নিজস্ব দুর্দশার সাথে সম্পর্কিত নয় এমন বৃহত্তর জাতীয় এবং আঞ্চলিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের বিষয় হয়ে উঠেছে।
OHCHR স্বতন্ত্র ধর্মীয় ও আদিবাসী গোষ্ঠীর উপর হামলা সম্পর্কিত ৩৪টি সাক্ষাৎকার পরিচালনা করেছে, যার মধ্যে ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট ২০২৪ সালের মধ্যে আক্রান্ত ১২ জন ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়াও, OHCHR বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি সুশীল সমাজ, মানবাধিকার ও সংখ্যালঘু অধিকার রক্ষাকারী কর্মী এবং ধর্মীয় সংগঠনের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা এবং মিডিয়া প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎ করেছে। তবে, নির্দিষ্ট অঞ্চলে যৌন সহিংসতা সহ কিছু অভিযোগের বিস্তারিত তথ্য যাচাই করা হয়নি বা আরও তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। এই গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে সহিংসতার প্রকৃত মাত্রা নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জিং প্রমাণিত হয়েছে, বিশেষত কারণ প্রচারাভিযান এবং ধর্মীয় সংগঠনগুলির প্রতিবেদন প্রায়শই মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকদের প্রতিবেদনের সাথে বিভিন্ন মাত্রায় সাংঘর্ষিক হয়। এছাড়াও, OHCHR-কে জানানো কিছু অভিযোগ প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘটেছে এবং বর্তমান পরিস্থিতি ও OHCHR-এর কাছে উপলব্ধ সম্পদের স্বল্পতার পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যক্ষ বিবৃতি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
এরপরেও সাক্ষাৎকারদাতাদের প্রদত্ত তথ্য ধর্মীয়, জাতিগত এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতের উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতার একটি বিরাট চিত্র তুলে ধরে, যেখানে সম্পদ বিনষ্ট এবং ভিন্নধারার পরিচয় দমনের বিষয়গুলিকে ঘিরেই ঘটনাগুলি ঘনীভূত হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং থানা দখলের মত ঘটনার ফলে স্বতন্ত্র ধর্মীয় এবং আদিবাসী গোষ্ঠী, বিশেষত হিন্দু, চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাক্টস (CHT)-এর আদিবাসী গোষ্ঠী এবং আহমদিয়া মুসলমানদের নিরাপত্তা সংকট বাড়িয়েছে। এই ধরনের আক্রমনের পেছনে কারনগুলোর মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় ও জাতিগত বৈষম্য, আওয়ামী লীগের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ, জমিসংক্রান্ত ও ব্যক্তিগত কারণে স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ। OHCHR স্বীকার করে বেশ কয়েকটি ঘটনার মূল কারণ জানা ও বোঝার ক্ষেত্রে ভুল তথ্য ধোঁয়াশার সৃষ্টি করেছে এবং এই ঘটনাগুলির প্রতিবেদন তৈরিতে যাচাইকৃত উৎসের ওপর গুরুত্ব দেয়। উপরোক্ত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও ওএইচসিএইচআর পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে যা থেকে পরবর্তী ঘটনাগুলোর একটি ধারা বুঝতে পারা যায় এবং ঘটনাগুলোর বিস্তারিত তদন্তের প্রয়োজন নির্দেশ করে।
হিন্দুদের ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, মন্দিরে হামলা এবং উৎখাত
বিগত সরকারের পতনের পরপরই ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, দিনাজপুরের মত সংঘর্ষপ্রবণ এলাকা ছাড়াও সিলেট, খুলনা ও রংপুরে আক্রমনের তথ্য পাওয়া যায়। এধরনের হামলা মূলত এমন জায়গায় হয়েছে যেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের আওয়ামীলীগ সমর্থক বলে ধারণা করা হয়, কারণ ঐতিহাসিকভাবেই এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
