প্রথম বাংলাদেশী ফুটবলার হিসেবে দক্ষিণ আমেরিকান পেশাদার ফুটবল লিগে খেলার নজির স্থাপন করেছেন জার্মান প্রবাসী রিয়াসাত ইসলাম খাতন।লাতিন আমেরিকায় অবস্থিত ভেনেজুয়েলার পেশাদার ফুটবলের দ্বিতীয় স্তর “লিগা ফিউটভি টু”-এর দল দেপোর্তিভো রায়ো জুলিয়ানোর হয়ে গত ৮ আগস্ট প্রথম মাঠে নেমে ইতিহাস গড়েন এই মিডফিল্ডার।
আলবেনিয়ান ক্লাব কেএফ সুকুমবিনি থেকে ভেনেজুয়েলার এই ক্লাবটিতে যোগ দেন রিয়াসাত।এক মাস অনুশীলনের পর লিগের সপ্তদশ রাউন্ডে ভেনেজুয়েলার লিগে অভিষেক ঘটে রিয়াসাতের।প্রতিপক্ষ ছিল টাইটান্স এফসি।দেপোর্তিভোর কলম্বিয়ান কোচ এ্যালেক্স গার্সিয়া কিংস বদলী খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামার সুযোগ করে দেন রিয়াসাতকে। ম্যাচের তখন ৭৫ মিনিট চলে।
১৭ ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট লিগের পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে অবস্থান করছে রিয়াসাতের ক্লাব।তাদের চেয়ে ২ পয়েন্ট বেশি নিয়ে শীর্ষে আছে টাইটান্স।
ক্লাবের সঙ্গে আপাতত এক বছরের চুক্তি করেছেন রিয়াসাত।ভাল খেললে চুক্তির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ আছে।
লাতিন আমেরিকার পেশাদার ফুটবল লিগে খেলতে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত রিয়াসাত জনকণ্ঠকে বলেন, ‘প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলে খেলতে পারাটা আমার জন্য অনেক সম্মানের।আমি বরাবরই দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলের অনুরাগী।আশাকরি একদিন আমি ছোটবেলার স্বপ্নপূরণের সুযোগ পাব।এটি আমাকে সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার আনন্দ দিয়েছে।একজন পেশাদার ফুটবলার হিসেবে গত কয়েক বছরের প্রচেষ্টাই আমার আশা পূরণ ও ইতিহাস গড়ার মতো বিশেষ কিছু অর্জন সম্ভব করেছে।ইনশাল্লাহ সামনে আরও ভালো খবর আসবে।
’১৯৮৯ সালে ঢাকায় জন্ম নেয়া রিয়াসাত পাঁচ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে জার্মানিতে পাড়ি জমান।সেখানে স্কুল টিমের হয়ে ফুটবলে “পায়েখড়ি” তার।তারপর স্থানীয় যুব ক্লাব ফ্রেইবুর্গার এফসিতে যোগ দেন তিনি।১৯৯৬-২০০৪ পর্যন্ত এই ক্লাবে খেলেন তিনি।১৪ বছর বয়সে বুন্সেলিগার যুব দল এফসি ফ্রেইবুর্গারে যোগ দেন (২০০৪-২০০৮)। এরপর সিনিয়র পর্যায়ে ২০০৮-২০২১ পর্যন্ত ১৫টি ক্লাবে খেলেন।
তবে ২০১৮-১৯ মৌসুমে ওয়েলস প্রিমিয়ার লিগের লানেল্লি টাউন এফসির হয়ে খেলা ছিল তার তার ক্যারিয়ারের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত।
হামজা চৌধুরীর পর ইউরোপের শীর্ষ পর্যায়ের লিগে খেলা দ্বিতীয় বাংলাদেশী ফুটবলার হচ্ছেন রিয়াসাত।এরপর চোটের কারণে অনেকদিন ফুটবলের বাইরে থাকতে হয় রিয়াসাতকে।তারপর পুরোপরি ফিট হয়ে এ বছরই আলবেনিয়ান ক্লাবে যোগ দিয়েছিলেন।সেখানে থেকে গত জুলাইয়ে চলে যান ভেনেজুয়েলায়।
রিয়াসাতের লক্ষ্য ছিল জন্মভূমি বাংলাদেশের জার্সিতে খেলা।এ লক্ষ্যে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অনুশীলন ক্যাম্পে যোগও দিয়েছিলেন।কিন্তু সেবার চোটের কারণে মূল স্কোয়াডে সুযোগ না পেলেও ২০১৫ সালে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে একটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে বাংলাদেশ দলের মূল স্কোয়াডে জায়গা করে নিয়েছিলেন ডাচ্ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফের অধীনে। কিন্তু সেবারও অভিষেকটা হয়নি!
প্রতিভার কারণে বাংলাদেশ দলে ডাক পেলেও কেন তিনি লাল-সবুজের জার্সিতে খেলতে পারেননি,তা আজও রহস্যই হয়ে আছে।
তবে প্রথম বাংলাদেশী ফুটবলার হিসেবে দক্ষিণ আমেরিকার পেশাদার লিগে খেলার সুযোগ পেয়ে রিয়াসাত যে ইতিহাস গড়েছেন,তাতে কোন সন্দেহ নেই।