পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায় অবস্থিত বাঙ্গালীদের দ্বারা পরিচালিত ইষ্টলন্ডন মস্ক ট্রাষ্টকে আনুষ্টানিক সতর্কতা জারি করেছে ব্রিটিশ চ্যারিটি কমিশন ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস। ১০ এপ্রিল ট্রাষ্ট বরাবরে চ্যারিটি এক্ট ২০১১ এর ৭৫-এ ধারা মতে ট্রাষ্টি বোর্ড ও পরিচালনা পর্ষদকে তিনটি কারণ উল্লেখ করে নোটিশ পাঠিয়েছে ব্রিটিশ চ্যারিটি কমিশন। এতে বলা হয়েছে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানের সম্পদ দায়িত্বের সাথে পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে। যার কারণে মসজিদের এক মিলিয়ন পাউন্ড তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ট্রাষ্টিগণ এই সম্পদ আবার পুনরুদ্ধার করতে পারবেন তার সম্ভাবনাও কম। দুই নম্বরে বলা হয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা হয়েছে সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষ সমূহের ব্যাপারে যথাযথ খোঁজখবর নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়াও পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের ইস্ট লন্ডন মসজিদ থেকে তিনটি বিষয় নিশ্চিত হতে চায় কমিশন।
তা হলো চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সম্পদ রক্ষায় নিয়ন্ত্রক এবং তদারকি নিশ্চিত করা। বিনিয়োগ করা অর্থ পুনরুদ্ধারের কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সাবেক পরিচালকদের বিরুদ্ধে বাবস্থা নেয়া যায় কিনা। এছাড়াও চ্যারিটির পরিচালনার নিয়ম-কানুন স্বাধীনভাবে রিভিও করে কমিশনকে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে।

উপরোক্ত বিষয়গুলো ছয় মাসের মধ্যে দিতে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাবে চ্যারিটি কমিশন। মসজিদ কতৃপক্ষ বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেই কমিশনের এই সতর্কতা চিঠির উত্তর দিবে বলে জানা গেছে। যদি কর্তৃপক্ষ নোটিশের যথাযত জবাব দিতে ব্যর্থ হয়। চ্যারিটি কমিশন মসজিদের দায়িত্ব নেবার এখতিয়ার রাখে।
ইস্ট লন্ডন মসজিদের ২০২৩ সালে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে এতে দেখা যায় মসজিদ করতিপক্ষ – NHS সাপ্লাইয়ার matz মেডিকেল নামক একটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছিল। তবে যে প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছিলো সেটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (বন্ধ প্রক্রিয়া) যাওয়ায় কারণে প্রতারণার শিকার হতে পারে মসজিদ কতৃপক্ষ।
২০২৪ সালে মসজিদ কমিটি কর্তৃক এক সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্ন-উত্তরে মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ এর বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।
এখানে উল্লেখ্য যে এই মসজিদটি একশ বছর পূর্বে ব্রিটিশ বাংলাদেশী ও অন্যান্য মুসলিম কমিউনিটির পৃষ্টপোষকাতায় গড়ে উঠলেও ১৯৭২ সালের পর থেকে মসজিদটি চলে যায় বাংলাদেশের একটি বিশেষ ইসলামিক রাজনৈতিক দলের অনুসারীদের দখলে। এর পর থেকে এরাই মসজিদটি পরিচালনা করে আসছেন। প্রতিদিন মসজিদের ইনকাম কম হলেও কয়েক হাজার পাউউন্ড।
১৯৯৫ সালে মসজিদে মুসল্লিদের স্থান সংকুলানের অজুহাতে মসজিদের পাশে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের কার পার্কের স্থানটি মসজিদ কর্তৃপক্ষকে ছেড়ে দেওয়ার দাবী উঠে মসজিদের পক্ষ থেকে। এনিয়ে ব্রিটিশ বাংলাদেশীরা কয়েক বার টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল অফিসের সামনে কয়েক দফা মানব বন্ধন করেন ও কাউন্সিল কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জনোনো হয় কার পার্কের জায়গাটি মসদিকে দিয়ে দেওয়ার জন্য। এই দাবির স্বপক্ষে তখনকার সময়ে লন্ডন থেকে প্রকাশিত বাংলা পত্রপত্রিকায় বেশ লেখালেখি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ সরকারি এই জায়গাটি মসদিকে দিয়ে দেয়। এখানে নির্মান করা হয় লন্ডন মুসলিম সেন্টার মরিয়ম সেন্টার ও অভ্যন্তরে বিজনেস কমপ্লেক্স। এই বিজেনেস কমপ্লেক্স-এ যারা বরাদ্ধ পেয়েছেন কসলেই বাংলাদেশের একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের অনুসারী।
এছাড়া প্রতিবছর ভিন্ন ভিন্ন অজুহাতে মসজিদ সম্প্রসারণ-কর্জে হাসানা ইত্যাদির নামে প্রচুর পরিমান ফান্ড রেইজ করা হয়। প্রতিবছর রমজান মাসে ২/৩টি লাইভ আ্যাপিল করা হয় বাংলা টেলিভিশন গুলোতে এসব আ্যাপিলে সর্বোচ্চ পাঁচ‘শ হাজার পাউন্ড কালেকশনেরও নজির রয়েছে।
মসজিদের পাশে ছিল ইহুদী ধর্মালম্বীদের প্রার্থনার বড় একটি “সিনোগাগ” ইহুদীরা তাদের প্রার্থনার বিল্ডিংটি বাজার মূল্যের চেয়ে কমে মসজিদ কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রি করে দিলে মসজিদটি সম্প্রসারণ করা হয়। বর্তমানে এই মসজিদে দশহাজার মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন। এছাড়া এই মসজিদকে কেন্দ্র করে কয়েকটি সামাজিক এবং চ্যারিটি সংগঠন পরিচালিত হয় এই লন্ডন মুসলিম সেন্টারকে কেন্দ্র করে।
যারা নিয়মিত মসজিদে দান করেন তাদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন মসজিদের দানকৃত অর্থ কেন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বিনিযোগ করা হয়। ইসলামকি এটি এলাও করে এমন প্রশ্ন অনেকের?