বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত হঠাৎ করেই কলেজ বন্ধ ঘোষনা দিল। কর্তৃপক্ষ শুধু ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত হলো না, তারা ১২ ঘন্টার মধ্যে হোস্টেলও ত্যাগ করার ঘোষণা দিল। অতএব যাঁদের আত্মীয়-স্বজন আছে তারা যার যার মত চলে গেলো। কিন্তু যাঁদের কেউ নাই তাঁরাই পড়লো বিপদে। তবে কেউ কেউ বান্ধবীদের পিছন ছাড়লো না তারা বিয়ারিং হয়ে তাদের পিছু নিলো, আর বাকী সবাই দেশের বাড়িতে রওয়ানা দিলো। দিনশেষে দেখা গেল নির্দিষ্ট সময়ের আগেই হলগুলি ফাঁকা হয়ে গেছে শুধু মাত্র একটি নারী বারান্দায় দাড়িয়ে কারো জন্য অপেক্ষায় আছে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো, আঁশেপাসের হল ও বাড়িগুলিতে বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বলতে আরম্ভ করলো। দারোয়ান এসে জানতে চাইলো, আপা আপনি যাবেন না? আকাশপানে চেয়ে নিরাশ হয়ে বল্লো, না চাচা, আমার এখানে কেউ নাই যাঁদের বাসায় আমি উঠবো। দারোয়ান রহিম চাচার খুব মায়া হলো তাই সে একটু ভেবে নিয়ে বল্লো, যদি আপা আপনি কিছু মনে না করেন, তাহলে আমি আপনাকে আমার বোনের বাসার ঠিকানা দিতে পারি যদি আপনি মনে করেন। বিউটির এ ছাড়া তো আর কোন পছন্দ (চয়েজ) নাই অগ্যতা সে মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি প্রকাশ করলো।
রহিম চাচা একটা রিক্সা ডেকে দিয়ে রিক্সাওয়ালাকে বলে দিল কোথায় যাবে। নির্ধারিত স্হানে বিউটি নেমে অতি সংকোচে দরজায় টোকা দিল। দরজা খুলতেই অপরিচিত একজনকে দেখে রহিম চাচার বোন জানতে চাইলেন তিনি কি হোস্টেল থেকে এসেছেন? বিউটি মাথা ঝাকালো তারপর দুজন দুজনের পরিচয় পর্ব সেরে নিলেন। আজ বিউটির আপাততঃ থাকার জায়গা ঠিক হওয়ায় তার সারাদিনের দুঃশ্চিন্তা ও ক্লান্তি দূর হলো।
পরে বাথরুমে গিয়ে ঠান্ডা পানিতে অনেকক্ষণ ধরে গোসল করলো। তার মনে হলো এরকম শান্তি আর কোনদিন পেয়েছেকিনা তা এই মূর্হতে তার জানা নাই। ভীষণ একটা ভাল লাগার রেশ নিয়ে রাতের খাবার নিয়ে এলো রহিম চাচার বোন।
ডিনারে খাবারের আইটেম ছিল খুবই সাধারণ। করলা ভাজি, কাঁচা কলার ভর্তা, পুঁটি মাছের সাথে পুঁই শাক, এই ছিল সে রাতের খাবার মেন্যু। খুব ভাল করে খেয়ে অনেকক্ষন গল্প করলো। এমন সময় দুলাভাই (রহিম চাচার ভগ্নিপতি) কাজ শেষে বাড়ি ফিরলেন। আমাদের পরিচয় হতেই দুলাভাই খোস মেজাজে বল্লেন, বেশ ভালই হলো একটা শালী তো পাওয়া গেলো।
প্রথম রাত ভাল-মন্দ মিশিয়ে কেটে গেলো। সব থেকে বেশী ভাল লেগেছে বিউটিকে এ বাসার সবাই আপন করে নিয়েছে দেখে। গুনে গুনে ১৬ দিনের মাথায় আবার সব কিছু নর্মাল হয়ে গেলো তাই আবার সবাই হোস্টেলে ফিরে গেলো। কিন্তু সেদিনের কথা মনে হলে এখনো তার গায়ে কাটা দেয়।
বিউটি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় খুব ভাল ফল করে রাজধানীতে পড়তে এসেছিল। তার কোন নিকট আত্মীয় বসবাস কিংবা চাকুরী সুত্রে ঢাকায় নেই। সে জন্য হঠাৎ হল বন্ধ হলে তারপক্ষে দেশের বাড়িতে যাওয়া সম্ভাব হয় না। এ ছাড়া বাড়তি কোন টাকা খরচ করতেও তার ইচ্ছা করেনা কারণ তারা খুব একটা সচ্ছল পরিবারের সদস্য নয়, তারা জানে তাদের বাবা হাড় ভাঙা প্ররিশ্রম করে কোন রকম সংসার চালায়। তাই একান্ত প্রয়োজন না হলে বাড়িতে টাকার জন্য হাত পাততে চায় না।