OHCHR এই অঞ্চলগুলির কিছু হিন্দু ব্যবসায়ী এবং বাড়ির মালিকের সাক্ষাৎকার নিয়েছে, যারা জানিয়েছে তাদের ব্যবসা, বাড়ি, জমি এবং ধর্মীয় স্থানগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, পাশাপাশি হিন্দুদের মালিকানাধীন দোকানগুলিও লুট করা হয়েছে। হামলার ধরনের মধ্যে রয়েছে সম্পত্তি ধ্বংস, অগ্নিসংযোগ এবং শারীরিক হুমকি, এর সাথে যুক্ত ছিল পুলিশের তরফ থেকে ব্যবস্থা না নেওয়া, হামলাকারীদের কৌশলগতভাবে দায়মুক্তি দেওয়া এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। উদাহরণস্বরূপ, একজন সাক্ষাৎকারদাতা বলেছেন ঠাকুরগাঁওতে হিন্দুদের শ্মশান এবং মন্দিরগুলি ভাংচুর করা হয়েছে, এবং অন্যান্য সাক্ষীরা বর্ণনা করেছেন যে তাদের সম্পত্তিতে হামলার পর, সেই গ্রামগুলির প্রায় ৩,০০০ – ৪,০০০ হিন্দু, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ভয়ে, ভারতের সীমান্তের কাছে আশ্রয় নিয়েছিল, কিন্তু ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (BSF) তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি ব্যাপক নিরাপত্তাহীনতা এবং বিপুল আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির কথা জানিয়েছে, যেখানে অনেকেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, গবাদি পশু এবং পুরো ব্যবসা হারিয়েছে।
সাক্ষী ও ভুক্তভোগীদের বিবরণ ইঙ্গিত দেয় হামলাগুলি প্রাথমিকভাবে সাবেক সরকারের পতন উদযাপনকারী “বিজয় মিছিল”-এ জড়িত ব্যক্তিদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল। যদিও এই হামলাগুলির অপরাধীদের পরিচয় সর্বদা স্পষ্ট ছিল না, কিছু ঘটনার সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিয়েছেন যে আক্রমণকারীরা স্থানীয় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য সংগঠিত গোষ্ঠীর সমর্থক ছিল। তবে, এই রাজনৈতিক দলগুলি থেকে সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে হস্তক্ষেপও করা হয়েছিল। ৬ আগস্টের পরে, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ছাত্র সংগঠন এবং সামাজিক সংগঠনগুলির দ্বারা হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি এবং উপাসনালয় রক্ষার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের-এর নেতাদের পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সকলেই সহিংসতার নিন্দা করে প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়েছিলেন।
উন্মত্ত জনতা বিভিন্ন বিদ্যালয়ের হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রধান শিকক্ষককে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করানোর অনেকগুলো অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। এরকম একটি ঘটনার ভুক্তভোগীর সাক্ষ্য দেন যে উন্মত্ত জনতার মধ্যে স্থানীয় বিএনপি নেতারা উপস্থিতি ছিলেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে OHCHR-কে প্রদত্ত ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (NSI) তথ্যে ৫ থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে সংঘটিত ৩৭টি সহিংস হামলার বিবরণ রয়েছে। এই হামলাগুলি যশোর, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, নাটোর, দিনাজপুর, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, মেহেরপুর, বরগুনা, বরিশাল, রাজবাড়ী, ঠাকুরগাঁও, ফরিদপুর, পিরোজপুর এবং নেত্রকোণায় ঘটেছে। রিপোর্ট করা বেশিরভাগ হামলায় এক বা একাধিক বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, লুটপাট বা পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ছিল।
