সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বাজারে ডলারের মূল্য রেকর্ড করেছে। এমন সংকটের মধ্যেই ব্যাংকারসহ অনেকে জড়িয়ে পড়েছেন ডলার কারসাজিতে। অনেকে আবার প্রয়োজন ছাড়াই ডলার কিনে জমা করছেন, যাতে বাজারে কৃত্রিম সংকট আরও প্রকট হয়ে উঠছে। এমন অবস্থায় সংকট কাটিয়ে উঠতে রিজার্ভ থেকে ডলারের যোগান দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত সপ্তাহের শুরু থেকে খোলাবাজারে তেজিভাব ছিল ডলারের। দাম বাড়তে বাড়তে ডলারের দাম ১১৮ টাকা পর্যন্ত ওঠে। এতে নড়েচড়ে বসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার। অভিযানে নামে বাংলাদেশ ব্যাংক। তৎপরতা বাড়িয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। একই সঙ্গে ক্রেতাও কমে আসে বাজারে। এতে দুদিনের ব্যবধানে খোলাবাজারে ডলারের দাম ১১২ টাকায় নেমেছে।
রোববার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর পল্টন, ফকিরাপুল ও মতিঝিল এলাকায় খোলাবাজারে ১১২-১১৪ টাকা দরে ডলার বিক্রি হয়েছে। তবে পাসপোর্ট ও ভিসার কাগজপত্র দেখিয়ে এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে ১১০-১১২ টাকায় কেনা যাচ্ছে ডলার।
পল্টন এলাকায় খুচরামূল্যে ডলার বিক্রেতা বলেন, ‘এখানে ডলার বিক্রি নেই তেমন। ক্রেতা সংকট। দামও কমে গেছে অনেক। ডলারের সরবরাহ বেশি। তবে ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ডের সংকট রয়েছে এখনো।’
একই কথা জানান ফকিরাপুলের ব্যবসায়ীরাও। তারা বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর সামনে কড়া নজরদারি করছেন। পুলিশ-র্যাবও ডলার কেনাবেচায় জড়িতদের ওপর কঠোর নজর রাখছে। এ কারণে খুচরা বিক্রেতারা আগের মতো ডলার বিক্রি করতে পারছেন না।’
আনাস বলেন, ‘এখন বাজারে ডলারের সরবরাহ আগের চেয়ে একটু বেড়েছে। দাম কম হওয়ার এটাও একটা কারণ।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘অবৈধভাবে ডলার বিক্রি বন্ধে অভিযান জোরদার করেছি আমরা। এক্সচেঞ্জ হাউজে আমাদের টিম নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। কোনো ধরনের অনিয়ম পেলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এসব কারণে সংকট কিছুটা নিয়ন্ত্রণ এসেছে। এ অভিযান অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
জানা গেছে, খোলাবাজারে ডলারের অস্বাভাবিক দাম ওঠায় অনেক গ্রাহকের অনাগ্রহ তৈরি হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভিযানের পরও খোলাবাজারের অস্থিরতা কমেনি। এ কারণে বিদেশগামীদের ডলার যোগাড়ে বেগ পেতে হচ্ছিল।
তবে মানি এক্সচেঞ্জগুলো দাবি করছিল, বাজারে যে হারে ডলারের চাহিদা বাড়ছে, ওই হারে সরবরাহ নেই। যার প্রভাবে ডলারের দাম বাড়ছে। এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় মানি এএক্সচেঞ্জগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে দেশের সব ব্যাংকের শাখায় শাখায় ডলার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে, রোববার (১৪ আগস্ট) বিকেলে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধানদের নিয়ে বৈঠকে বসেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এ বৈঠকে ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র।