ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাপী মার্কিন ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। এই অবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসার চেষ্টা করছে বহু দেশ। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কীভাবে আমদানি করার উপায় খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানিতে তিন চাপের কথা বলছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের রপ্তানি নেই বলেই চলে। অ্যামেরিকায় আমাদের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়। রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি করলে অ্যামেরিকা ব্ল্যাকমেল করতে পারে। আন্তর্জাতিক চাপ আসতে পারে বলেও তারা জানান।
অর্থনীতিবিদ এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, আমাদের সঙ্গে রাশিয়ার পণ্য রপ্তানি তেমন একটা নেই। যদি পণ্য রপ্তানি থাকত তাহলে আমাদের পণ্য দিয়ে তাদের পণ্য নিয়ে আসলে লাভ হতো। এর পরও যদি রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল নিয়ে আসতে হয় তাহলে আমাদের দেখতে হবে, তাদের দেশে জ্বালানির দাম আর অন্য দেশের জ্বালানির দামে তফাত কেমন। যদি তেমন পার্থক্য নাই তাহলে আমাদের তেমন লাভ হবে না। যদি জ্বালানির দাম অন্য দেশের তুলনায় কম পাওয়া যায় তাহলে ভালো। কারণ পুরো অর্থই আমাদের নিজেদের থেকে পরিশোধ করতে হবে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি আন্তর্জাতিক ভূ-অর্থনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে রুবেলের মাধ্যমে পণ্য ক্রয় করতে গিয়ে আমরা অ্যামেরিকার কোনো রোসানলে পরিকিনা তা নিয়ে ভালোভাবে ভাবতে হবে। কারণ আমরা ইউরোপীয় দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানি করে থাকি। তারা যদি রাশিয়ার সঙ্গে রুবেল মিনিময়ের কারণে কোন নিষেধাজ্ঞা দেয় তাহলে আমাদের পক্ষে সেটা বহন করা কঠিন হবে। তারা আমাদেরকে ব্ল্যাকমেল করতে পারে। সেই বিষয়টিও আমাদের ভাবতে হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী সংকট তৈরি হয়েছে। আগে থেকে এক দেশে থেকে আর এক দেশ পণ্য আমদানিতে মার্কিন ডলার বিনিময় করত। তবে এবারে বিশ্বব্যাপী মার্কিন ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। এখন সেটা থেকে বিরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমাদের ভালো করে ভাবতে হবে। আমরা যে মুদ্রায় আমদানি করতে যাচ্ছি তার ভবিষৎ কেমন হবে। যদিও ইতিমধ্যে এটা নিয়ে আলোচনা চলছে যে ভারতীয়, চীনা, রাশিয়া না তুরস্কের মুদ্রায় আদান প্রদান করা হবে। তবে এখানে একটি আন্তর্জাতিক চাপ আছে অ্যামেরিকা চায় না ডলারের বাহিরে অন্য কোনো মুদ্রার বাজার তৈরি হোক। আবার ভারত চায় না চীনের মুদ্রায় বিনিয়ম হোক।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেন যে ভারত যদি রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারব না? রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানি করা গেলে বিনিময় মুদ্রা কী হবে? সে বিষয়েও একটি সমাধান খুঁজে বের করার। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এসব কথা জানান।
অন্যদিকে রাশিয়া সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) এর অন্তর্গত দেশগুলোকে ডলার ও ইউরোর পরিবর্তে রুবলে বাণিজ্যিক লেনদেনের প্রস্তাব দিয়েছে।