চারটি হামলা হয়েছিল মন্দিরে। এই ঘটনাগুলির কিছু ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হয়েছিল, যার মধ্যে একজন নারীর গলা কাটা এবং একজন পুরুষকে ধারালো অস্ত্র দ্বারা আহত করা হয়েছিল। চিহ্নিত ভুক্তভোগীদের মধ্যে নয়জন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। পাঁচটি হামলার ক্ষেত্রে, NSI রিপোর্টে আক্রমণকারীদের মধ্যে বিএনপি সমর্থকদের চিহ্নিত করা হয়েছে। জানুয়ারী ২০২৫ সালে, বাংলাদেশ পুলিশ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যা ৪-২০ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে সংঘটিত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ১,৭৬৯টি হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনা পরীক্ষা করেছে, যা বেসরকারী বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ দ্বারা রিপোর্ট করা হয়েছিল। পুলিশের অনুসন্ধান অনুযায়ী, এই হামলাগুলির মধ্যে ১,২৩৪টির রাজনৈতিক পটভূমি ছিল, ২০টি সাম্প্রদায়িক প্রকৃতির ছিল এবং ১৬১টি মিথ্যা দাবি ছিল।
পার্বত্য চট্টগ্রামে নির্যাতন-নিপীড়ন
সমতলের বাঙ্গালিদের, বেশিরভাগ সময় সেনা সহায়তায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানান্তর করার নীতি ও জমি নিয়ে বিরোধের কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠী কোণঠাসা হয়ে পড়েছে যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতের। এই জনগোষ্ঠীগুলো জাতিসংঘের মানবাধিকার কাঠামো অনুযায়ী আদিবাসী বলে বিবেচিত।
বাংলাদেশ সরকার এই জনগোষ্ঠিগুলোকে “আদিবাসী” বরং সাংবিধানিকভাবে জাতিগত সংখ্যালঘু হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত একটি শান্তি চুক্তি কখনই সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়নি, এবং সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ও অভ্যন্তরীণ সংঘাত অব্যাহত রয়েছে।
গণ্ডগোলের পরের দিনগুলিতে সাবেক সরকারের প্রতি আনুগত্যের অভিযোগে আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে হয়রানি করে সেটেলার বাঙ্গালিরা। কোটাবিরোধী আন্দোলনের কারণে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি থেকেই উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছিল, কিন্তু এর পেছনে গুজবও দায়ী ছিল। একটি গুজব ছড়ানো হয়েছিল যে স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন বাঙালি ছাত্রকে বাদ দিয়ে একজন আদিবাসী ছাত্রকে ভর্তি করানো হয়েছে, যদিও বাস্তবে দুইজনই ভর্তি হয়েছিল।
এই ধরনের প্রচারণার ফলে পার্বত্য অঞ্চলের বাঙালি গোষ্ঠীগুলির তরফ থেকে ঘৃণামূলক বক্তব্য এবং ভীতি প্রদর্শনের প্রচেষ্টা বৃদ্ধি পায়, কিছু গ্রুপ সামরিক বাহিনীর সাথেও যুক্ত বলে জানা গেছে। বিক্ষোভের সময় এবং ৫ আগস্টের পরেও, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচারণা ও গ্রাফিতির মূল লক্ষ্য ছিল স্থানীয় সমস্যা-সংকট যার মধ্যে সেনা প্রত্যাহারের দাবিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর প্রতিক্রিয়ায় সেনাবাহিনীর মনোযোগ ছিল গ্রাফিতি মুছে ফেলা এবং ভিন্নমত দমন করার জন্য এক্টিভিস্টদের আটক করা।
এই কর্মকান্ডের ফলে আদিবাসীরা সংগঠিত হতে ভয় পায়, কারণ সেনা নির্যাতন বৃদ্ধির ভয়ে অংশগ্রহণের মাত্রা কম ছিল। সাক্ষীর সাক্ষ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্ট, বান্দরবানে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছিল, যেখানে আদিবাসী এবং বাঙালি গোষ্ঠীগুলি বিক্ষোভের জন্য একত্রিত হয়েছিল। কিছু সশস্ত্র বাঙালি ট্রাকে করে এসে স্থানীয় সংসদ সদস্যের বাসভবনে হামলা চালায় এবং একজন আদিবাসী সম্প্রদায়ের একজন সদস্যকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করে।
মন্দির, মসজিদ, মাজার এবং অন্যান্য উপাসনালয়ে হামলা
বাংলাদেশে মন্দির এবং মাজার সহ উপাসনালয়ে হামলার একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এই রিপোর্টে বিবেচনাধীন সময়কালে, ৫ থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে, মিডিয়া এবং অন্যান্য স্থানীয় সংবাদের তথ্যমতে বিভিন্ন অঞ্চলে হিন্দু, আহমদিয়া, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সাথে যুক্ত উপাসনালয়ে হামলার খবর তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
