রাজধানীসহ সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলার ১৭ বছর পূর্তি হলেও সাক্ষী হাজির করতে না পারাসহ অন্যান্য জটিলতায় বিচারকাজ শেষ হয়নি আজও।হামলার ঘটনায় এখনো প্রায় ৪১টি মামলা দেশের বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন। ঢাকার ১৭টি মামলার মধ্যে ১৩টির রায় ঘোষণা করা হলেও এখনো বিচারাধীন ৪টি। এই ৪টির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। ২০০৫ সালের এই দিনে মুন্সীগঞ্জ ছাড়া দেশের ৬৩ জেলার ৪৩৪ স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা। বিচারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাক্ষী হাজির করতে না পারা এবং আসামিদের নাম-পরিচয়সহ নানা তথ্য-প্রমাণের অভাবে এতদিনেও বিচারকাজ শেষ করা যায়নি। এছাড়া করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ থাকায় মামলার কার্যক্রম পুরোপুরি থেমে ছিল। বর্তমানে পুরোপুরি আদালতের কার্যক্রম চলায় সাক্ষীদের হাজিরসহ অন্যান্য জটিলতা নিরসন করে দ্রুত সময়ে বিচারকাজ শেষ করা হবে বলে জানানো হয়।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ ৩৩ জন নিহত ও চার শতাধিক মানুষ আহত হন। প্রায় একই সময়ে দেশব্যাপী বোমা হামলার মাধ্যমে নিজেদের শক্তি-সামর্থ্যেরও জানান দেয় জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। এরপর ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজানে নৃশংস হামলা চালিয়ে পুনরায় নিজেদের শক্তির জানান দেয় তারা। পরে ছোট-বড় আরো কয়েকটি হামলা চালালেও সেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। বর্তমানে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ ও পেজ খুলে তৎপরতা চালাচ্ছে নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ঢাকার আদালতে ১৭টি মামলা ছিল। বর্তমানে চারটি মামলা বিচারাধীন আছে। সেগুলোও সাক্ষ্য নেয়া পর্যায়ে রয়েছে। মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, সাক্ষীদের অনুপস্থিতিই মূল কারণ। অনেক ক্ষেত্রে সাক্ষীদের পাওয়া যায়নি। সাক্ষীদের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। পুলিশও চেষ্টা করছে সাক্ষীদের খুঁজে বের করতে। চাঞ্চল্যকর এসব মামলা চাইলেই তো শেষ করে দেয়া যায় না। তারপরও সাক্ষ্য যা হয়েছে বা আরো কয়েকটা সাক্ষ্য নেয়া শেষ করে এ বছরের মধ্যে বিচারকাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।
এদিকে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন মামলাগুলোর বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে জানা গেছে, হাইকোর্টে জঙ্গিদের করা বেশ কিছু ডেথ রেফারেন্স মামলার শুনানি হয়েছে। অনেক আসামির জামিনের আবেদন এবং বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল হাইকোর্টে বিচারাধীন। তবে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় সচেষ্ট রয়েছে। এছাড়া জঙ্গি ও নাশকতাসংক্রান্ত মামলাগুলো রাষ্ট্রপক্ষ সব সময় মনিটর করে থাকে।