ওএইচসিএইচআর এর কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, বুরাশারদুবি, হাতিবান্ধা, লালমনিরহাটে তিনটি মন্দিরে হামলা করা হয় এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, পাশাপাশি প্রায় ২০টি বাড়ি লুট করা হয়, যা ব্যাপক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রতিফলন।
মেহেরপুরে ইসকন-এর একটি মন্দিরে অগ্নিসংযোগের হামলাও হয়েছিল। ওএইচসিএইচআর-কে জানানো কিছু ঘটনা এই হামলাগুলির চারপাশের জটিলতাগুলি তুলে ধরেছে। উদাহরণস্বরূপ, নন্দীপাড়ায় কালী মন্দিরে ৭ আগস্ট হামলা করা হয়েছিল, কিন্তু তদন্তে এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে ক্ষয়ক্ষতির কারণ ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নয়, বরং জমির মালিকানা নিয়ে স্থানীয় বিরোধ।
ওএইচসিএইচআর ১৫ আগস্টের পরেও ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিগত সম্প্রদায়ের ওপর হামলা-নির্যাতনের অভিযোগ পেয়েছে এবং এগুলোকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত করার পরামর্শ দেয়।
বাংলাদেশ: জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বিক্ষোভ দমনে নৃশংসতা, পদ্ধতিগত নিপীড়নের তথ্য, এবং গুরুতর অধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচারের আহ্বান জানানো হয়েছে
জেনেভা ( ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) – জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের সাবেক সরকার এবং নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সহিংস উপাদানগুলোর পাশাপাশি, গত বছরের ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের সময় পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাসমূহের সাথে জড়িত ছিল। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য এবং অন্যান্য প্রমাণের ভিত্তিতে, প্রতিবেদনে একটি সরকারি নীতি উঠে এসেছে যা সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের এবং সমর্থকদের আক্রমণ ও সহিংসভাবে দমন করার নির্দেশ দেয়, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের মত উদ্বেগ উত্থাপনকারী এবং জরুরীভাবে আরও ফৌজদারি তদন্তের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে।
বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত মৃত্যুর তথ্যের ভিত্তিতে, প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে যে ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ১,৪০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে, এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন, এবং এদের অধিকাংশই বাংলাদেশের নিরাপত্তাবাহিনীসমূহের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তন্মধ্যে, প্রতিবেদনটি নির্দেশ করেছে যে নিহতদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ ছিল শিশু। বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে তাদের ৪৪ জন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনঃস্থাপনকারী উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত থেকে, কিন্তু এর পেছনে ছিল ধ্বংসাত্মক ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি এবং প্রশাসন থেকে সৃষ্ট বিস্তৃত ক্ষোভ, যা অর্থনৈতিক বৈষম্যের সৃষ্টি করেছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্ষমতায় থাকার জন্য সাবেক সরকার ক্রমাগত সহিংস পন্থা ব্যবহার করে এই বিক্ষোভগুলো দমনে পদ্ধতিগতভাবে চেষ্টা করেছিল।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, “এই নৃশংস প্রতিক্রিয়া ছিল সাবেক সরকারের একটি পরিকল্পিত এবং সমন্বিত কৌশল, যা জনতার বিরোধিতার মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিল।” “বিক্ষোভ দমন করার কৌশলের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে, তাদের সমন্বয় ও নির্দেশনায় শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ব্যাপক নির্বিচারে গ্রেফতার ও আটক এবং নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা যে সাক্ষ্য এবং প্রমাণ সংগ্রহ করেছি তা ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সহিংসতা এবং লক্ষ্যভিত্তিক হত্যাকাণ্ডের এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর এবং যা আন্তর্জাতিক অপরাধও গঠন করতে পারে। জাতীয় নিরাময় এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য দায়বদ্ধতা এবং ন্যায়বিচার অপরিহার্য।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় সেপ্টেম্বর মাসে একটি দল প্রেরণ করে, যার মধ্যে মানবাধিকার অনুসন্ধানকারী, একজন ফরেনসিক চিকিৎসক এবং একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, যাতে মরণঘাতী ঘটনাগুলোর বিষয়ে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তথ্য অনুসন্ধান পরিচালনা করা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার তদন্তের সাথে ব্যাপক সহযোগিতা প্রদর্শন করেছে, অনুরোধকৃত প্রবেশাধিকারের অনুমতি দিয়েছে এবং যথেষ্ট নথিপত্র সরবরাহ করেছে।
প্রাক্তন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, যারা সরাসরি বিক্ষোভ পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো বর্ণনা করেছেন যে কীভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য ক্ষেত্রের কর্মকর্তারা একাধিক বৃহৎ আকারের অভিযানের নির্দেশনা দেন ও তদারকি করেন, যেখানে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের গুলি করে হত্যা করেছিল বা নির্বিচারে গ্রেফতার ও নির্যাতন করেছিল।
এতে দেখা গেছে নিরাপত্তা বাহিনী পরিকল্পিতভাবে এবং অবৈধভাবে বিক্ষোভকারীদের হত্যা বা পঙ্গু করার সাথে জড়িত ছিল, এর মধ্যে এমন ঘটনাও ছিল যেখানে লোকদের বিন্দু-শূন্য পরিসীমা থেকে গুলি করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে, অন্যদের মধ্যে, আবু সাঈদের বিশেষ ঘটনাটি বিশদভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যার রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের সময় পুলিশকে উদ্দেশ্য করে দু’বাহু ছড়িয়ে “আমাকে গুলি করুন” বলে চিৎকার করার সময়ের দৃশ্য ধারণ করা হয়েছিল। ভিডিও ফুটেজ, স্থিরচিত্র এবং ভূ-অবস্থান প্রযুক্তি ব্যবহার করে, তদন্তকারীরা তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছিল, তা সাক্ষ্য প্রমাণের জন্য পুনঃনির্মাণ করেন। একটি ফরেনসিক বিশ্লেষণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, তার আঘাতগুলো প্রায় ১৪ মিটার দূরত্ব থেকে ধাতব গুলি বোঝাই শটগান দিয়ে কমপক্ষে দুবার গুলিবিদ্ধ হবার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আবু সাঈদ, পুলিশের ইচ্ছাকৃত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে।
প্রথম দিকের বিক্ষোভের সম্মুখসারীতে থাকার কারণে, নারীবৃন্দ ও সহ নেতৃত্ব প্রদানকারীরা, নির্বিচারে গ্রেফতার, নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার এবং নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের আক্রমণের শিকার হন। প্রতিবেদনে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার বিষয়টি নথিভুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে শারীরিক আক্রমণ এবং ধর্ষণের হুমকি রয়েছে, এর লক্ষ্য ছিল নারীদের বিক্ষোভে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা।
প্রতিবেদনটি এও খুঁজে পেয়েছে যে পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী শিশুদের হত্যা ও পঙ্গু করেছে, এবং তাদেরকে নির্বিচারে গ্রেফতার, অমানবিক অবস্থায় আটক এবং অত্যাচার করেছে। নথিভুক্ত মৃত্যুর ঘটনাগুলোর একটি এমন ছিল, যেখানে ধানমন্ডিতে একজন ১২ বছর বয়সী বিক্ষোভকারী প্রায় ২০০টি ধাতব গুলি ছোঁড়ার কারণে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের কারনে মারা যান। এছাড়াও, নিহতদের মধ্যে ছিল খুব ছোট শিশু যাদেরকে তাদের পিতামাতারা বিক্ষোভে নিয়ে গিয়েছিলেন অথবা যারা পথচারী হিসেবে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। নারায়ণগঞ্জে এমন একটি ঘটনা রয়েছে, যেখানে একজন ছয় বছর বয়সী বালিকাকে তার বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে একটি বিক্ষোভের সহিংস সংঘর্ষ প্রত্যক্ষ করার সময় মাথায় গুলি করা হয়েছিল।
৫ আগস্ট – বিক্ষোভের শেষ এবং সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিনের একটিতে – আজমপুরে পুলিশের গুলিতে আহত ১২ বছর বয়সী একটি ছেলে স্মরণ করে যে, পুলিশ “সব জায়গায় বৃষ্টির মতো গুলি করছিল”। সে অন্তত এক ডজন মৃতদেহ দেখতে পেয়েছিল বলে বর্ণনা করেছে।
প্রতিবেদনটি এমন ঘটনাগুলোও নথিভুক্ত করেছে, যেখানে নিরাপত্তা বাহিনী আহত বিক্ষোভকারীদের জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদান প্রত্যাখ্যান বা বাধাগ্রস্ত করেছে, রোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং হাসপাতালগুলো থেকে তাদের আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করেছে, চিকিৎসা কার্যে নিয়োজিত কর্মীদের ভয় দেখিয়েছে এবং হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ করেছে, যা পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করে যে, আইনানুগত প্রক্রিয়া ছাড়া বিক্ষোভকারীদের শনাক্ত করার এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সহিংসতার মাত্রা কোন পর্যায়ে ছিল তা গোপন করার চেষ্টা করা হচ্ছিল।
প্রতিবেদনটি, যখন সাবেক সরকার দেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করেছিল তখন সংঘটিত প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড এবং আওয়ামী লীগ কর্মী ও সমর্থকদের, পুলিশ এবং মিডিয়াকে লক্ষ্য করে করা অন্যান্য গুরুতর প্রতিশোধমূলক সহিংসতার ঘটনাগুলোও নথিভুক্ত করেছে । হিন্দু, আহমদিয়া মুসলিম এবং চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোর আদিবাসী জনগণও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে। যদিও বিভিন্ন ধর্মীয় ও আদিবাসী গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণের সাথে সম্পর্কিত প্রায় ১০০ জন গ্রেফতার হয়েছে বলে জানানো হয়েছে, তবে অনেক প্রতিশোধমূলক সহিংসতা এবং এসব গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণের পরেও অপরাধীরা এখনও দায়মুক্তি উপভোগ করছে, প্রতিবেদনটি এমনটাই জানায়।
প্রতিবেদনটি কিছু বিস্তারিত পরিসরে সুপারিশ প্রদান করেছে, যেমন নিরাপত্তা ও বিচার খাতের সংস্কার, নাগরিক ও রাজনৈতিক ভিন্নমতকে দমিয়ে রাখার জন্য প্রণীত দমনমূলক আইন ও প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করা এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক শাসন ব্যবস্থায় বৃহত্তর পরিবর্তন বাস্তবায়ন করা ।
হাইকমিশনার বলেন, “বাংলাদেশের জন্য এগিয়ে যাওয়ার সর্বোত্তম পথ হল একটি বিস্তারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই সময়ে সংঘটিত ভয়াবহ অন্যায়গুলোর সত্য উন্মোচন, নিরাময় এবং জবাবদিহিতার মুখোমুখি হওয়া, এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতার প্রতিকার করা এবং এর পুনরাবৃত্তি যাতে আর কখনও না ঘটতে পারে তা নিশ্চিত করা।” “আমার কার্যালয় এই গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় জবাবদিহিতা এবং সংস্কার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।”